ক্বায়িম মাক্বামে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নছীহত মুবারক:
পারিবারিক জীবনে নেককার আহলিয়ার অবদান
, ১৯ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১০ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّن
অর্থ মুবারক: “তোমরা (পুরুষরা) তাদের (মহিলাদের) আবরণ, তারাও তোমাদের আবরণ।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, আয়াত শরীফ ১৮৭)
অর্থাৎ আহাল ব্যতীত আহলিয়া যেমন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনা, ঠিক তেমনি আহলিয়া ব্যতীত আহালও পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনা।
আমরা যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সূচনা লগ্ন থেকে আজ অবধি লক্ষ্য করি, তাহলে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সহজেই খুঁজে পাই। যেমন: সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার যিনি ধারক-বাহক সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে তাশরীফ মুবারক আনলেন, তখন থেকে মহাসম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত এমন বেমেছাল খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছিলেন যার ফলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সন্তুষ্ট মুবারক হয়ে সবসময় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করতেন, উনার শান-মান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করতেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে যত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম হাদিয়া মুবারক করেছেন; সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মত অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম দেননি।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুস সালাম মুবারকে (জবান মুবারক) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার এই ছানা-ছিফত মুবারক দ্বারাই প্রমাণিত হয়, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার শান-মান ফযীলত মুবারক কত ঊর্ধ্বে। ঠিক তেমনি অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অবদানও বেমেছাল। মূলত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে থাকা অবস্থায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেমন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আনজাম মুবারক দিয়েছেন ঠিক তেমনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পরেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আনজাম মুবারক দিয়েছেন।
যার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সার্বিক বিষয়ের ফায়সালা মুবারক নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
পরবর্তীতে হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনাদের দিকে লক্ষ্য করলেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আনজামের বিষয়টি দেখতে পাই। হযরত পুরুষ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের কামিয়াবীর পিছনে মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনাদের অবদানও ছিল বেমেছাল। যেমন তাবুকের জিহাদের সময় যিনি খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কাছে তেমন কোন অর্থ ছিল না। কারণ একদিকে ফসল কাটার সময় তখনও হয়নি অর্থাৎ ফসল উঠলে তা বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করার কথা ছিল কিন্তু তখনও ফসল ও ফল উঠার সময় হয়নি। অপরদিকে উনারা সবকিছু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করে ফেলতেন, কোনকিছু জমা করে রাখতেন না। যার কারণে তিনি তাবুকের জিহাদের ঘোষনা শুনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন উনার এই চিন্তাগ্রস্ত অবস্থা দেখে উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি উনার কাছে চিন্তার কারণ জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাবুকের জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইরশাদ মুবারক করেছেন, যার যার সাধ্য-সামর্থ অনুযায়ী শরীক থাকার জন্য। কিন্তু আমার হাতে এখন তেমন কিছু নেই, আমি কিভাবে শরীক থাকব। এজন্য আমি ভীষণ চিন্তিত। তখন উনার আহলিয়া বললেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু সাধ্য-সামর্থ অনুযায়ী শরীক থাকতে বলেছেন তাই আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে যান। তখন উনার আহলিয়া ঘরের সবকিছু এমনকি ঝাড়ুটা পর্যন্ত একটা বস্তায় ঢুকিয়ে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে তুলে দিলেন। এভাবেই উনার সম্মানিতা আহলিয়া আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার চিন্তা দূর করে দিলেন। তাবুকের জিহাদে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার এই সর্বস্ব দিয়ে গোলামীতে আনজাম মুবারক দেওয়ার ফলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এখানে একটা সূক্ষ্ম ফিকিরের বিষয়- সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যে তাবুকের জিহাদে গোলামীতে আনজাম মুবারক দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করেছিলেন তার পিছনে কার অবদান ছিল? বিষয়টি সহজেই বুঝা যাচ্ছে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আহলিয়া উনার অবদান ছিল। আমরা যদি বিষয়টি আরো লক্ষ্য করি, সেই মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে আজ অবধি যারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আখাছ্ছুল খাছ লক্ষ্যস্থল বান্দা-বান্দী, উম্মত ছিলেন এবং আছেন, উনাদের প্রত্যেকেরই সাফল্যের চূড়ান্ত শীর্ষে পৌঁছানোর পিছনে অবদান রেখেছেন- কারো সম্মানিতা মাতা, কারো আহলিয়া এবং কারো সম্মানিতা বানাত।
যার সর্বোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের মাথার তাজ, নয়নের মণি, প্রাণপ্রিয় শায়েখ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম! সুবহানাল্লাহ! উনাকে আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা মহিলা জাতির পথ প্রদর্শক, আমাদের মাঝে হিদায়েতের কা-ারী, নাজাতের দিশারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আরো উল্লেখ্য, একজন সন্তান তার মাতার মাধ্যমে সার্বিক পরিচয় লাভ করে থাকে। ঠিক তেমনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিচয় মুবারক লাভ করেছি, করছি এবং অনন্তকাল ধরে করতেই থাকব। অপরদিকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী পরিচয় মুবারক হচ্ছেন তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্কাম।
আর সেই হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্কাম হিসেবে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সার্বিক বিষয়ের ব্যাপক খিদমত মুবারক উনার বেমেছাল আনজাম মুবারক দিয়ে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, একজন নেককার, পরহেযগার মেয়ে হয়ে পারিবারিক জীবনে সাফল্য বয়ে আনতে হলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার আদর্শ মুবারক নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন সাইয়্যিদাতুন নিসা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মুবারক উসিলায় আমাদের সকলকে সেই আদর্শ মুবারক নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করার তৌফিক মুবারক দান করেন। আমীন!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)