নছীহতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম:
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
, ২৩শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৯ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
لَيْسَ الذَّكَرُ كَالْاُنْثىَ
অর্থ: তিনি এমন একজন সম্মানিতা মহিলা উনার সমকক্ষ কোন পুরুষও নেই।
এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে বলেছেন, উনার যুগে কোন পুরুষও উনার সমকক্ষ ছিল না।
আর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্পর্কে সূরা আহযাব শরীফ উনার ৩২নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ .
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা নিসা আলাইহিন্নাস সালাম অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মত নন।
এই আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম তিনিসহ কোন মহিলাই উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সমকক্ষ নন। মূলত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন কারো মত নন, তদ্রুপ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও কারো মত নন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার সূরা নূর শরীফ উনার ২৬নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِيْنَ وَالطَّيِّبُوْنَ لِلطَّيِّبَاتِ .
অর্থ: পবিত্র পুরুষ উনাদের জন্য পবিত্র মহিলা এবং পবিত্র মহিলা উনাদের জন্য পবিত্র পুরুষ।
এই আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন মুত্বহ্হার, মুত্বহহির তদ্রুপ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুত্বহ্হারাহ, মুত্বহহিরাহ করে সৃষ্টি মুবারক করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার সূরা আহযাব শরীফ উনার ৩৩নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا
অর্থ: মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মত পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।
মূলত: হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক বর্ণনা করা এবং ধারণ করা উম্মাহর আক্বল সমঝের উর্দ্ধে। হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যে সর্বদিক দিয়ে, সর্ববিষয়ে বেমেছাল শান-মান মুবারক উনার অধিকারী তা অনুধাবনের জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ফযীলত মুবারক এবং একটি ঘটনা মুবারক তুলে ধরা হলো Ñ হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার ফযীলত মুবারক , মর্যাদা মুবারক সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি সাড়ে ৯০০ বছর দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক করেছিলেন। এই সাড়ে ৯০০ বছর যদি হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার ফযীলত মুবারক বর্ণনা করা হয় তবুও শেষ করা যাবে না। (সুবহানাল্লাহ)
সেই হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একটি বিষয় চিন্তা করে প্রায়ই কান্না-কাটি করতেন যে, উনার সারা জিন্দেগীর আমলের চেয়ে যদি তিনি সেই ছওর গুহায় তিন দিন ও তিন রাত অবস্থান মুবারক করতে পারতেন, তাহলে উনার জন্য কতইনা উত্তম হতো! যেই তিন দিন, তিন রাত হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছওর গুহায় অবস্থান মুবারক করেছেন এবং গোলামীর আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন।
যে সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক জো¯œার রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার সম্মানিত নুরুল আযহার মুবারকে (কোল মুবারক) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুরুল হুদা মুবারক (মাথা মুবারক) রেখে শুয়েছিলেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কারো কি আকাশের তারকার সমপরিমাণ নেকী মুবারক রয়েছেন? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আকাশের তারকার সমপরিমাণ নেকী মুবারক রয়েছেন। তখন আমি বললাম, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নেকী মুবারক উনার পরিমাণ কত? জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জিন্দেগীর সমস্ত নেকী মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার একখানা সম্মানিত নেকী মুবারক উনার সমান। (মিশকাত শরীফ, রযীন শরীফ)
আর সেই সম্মানিত নেকী মুবারক হচ্ছেন: সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার সময় সম্মানিত ছওর গুহা মুবারক এ তিনদিন-তিনরাত্রি মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত গোলামীতে আনজাম মুবারক দিয়ে যে নেকী মুবারক অর্জন করেছিলেন, তা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জিন্দেগীর সমস্ত নেকী মুবারক উনার সমান। সুবহানাল্লাহ! আর বাকী জিন্দেগীর আমল তো রয়েই গেছে যা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যে ছওর গুহায় তিনদিন-তিনরাত গোলামী মুবারক উনার আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন সেটা যদি এত ফযীলতপূর্ণ হয়, তবে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা উনাদের সমস্ত হায়াতি জিন্দেগী মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন, উনাকে যে ইতমিনান বা রাহাত মুবারক দিয়েছেন, তাহলে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফযীলত-সম্মান মুবারক কতখানি সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না। এমনকি জ্বিন-ইনসান কায়িনাতবাসীর এই বিষয়টি আক্বল সমঝেরও ঊর্ধ্বে। (সুবহানাল্লাহ)।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল মু’মিনীন আছ-ছালিছা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলতেন,
اَرِحْنِىْ اَرِحْنِىْ
“আমাকে (শান্তি দান) ইতমিনান করুন, আমাকে (শান্তি দান) ইতমিনান করুন। ”
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই হাদীছ মুবারক বলতেন কিন্তু খাছ করে তিনিসহ সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সকলের ক্ষেত্রেই এই হাদীছ মুবারক প্রযোজ্য।
মূলত: কুল কায়িনাতের সমস্ত কিছুই সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোলামীতে আঞ্জাম মুবারক দেয়ার জন্য। এছাড়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হুজরা শরীফ উনার ভিতরে এবং বাহিরে খিদমত মুবারক সংক্রান্ত যত বিষয় ছিল সমস্ত প্রকার খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেয়ার জন্য একজনের পরিবর্তে হয়ত আরেকজন সেই খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিতে পারতেন। কিন্তু এই মহাসম্মানিত اَرِحْنِىْ মুবারক তথা “আমাকে ইতমিনান করুন” এই খিদমত মুবারক উনার যে বিষয় যা একমাত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে আঞ্জাম দেয়া সম্ভব ছিলনা।
এই মহাসম্মানিত اَرِحْنِىْ খিদমত মুবারক উনার একক ফযীলত মুবারক উনার একমাত্র হক্বদার হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। (সুবহানাল্লাহ)।
খুবই সুক্ষ¥ এবং ফিকিরের বিষয় হলো, এই মহাসম্মানিত اَرِحْنِىْ শব্দ মুবারক তথা “আমাকে ইতমিনান করুন” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের উদ্দেশ্যে বলতেন এবং উনারা সেই রাহাত বা ইতমিনান মুবারক উনার আঞ্জাম মুবারক দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)