হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ হযরত মুহম্মদ আসলাম তুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি
, ২৮ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দ্বীনের প্রতি দৃঢ়তা:
হযরত মুহম্মদ আসলাম তুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের প্রতি, দ্বীনের রাস্তায় চরম দৃঢ় ছিলেন। কোন অবস্থাতেই তিনি কুফরী-শেরেকী ও নাহক্বের কাছে নতি স্বীকার করেননি। উনাকে সে সময়কার শাসকবর্গ বলেছিল, “আপনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মখলুক (সৃষ্ট বস্তু) বলে স্বীকার করুন।” তিনি বললেন, “আমি এরূপ দ্বীন বিরোধী উক্তি কিছুতেই করতে পারবো না।” এতে ক্রুদ্ধ হয়ে সে সময়কার শাসনকর্তা উনাকে দুই বৎসরকাল পর্যন্ত জেলে আটকিয়ে রাখে। তিনি জেলে থেকে প্রতি জুমুয়াবার জুমুয়ার পূর্বে গোসল করতঃ নামাযের বিছানা কাঁধে করে জেলখানার দরজায় হাজির হতেন। দারোয়ান উনাকে নিষেধ করলে তিনি ফিরে যেতেন এবং বলতেন, “এলাহী! যা আমার ইখতিয়ারে ছিল তা আমি করলাম, এখন আপনি জানেন।”
হক্বের উপর অটল থাকার কারণে অবশেষে একদিন মহান রাব্বুল আ’লামীন উনার অশেষ মেহেরবানীতে তিনি জেলখানা থেকে মুক্তি পান।
দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত:
যখন আব্দুল্লাহ ইবনে তাহের নিশাপুরের নতুন খলীফা হলেন, তখন শহরের লক্ষ লক্ষ লোক নতুন খলীফার সাথে দেখা ও সালাম-কালাম বিণিময়ের জন্য ভীড় করলো। এ অবস্থার তৃতীয় দিনে শহরের সমস্ত লোকের আসা শেষ হয়েছে ভেবে, খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, “শহরের উল্লেখযোগ্য এমন কেউ কি আছেন, যিনি আমাকে সালাম করতে আসেননি?”
প্রশ্নের জবাবে আমীর ওমরাহগণ আরয করলেন, “হ্যাঁ, একজন আছেন। তিনি হলেন, মুহম্মদ ইবনে আসলাম তূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি!” খলীফা বললেন, “কেন তিনি আসেননি?” আমীর ওমরাহগণ বললেন, “তিনি ‘ওলামায়ে রাব্বানী’ (খোদা-তত্বজ্ঞানী আলেম), দুনিয়ার বাদশাহদের সালাম-কালাম করা উনার পছন্দনীয় নয়।” খলীফা বললেন, “তাহলে আমিই যাব উনাকে সালাম-কালাম করতে।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ মুহম্মদ আসলাম তূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাৎ লাভের জন্য খলীফা উনার ঘরের দরজায় হাজির হলেন। হযরত আব্দুল্লাহ মুহম্মদ আসলাম তূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে নিকটে আসার অনুমতি দিলেন না। সেদিন ছিল জুমুয়াবার, খলীফা উনার ঘরের দরজায় ঘোড়ার পিঠে বসেই অপেক্ষায় রইলেন। মনে মনে স্থির করলেন, আজতো জুমুয়াবার; অন্ততঃ জুমুয়ার নামাযের পূর্বে নিশ্চয়ই তূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বের হবেন, তখন সাক্ষাৎ করবো।
জুমুয়ার পূর্বে হযরত আব্দুল্লাহ মুহম্মদ আসলাম তূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সত্যিই বের হলেন, খলীফা (আব্দুল্লাহ) সাথে সাথে ব্যস্ততার সহিত দ্রুত ঘোড়া হতে নেমে অত্যন্ত তা’যীমের সাথে উনাকে কদমবুছি করলেন, আর মুখ দিয়ে একথাগুলো আওরাতে লাগলেন যে, “এলাহী! আমি গুণাহগার, তাই তিনি আমাকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। পক্ষান্তরে তিনি একজন হক্কানী, রব্বানী ওলীআল্লাহ ও নেককার বান্দা বলে আমি উনাকে শ্রদ্ধা করি। হে খোদা! আপনার রহমতের দ্বারা, আপনার বন্ধুর উছীলায় আমি গুণাহগারকে মেহেরবানী করে নেককারে পরিণত করে দিন।”
বেলায়েতের রোব:
فقيه واحد اشد على الشيطان من الف عابد
“শয়তানের নিকট একজন ফক্বীহ, এক হাজার আবেদ থেকেও ভয়ঙ্কর।”
বর্ণিত আছে, এক তরীক্বতপন্থী বুযূর্গ বর্ণনা করেন, আমি রোমে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, শয়তান শূন্য হতে মাটিতে পড়ে এমন জোড়ে আছাড় খেল যে, মাটিতে প্রায় ধ্বসে যাওয়ার উপক্রম হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি ব্যাপার? কেন এই অবস্থা? শয়তান বললো, হযরত মুহম্মদ ইবনে আসলাম তূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এখনই ওযু করতে যেয়ে এক খাঁকড়ান দিলে আমার এই দশা হয়, আমি ভয়ে ছিটকিয়ে এখানে এসে পড়ি, অল্পের জন্য শুধু মাটিতে ধ্বসে যাইনি।” সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












