মন্তব্য কলাম:
‘নারী-পুরুষ সমান অধিকার’ কথাটির অন্তরালে যে প্রতারণা লুকানো: একটি মনস্তাত্ত্বিক পর্যালোচনা
, ০৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট লেখা হয়েছিল যে, “যেহেতু এখনও পর্যন্ত মেয়েদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস শুরু হয়নি সেহেতু এমন একটা নিয়ম করা উচিত যে- যখনই কোনো মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ কেউ বাসে উঠবে তখনই ছেলেরা উঠে তাদের বসতে দিবে।”
এই পোস্টে শতাধিক কমেন্টে বিভিন্নজন বিভিন্ন কমেন্টস করেছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- “নারী পুরুষ সমান অধিকার, তাই ছেলেরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে মেয়েরা কেন পারবে না! ইত্যাদি ইত্যাদি...।” এ নিয়ে নারী পুরুষদের মধ্যে একটা তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল ওখানে। তবে ওই লেখাটিতে কোনো নারী ই ‘সমান অধিকার চাই’ বলেনি বরং ‘ন্যায্য অধিকার’ টার্মটি-ই যে যৌক্তিক সেটাই মেনে নিয়েছিল। যাই হোক এখন আমরা ওই বিতর্কের সমাধানে যাব।
আসলে ‘সমান অধিকার’ বলে যে কথাটি আমাদের সমাজে প্রচলিত সেটা একটা ভুল ও প্রতারণামূলক কনসেপ্ট। এটা নারীবাদীদের দেয়া একটা টার্ম বা পরিভাষা। এই পরিভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারিত হয়ে থাকে এবং এটা নারীদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে।
এটা বরং হওয়া উচিত ছিল, ‘ন্যায্য অধিকার’; কখনোই ‘সম-অধিকার’ নয়। অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা সবাই যার যার প্রাপ্য তথা ন্যায্য অধিকার পাবে। কিছু ফিল্ডে নারীর প্রাপ্য বেশি, আবার কিছু ফিল্ডে পুরুষের প্রাপ্য বেশি। যেমন- সন্তানের কাছে নারী ‘মা’ হিসেবে পিতার চেয়ে তিন গুণ বেশি অধিকার প্রাপ্য।
মূল কথা হচ্ছে, দ্বীন ইসলাম যাকে যতটুকু অধিকার দিয়েছে সে ততটুকু অধিকার প্রাপ্য হবে। এটাই হচ্ছে ইনসাফ। এর বিপরীতটা হচ্ছে যুলুম।
‘সমান অধিকার’ কথাটাই অজ্ঞতাপ্রসূত কথা। যেমন- সমান অধিকার যদি দিতে হয় তাহলে তো দেশের প্রেসিডেন্টের সমান বেতন অন্যদেরকেও দিতে হবে, প্রেসিডেন্টের সমান ক্ষমতাও অন্যদের দিতে হবে, প্রেসিডেন্ট যত গার্ড নিয়ে অবস্থান করেন তত গার্ডও অন্যদের দিতে হবে, যেরকম বাসস্থানে থাকেন সেরকম বাসস্থান অন্যদেরও দিতে হবে। এখন চিন্তা করুন তো সবাইকে সমান বেতন, সমান ক্ষমতা, সমান গার্ড এবং সমান বাসস্থান দেয়া কি সম্ভব বা যৌক্তিক? সমান অধিকার দিলে কেমন পরিস্থিতি হবে তখন!
মূলত যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী তার তার জন্য সেরকম ব্যবস্থা করাটাই হচ্ছে যৌক্তিক এবং ইনসাফ এবং এটাই হচ্ছে ন্যায্য অধিকার অর্থাৎ যার যতটুকু প্রাপ্য তাকে বুঝিয়ে দেয়া।
অনেক মেয়ে আছে পুরুষবিদ্বেষী, আবার অনেক ছেলে আছে নারীবিদ্বেষী। এদের আচরণ, বক্তব্য ও অধিকার সম্বন্ধীয় কথাগুলো সমাজে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে। আবার সমাজে এক শ্রেণীর এনজিও কর্মী, কথিত সুশীল সদস্য ও দ্বীন ইসলামের বেশ ধরা লোক রয়েছে, যারা নারীকে পুরুষের বিরুদ্ধে এবং পুরুষকে নারীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে। এরা বিভিন্ন রকম অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথা বলে থাকে, যার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।
আসলে নারী-পুরুষ কেউ কারো বিরোধী নয়, একজন অপরজনের পরিপূরক। নারী ছাড়া ‘পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারী’ এমন একটা পৃথিবী কি কল্পনা করা যায়?
খেয়াল করলে দেখা যায়, নারী পুরুষ সমান অধিকারের কথাটা কিন্তু সাধারণ মেয়েরা বলে না, বলে গুটিকয়েক নারীবাদী।
মিডিয়া এসব নারীবাদীদের অনুকূলে থাকায় তারা দেশের নারীদের মুখপাত্র বা প্রতিনিধি সেজে নারীকে পুরুষের বিরুদ্ধে এবং পুরুষকে নারীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। এর ফলে এখন কেউ কাউকে রিসপেক্ট করতে চায় না, ছাড় দিতে চায় না।
এসব ফেমিনিস্টরা কিন্তু তৃণমূল নারীদের অধিকার নিয়েও কোনো কথা বলে না, এরা জাস্ট পশ্চিমা অশ্লীল বল্গাহারা ভাবধারা আমাদের দেশে নিয়ে আসতে চায়।
ঐ নারীবাদী গোষ্ঠীটি মুসলিম পরিবারের নারী-পুরুষের শক্তিশালী বন্ধনকে দুর্বল করতে চায়। নারী-পুরুষকে ডিভাইড করতে চায়।
মূলত এই ডিভাইড নীতিটি মুসলিমবিদ্বেষীদের, যার চর্চা এ উপমহাদেশে চালু করে প্রথম ব্রিটিশ বেনিয়া নৌদস্যুরা। ত্রিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে বাঙ্গালির শিক্ষিত শ্রেণীকেও আদর্শগতভাবে আলাদা করে দিয়েছিল তারা।
ঐ ব্রিটিশদের উত্তরসূরী একটা মহলই কথিত ‘সম-অধিকার’ নামক দ্বি-মুখী সাংঘর্ষিক প্রচারনা এখন এপ্লাই করছে। অর্থাৎ “নারী-পুরুষ একজন আরেক জনকে আলাদা ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে” এটা উভয়ের ব্রেইনে পুশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী। যার প্রভাব দেখতে পাচ্ছি আমরা প্রতি ঘণ্টায় ঢাকায় একটা করে ডিভোর্স অর্থাৎ দেশব্যাপী এখন বিবাহ বিচ্ছেদ বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে।
নারীবাদী কর্তৃক সৃষ্ট ‘নারী পুরুষ সমান অধিকার’ তত্ত্বের দ্বারা মেয়েরা প্রতারিত হচ্ছে। এটা সমাজে ফেতনা ছড়ায়, নারী পুরুষের মধ্যে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, সমাজে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল করে, বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ায়।
এর পরিবর্তে সম্মানিত শরীয়ত যাকে যতটুকু অধিকার দিয়েছে সেটাই হচ্ছে যৌক্তিক এবং ইনসাফ।
-মুহম্মদ জিয়াউল হক আকন্দ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইন
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের তৃতীয় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জমিনে ফিতনা-ফাসাদের বড় একটা কারণ বেপর্দা-বেহায়া নারী
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)