খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পরিচয় ও মর্যাদা মুবারক (১)
, ১০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছুর খলিক্ব-মালিক, রব। তিনি একক, তিনি অনন্য, তিনি নিরপেক্ষ, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। সকলেই উনার মুখাপেক্ষী। তিনি চিরজাগরূগ, চির বিদ্যমান। তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি এবং কাউকে জন্মও দেননি। উনার কেউ সমকক্ষ ও শরীক নেই। তিনি অনাদি, অনন্ত। তিনি চিরকাল আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। তিনি কালের গ-িভুক্ত নন। তিনি সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশীল। তিনি দয়াশীল ও করুণাময়। তিনি যা ইচ্ছা করেন, তাই করেন। জগতের সবকিছুই উনার ইচ্ছা মুবারকেই হচ্ছে। তিনি সবকিছুই জানেন, শুনেন ও দেখেন।
ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর পরমাণু, গুপ্ত হতে গুপ্ততর কল্পনা এবং ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর শব্দ কিছুই উনার দেখা, শুনা ও জানার বাইরে নয়। তিনি কথা বলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কালাম মুবারক। কিন্তু এ সকল গুণ প্রকাশের জন্য তিনি আমাদের ন্যায় দেহ বা কোন ইন্দ্রিয়ের মুখাপেক্ষী নন। তিনি এ সকল গুণ কিভাবে প্রকাশ করেন তা তিনি নিজেই জানেন। তা আমাদের জ্ঞান সীমার বাইরে। তিনি সমস্ত সৎ গুণাবলীতে গুণান্বিত এবং যাবতীয় অসৎ গুণাবলী হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। তিনিই সমস্ত জগতকে, মানুষ ও মানুষের কার্যাবলীকে, বস্তু ও বস্তুর গুণাবলীকে সৃষ্টি করেছেন। আমরা উনার সৃষ্ট বান্দা। আমাদের উপর উনার পুরোপুরি হুকুম জারি করার অধিকার রয়েছে এবং এই অধিকার বলেই তিনি আমাদের জীবন-যাপনের জন্য যাবতীয় আবশ্যক নিয়ম পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আমরা উনার সকল নিয়ম বা পদ্ধতির অনুসরণ করে চলতে বাধ্য। উনার কোন হুকুম বা কার্যই অন্যায়-অবিচার প্রকৃতির নয়। তিনি যা করেন সবই ন্যায়। সবই সৃষ্টির কল্যাণের জন্য করেন। অন্যায়-অবিচার তখনই হয় যখন কেউ উনার কর্তৃত্বের মধ্যে হস্তক্ষেপ করে। আর তিনি যা করেন তা উনার নিজের ক্ষমতায়ই করেন। তিনি উনার সৃষ্ট যে বস্তু বা যাকে যেরূপ সৃষ্টি করেছেন, তা তারই উপযোগী, তাই তার জন্য কল্যাণজনক। তিনি যাকে যা করেন, আপন অনুগ্রহেই করে থাকেন। কিছুই উনার উপর অপরিহার্য বা অবশ্য কর্তব্য নয়। তিনি বদ কাজের শাস্তি এবং নেক কাজের পুরস্কার দেন, কিন্তু কোনটিতেই তিনি বাধ্য নন।
এ সমুদয় গুণ-বৈশিষ্ট্যসমূহ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রথম সূরা পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ থেকে শুরু করে সর্বশেষ সূরা পবিত্র সূরা নাস শরীফ পর্যন্ত প্রতিটি সূরা শরীফ উনাদের মধ্যেই মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যাত-ছিফত মুবারকের বর্ণনা বা আলোচনা রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
যেমন পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبّ الْعَالَمِيْنَ . اَلرَّحْـمٰنِ الرَّحِيْمِ . مَالِكِ يَوْمِ الدّيْنِ.
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের রব বা পালনকর্তা, যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়, যিনি ক্বিয়ামত দিবসের মহান মালিক। ” (পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৩)
পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اللهُ لَا الٰهَ الَّا هُوَ الْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ ۚ لَا تَاْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ ۗ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ الَّا بِاذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُـحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مّنْ عِلْمِهِ الَّا بِـمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ ۖ وَلَا يَئُوْدُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন যে, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি চিরস্থায়ী, সংরক্ষণকারী। উনাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা কোনটাই স্পর্শ করতে পারে না। উনারই অধিকারে রয়েছে যা কিছু আসমানসমূহ এবং যমীনে রয়েছে। এমন কে আছে, যে সুপারিশ করবে উনার কাছে উনার অনুমতি ব্যতীত। দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। উনার ইলমের কোন কিছুকেই তারা (সৃষ্টি) পরিবেষ্টিত বা আয়ত্ব করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। উনার ক্ষমতা সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে রয়েছে। আর উনার পক্ষে এতদুভয়ের সংরক্ষণ করা কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫৫)
পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ . اللهُ الصَّمَدُ . لَـمْ يَلِدْ وَلَـمْ يُوْلَدْ . وَلَـمْ يَكُنْ لَّهُ كُفُوًا اَحَدٌ.
অর্থ: (আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, তিনিই মহান আল্লাহ পাক এক। মহান আল্লাহ পাক তিনি বেনিয়াজ বা অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি অর্থাৎ উনার কোন সন্তান-সন্তুতি নেই। উনাকেও কেউ জন্ম দেয়নি অর্থাৎ তিনি কারো সন্তান নন। আর উনার সমতুল্য বা সমকক্ষ কেউ নেই।
পবিত্র সূরা নাস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبّ النَّاسِ . مَلِكِ النَّاسِ . الٰهِ النَّاسِ.
অর্থ: “(আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানবকুলের রব বা প্রতিপালক উনার কাছে, মানবকুলের মালিক বা অধিপতি উনার কাছে এবং মানবকুলের ইলাহ বা মা’বুদ উনার কাছে। ” (পবিত্র সূরা নাস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৩)
এমনিভাবে অসংখ্য পবিত্র আয়াতে কারীমাসমূহ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যাত মুবারক ও ছিফাত মুবারক সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী শুয়াইব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)