খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারকে খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, রঊফুর রহীম, রহমাতুল্লিল আলামীন, ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, হাবীবুল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে পবিত্র রাজারবাগ শরীফে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার আদলে পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অক্লান্ত ও অবর্ণনীয় ত্যাগ ও পরিশ্রমে সর্বপ্রকার মহাসম্মানিত সুন্নতী নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। যথাক্রমে যশোর ও ফরিদপুর এবং ঢাকা রূপগঞ্জের ওলীগঞ্জ (কালীগঞ্জ) থেকে খেজুর গাছ, খেজুরের পাতা, কান্ড ও ছাল। আমাদের দেশের অধিকাংশ খেজুর গাছই রস সংগৃহীত কাটা গাছ। আর ওই কাটা গাছ দিয়ে স্তম্ভ, কাঠ, রুয়া ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব নয়। পূর্ণাঙ্গ ভালো গাছের দরকার। তাই অনেক খোঁজাখুঁজি ও ব্যয়বহুল ব্যবস্থায় দূর-দুরান্ত থেকে ট্রাকযোগে ও নৌপথে সমস্ত মহাসম্মানিত সুন্নতী সামগ্রী সংগ্রহ করে পবিত্র রাজারবাগ শরীফে আনা হয়। চাল বাঁধাইয়ের জন্যে বেঁত আনতে হয় সিলেট থেকে।

দেয়াল নির্মাণের জন্য লালমাটি সংগ্রহ করা হয় ঢাকা ক্বদমতলা রাজারবাগ থেকে। পাথর আনা হয় নূরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে।

বিজ্ঞ বিজ্ঞ মিস্ত্রি যোগাড় করে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ-১৪০৬ হিজরী সনে (২৮ সাদিস-১৩৫৩ শামসী সন, ১৯৮৬ ঈসায়ী সন) পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ তৈরির কাজ শুরু হয়।

পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ উনার বারান্দা, পবিত্র হুজরা শরীফ ও সুফ্ফাখানাসহ দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩০ ফুট। মূল মসজিদ মুবারক উনার দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট এবং প্রস্থ ২০ ফুট। মহাসম্মানিত মসজিদ উনার চাল বা ছাদ ছিল ৯ ইঞ্চি পুরু খেজুর পাতার ছাউনি। চালের ফ্রেম ছিল ২/২ ইঞ্চি রুয়া। আড়া ছিল তাল ও খেজুর গাছের। আর ৬ খানা স্তম্ভ/খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। দেয়াল নির্মাণে লালমাটির কঙ্কর (ছোট পাথর) বিছিয়ে দেয়া হয়।

মহাসম্মানিত মসজিদ উনার ভিতরে স্তম্ভে মাটির চেরাগ ব্যবহার করা হয়, যা সংগ্রহ করা হয়েছিল পুরান ঢাকার ঠাটারীবাজার ও টঙ্গি থেকে। উক্ত চেরাগে আলো জ্বালানোর জন্যে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণে সরিষার তেল ও যয়তুন তেল ব্যবহার করা হতো। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ উনার বিছানা ছিল মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণে খেজুর পাতার চাটাই দিয়ে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র জায়নামাযও ছিল খেজুর পাতার তৈরি। আর পবিত্র মিম্বর শরীফ তৈরি করা হয়েছিল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে ঝাউগাছ এনে তিন থাক (তাক/সিঁড়ি) বিশিষ্ট মহাসম্মানিত সুন্নতী মাপে। পবিত্র সুন্নতী মাপে খেজুর গাছের লাঠি মুবারকও তৈরি করা হয়। গরমকালে তাল পাতার পাখা ব্যবহার করা হতো। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, ইতিহাসে সর্বপ্রথম পবিত্র মদীনা শরীফ উনার হুবহু নকশা মুবারকে পবিত্র রাজারবাগ শরীফে পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ তৈরী করা হয়। যা দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে বহু লোক আসতো।

-সংকলনে: আহমদ হুসাইন