পবিত্র তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত আদায় করাই খাছ সুন্নত মুবারক, এর কম আদায় করা চরম গোমরাহীর লক্ষণ (২)
, ১৭ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনাকারী রাবীর জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِه.
অর্থাৎ পবিত্র রমাদ্বান শরীফে এবং গায়রে রমাদ্বান শরীফে অর্থাৎ বছরের ১২ মাস রাতের নামায ছিলো মোট ১১ রাকায়াত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পবিত্র তারাবীহ্ নামায পড়তেন আর অন্য মাসে কি পড়তেন?
আসলে বাতিল ফিরক্বার লোকগুলো মূর্খ হওয়ার কারণে এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা তারাবীহ্র দলীল দিয়ে থাকে। এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা দ্বারা মূলত তারাবীহ্কে বুঝানো হয়নি। এটা দ্বারা তাহাজ্জুদকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তারাবীহ্ নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসেই পড়া হয়। আর তাহাজ্জুদ নামায পবিত্র রমাদ্বান শরীফ এবং অন্যান্য মাসে অর্থাৎ সবসময়ই পড়া হয়।
কাজেই পবিত্র তারাবীহ্ নামায ২০ রাকায়াত-ই পড়তে হবে। ৮ রাকায়াত নয়।
আমরা জানি যে, পবিত্র তারাবীহ্ নামায ২০ রাকায়াত এবং তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীগণ এবং হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আমল মুবারক দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমাণিত যে, পবিত্র তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত।
কিন্তু ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে এক লা-মাযহাবী আট রাকায়াত তারাবীহ্র ফতওয়া দেয়। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে আরেক প্রতারক আট রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নত হওয়ার মিথ্যা দাবি করে।
কিন্তু মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দিয়ে তৎকালীন হক্কানী উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উক্ত আট রাকায়াত তারাবীহ্র ফতওয়াকে ভুল হিসেবে প্রমাণিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ্ নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি পবিত্র তারাবীহ্ নামায ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ্ নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে -
عن حَضْرَتِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাকায়াত (পবিত্র তারাবীহ্ নামায) এবং পবিত্র বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৫, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-৪৩৯১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حَضْرَتِ السائب بن يزيد رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قال كنا نقوم في زمان حضرت الفاروق الاعظم عليه السلام بعشرين ركعة والوتر.
অর্থ: হযরত সায়িব বিন ইয়াযিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারক কালে বিশ রাকায়াত পবিত্র তারাবীহ্ ও পবিত্র বিতির পড়তাম। (সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-১৪৪৩)
কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-
كان الناس يصلون فى زمان حضرت الفاروق الاعظم عليه السلام فى رمضان عشرين ركعة ويوترون بثلاث.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারক কালে লোকেরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাকায়াত পবিত্র তারাবীহ্ ও তিন রাকায়াত বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৩)
কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-
كان الناس يقومون في زمان حضرت الفاروق الاعظم عليه السلام في رمضان بثلاث وعشرين ركعة .
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারক কালে লোকেরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাকায়াত পবিত্র তারাবীহ্ এবং তিন রাকায়াত বিতির আদায় করতেন। (মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৪৩৯৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان حضرت الفاروق الاعظم عليه السلام جمع الناس على حضرت ابى بن كعب رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فكان يصلى بهم عشرين ركعة.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি লোকদেরকে হযরত উবায় বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট একত্র করে দিলেন। আর তিনি লোকদের বিশ রাকায়াত পবিত্র তারাবীহ্ পড়াতেন। (সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)
হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইমামতি মুবারকে ২০ রাকায়াত পবিত্র তারাবীহ্ নামায হতো। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
كَانَ حضرت أُبَيّ بْنُ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يُصَلِّي بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِالْمَدِينَةِ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَيُوتِرُ بِثَلاَثٍ.
অর্থ: হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি লোকদেরকে নিয়ে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পবিত্র মদীনা শরীফে বিশ রাকায়াত পবিত্র তারাবীহ্ এবং তিন রাকায়াত পবিত্র বিতির নামায পড়াতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৪)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লেবাছ সুন্নতী কোর্তা
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)