ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (৩)
, ২০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৩ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ০৬ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
২. তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্তিত্ব নেই:
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এরূপ আরো অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছেন। যেখান থেকে অত্যন্ত সুস্পভাবে প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে কাউকে পুরুষ আর কাউকে মহিলা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি পুরুষ ও মহিলা ছাড়া তৃতীয় কোনো লিঙ্গ সৃষ্টি করেননি। এ বিষয়টিই হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আরো সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। উনারা হিজড়ার ব্যাপারে অর্থাৎ লিঙ্গগত দিক থেকে যেই ব্যক্তি পুরুষ ও মহিলা উভয়ের অঙ্গ এবং আলামতধারী হয়, তাকেও প্রাধান্যপ্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে পুরুষ অথবা মহিলা স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তার উপর পুরুষ বা মহিলার শরঈ হুকুম-আহকাম আরোপ করেছেন। শুধু তাই নয়; খুনসায়ে মুশকিল বা জটিল হিজড়া অর্থাৎ লিঙ্গগত দিক থেকে যে ব্যক্তি পুরুষ ও মহিলা উভয় ধরণের বৈশিষ্ট্যধারী হয় এবং কোনো এক লিঙ্গের দিকে প্রাধান্য দেয়ার মতো বাহ্যিক কোনো কারণও জানা যায় না- তার ব্যাপারেও হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, খুনসায়ে মুশকিল বা জটিল হিজড়া যদিও আমাদের জন্য কঠিন ও অস্পষ্ট, তবে প্রকৃতপক্ষে সে পুরুষ কিংবা মহিলাই হয়। সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে পুরুষ ও মহিলার বাইরে তৃতীয় লিঙ্গের কোনো ধারণা বা অস্তিত্ব নেই। তারপর উনারা আরো অন্যান্য পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَنَّهٗ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই তিনিই পুরুষ ও মহিলা জোড়া সৃষ্টি করেছেন। ” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম আবূ বকর জাছ্ছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
لَمَّا كَانَ قَوْلُهٗ {اَلذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى} اِسْمًا لِلْجِنْسَيْنِ اِسْتَوْعَبَ الْجَمِيْعَ وَهٰذَا يَدُلُّ عَلٰى اَنَّهٗ لَا يَخْلُوْ مِنْ اَنْ يَّكُوْنَ ذَكَرًا اَوْ اُنْثٰى وَاَنَّ الْخُنْثٰى وَاِنْ اِشْتَبَهَ عَلَيْنَا اَمْرُهٗ لَا يَخْلُوْ مِنْ اَحَدِهِمَا وَقَدْ قَالَ حَضْرَتْ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اِنَّ الْخُنْثَى الْمُشْكِلَ اِنَّمَا يَكُوْنُ مَا دَامَ صَغِيْرًا فَاِذَا بَلَغَ فَلَا بُدَّ مِنْ اَنْ تَظْهَرَ فِيْهِ عَلَامَةُ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهٰذِهِ الْاٰيَةُ تَدُلُّ عَلٰى صِحَّةِ قَوْلِهٖ
অর্থ: “পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘আয যাকার ও আল উনসা’ হলো ইসমুল জিনস, যা সকল সৃষ্টিজীবকেই শামিল করে। আর এটি প্রমাণ করে যে, কেউ হয়তো পুরুষ হবে কিংবা মহিলা। এর বাইরে কিছু নয়। হিজড়ার বাহ্যিক অবস্থা যদিও আমাদের কাছে অস্পষ্ট লাগে, কিন্তু সেও প্রকৃতপক্ষে এই দুই লিঙ্গের কোনো একটি। হয় পুরুষ অথবা মহিলা। হযরত মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- ‘খুনছায়ে মুশকিল বা জটিল হিজড়া ততদিন পর্যন্ত জটিল হিজড়া থাকে, যতদিন পর্যন্ত সে ছোট থাকে। যখন সে বড় হয়ে যায়, তখন আবশ্যিকভাবে তার মাঝে পুরুষ কিংবা মহিলার বিশেষ আলামতসমূহ প্রকাশ যায়। আর এই পবিত্র আয়াত শরীফই উনার এই বক্তব্যের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে। ” (আহকামুল কুরআন লিল জাছ্ছাছ ৩/৫৫১)
