পবিত্র কুরআন শরীফের মতই পবিত্র হাদীছ শরীফ সমগুরুত্ব সম্পন্ন (২)
, ২৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩১ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি বলেন-
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থ: “সুতরাং যারা উনার (রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) আদেশের বিরোধিতা করে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর এসে পড়বে কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৬৩)
আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِى رَافِعٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الأَمْرُ مِنْ أَمْرِى مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لاَ نَدْرِى مَا وَجَدْنَا فِى كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ.
অর্থ: “হযরত উবাইদুল্লাহ বিন আবু রা’ফে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে আর তার নিকট আমার আদেশাবলীর কোন একটি আদেশ পৌঁছাল, যাতে আমি কোন বিষয়ে আদেশ বা নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানিনা, মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবে যা পাবো, তাই অনুসরণ করবো। ” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ্, আহমদ, বায়হাক্বী, মেশকাত)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ السُّلَمِيِّ رضي الله عنه قَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَيَحْسَبُ أَحَدُكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَظُنُّ أَنَّ اللَّهَ لَمْ يُحَرِّمْ شَيْئًا إِلاَّ مَا فِى هَذَا الْقُرْآنِ أَلاَ وَإِنِّى وَاللَّهِ قَدْ وَعَظْتُ وَأَمَرْتُ وَنَهَيْتُ عَنْ أَشْيَاءَ إِنَّهَا لَمِثْلُ الْقُرْآنِ أَوْ أَكْثَرُ
অর্থ: “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া আস্ সুলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার গদীতে ঠেস দিয়ে একথা মনে করো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যা এই কুরআন শরীফে অবতীর্ণ করেছেন, তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? তোমরা জেনে রাখো, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কছম করে বলছি- নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে অনেক বিষয়ে আদেশ দিয়েছি, উপদেশ দিয়েছি এবং নিষেধও করেছি, আমার এরূপ বিষয়ও নিশ্চয়ই কুরআন শরীফের ন্যায় এমনকি উনার থেকে অধিক। ” (আবূ দাউদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব)
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথাই বলেন না।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে তিনি একদিন একটি বোর্ড বা কাগজের মধ্যে কিছু কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ লিখে দেয়ালে ঝুলিয়ে দেন। লেখাগুলোর হেডিং ছিল- “মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ। ”
জনৈক ব্যক্তি লেখাগুলো পাঠ করে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে আসলো এবং বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন! শিরোণামে লেখা হয়েছে- “মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ” অথচ সেখানে পবিত্র হাদীছ শরীফও স্থান পেয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফও কি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ? জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বলেন, “হে ব্যক্তি! আপনি কি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেছেন?” সে ব্যক্তি বললেন- হুযূর বেয়াদবী মাফ করবেন, আমি একজন কুরআনে হাফেজ। জবাবে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বলেন, “আপনি কি কুরআন শরীফের সেই আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করেননি?” যেখানে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেছেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদেরকে যা আদেশ করেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধরো। আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাক। (এ বিষয়ে) মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। ” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-০৭)
এ আয়াত শরীফ শুনে সে ব্যক্তি বললেন- হে আমীরুল মু’মিনীন! এখন আমি বুঝতে পেরেছি। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ পালন করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ পালন করারই নামান্তর।
আর তাই হাম্বলী মায্হাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল মুহাদ্দেছীন, ফখরুল ফুক্বাহা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত আয়াত শরীফের ভিত্তিতে ফতওয়া দিয়েছেন যে, “সুন্নত মুবারক সমূহ” পালন করা ফরজ। ”
অতএব প্রতিভাত হয়েছে যে, সুন্নত মুবারকের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থাৎ হিদায়েত বা দ্বীনের উপর থাকতে হলে, প্রতিক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সূক্ষ¥াতিসূক্ষ¥ ও পুঙ্খানুপুক্ষ¥ অনুসরণ-অনুকরণ করা অবশ্য কর্তব্য।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
গোল্ডেন রাইস (২)
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে -১১
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০)
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৭)
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)