আল্লামা হযরত ইমাম আলাউদ্দীন আবূ বকর ইবনে মাসঊদ ইবনে আহমদ কাসানী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
فَالْخُنْثٰى مَنْ لَّهٗ اٰلَةُ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالشَّخْصُ الْوَاحِدُ لَا يَكُوْنُ ذَكَرًا وَاُنْثٰى حَقِيْقَةً فَاِمَّا اَنْ يَّكُوْنَ ذَكَرًا وَاِمَّا اَنْ يَّكُوْنَ اُنْثٰى
অর্থ: “হিজড়া বলা হয়- যার পুরুষ ও মহিলা উভয়ের লিঙ্গই আছে। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ একই সাথে পুরুষ ও মহিলা হতে পারে না। হয়তো সে পুরুষ হবে অথবা সে মহিলা হবে। ” (বাদাইউছ ছানায়ি’ ৭/৩২৭)
কাজেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের লিঙ্গ কেবল পুরুষ ও মহিলার মাঝেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে তৃতীয় লিঙ্গের অস্তিত্ব নেই। এই শরঈ ফায়ছালা বর্তমানে অধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। বিজ্ঞান যেটা ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছে তা হচ্ছে- সন্তান উৎপাদনের সময় একজন ব্যক্তিকে লিঙ্গ নির্ধারণী ঢঢ ক্রোমোসোম দেয়া হবে, নাকি ঢণ ক্রোমোসোম দেয়া হবে, তাই হচ্ছে ঐ ব্যক্তির লিঙ্গ। যদি কোনো ব্যক্তিকে ঢণ ক্রোমোসম দেয়া হয় তবে সে পুরুষ, আর যদি ঢঢ ক্রোমোসম দেয়া হয় তবে সে মহিলা। যেহেতু একজন মানুষ প্রজননের সময় ঢঢ ও ঢণ ব্যতীত অন্য কোনো লিঙ্গ নির্ধারনি ক্রোমোসম দেয়া হয় না, তাই বৈজ্ঞানিকভাবে পুরুষ ও মহিলার বাইরে লিঙ্গ বলতে কিছু নেই। তাই বর্তমানে পাঠ্যবইয়ে মনের লিঙ্গ বা সামাজিক লিঙ্গ বলে যা পড়ানো হচ্ছে, তার সাথে বিজ্ঞান বা বাস্তবতার বিন্দুমাত্র মিল বা সংযোগ নেই।
উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তি যদি প্রজননে অসমর্থ হয়, তবে সে প্রজনন প্রতিবন্ধী হিসেবে গণ্য হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের প্রতিবন্ধীরা হিজড়া নামে পরিচিত। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবন্ধীরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. মুহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “সৃষ্টিকর্তা ছেলে এবং মেয়ের বাইরে অন্য কোনো লিঙ্গের কাউকে সৃষ্টি করেননি। হয়তো তাকে ছেলে হতে হবে অথবা মেয়ে। এর বাইরে কোথাও তৃতীয় লিঙ্গ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। বিজ্ঞান বা মেডিকেল সায়েন্সেও তৃতীয় লিঙ্গ বলতে কিছু নেই। তবে ডিফেকটিভ ডিজ অর্ডার অথবা ‘ডিজ অর্ডার অব সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট’ আছে। ফলে তাদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া হলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। ” (তথ্যসূত্র: দৈনিক সময়ের আলো, ৫ আগস্ট, ২০২২)
কাজেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিকোণ থেকে তৃতীয় লিঙ্গ বলে কিছু নেই। ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে কাফির-মুশরিকদের বানানো, মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ ও সুস্পষ্ট কুফরী।
-মুহাদ্দিস মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












