সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২৩)
, ১৯ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩১ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ চার মাযহাব উনার এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কেউই এমন কথা বলেন নাই যে “সারা বিশ্বে একই সাথে বা একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে”। কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
প্রথম মিথ্যাচারিতা: তাদের প্রথম মিথ্যাচার হলো ছিরাজুল উম্মাহ, ফক্বীহুল মিল্লাহ, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে তারা প্রচার করে “সমগ্র বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ করার কথা তো ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারাও বলে গিয়েছেন”। নাউযুবিল্লাহ!
সঠিক জাওয়াব: উপরে বর্ণিত দাজ্জালে কায্যাবদের বাস্তব নমুনা স্বয়ং “সমগ্র বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ শুরু করার দাবিকারীরা। আর এ চরিত্র একমাত্র মুনাফিকদেরই হয়ে থাকে। তাদের এই বাস্তবতা মিলে ঐ নিকৃষ্ট মুনাফিক বিদয়াতীদের সাথে, যারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্ধেক পাঠ করে অসম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে দলীল দাঁড় করায়। তাদের সুবিধা অনুযায়ী পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আম শব্দের খাছ অর্থ করে ও খাছ শব্দের আম অর্থ করে। পবিত্র আয়াতে মুতাশাবিহাত উনার মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মনগড়া-বানোয়াট ও মিথ্যা অর্থ অথবা ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি ছড়ায় ও মানুষকে গোমরাহ করতে ফতওয়াবাজি করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ উনার অর্ধেক পাঠ করে ফতওয়াবাজি করে। যেমন একটি হলো- তারা বলে থাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নামায কায়েম করতে বলেছেন, নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।
তিনি নামায কায়েম করতে বলেছেন, তার দলীল তারা উল্লেখ করে-
أَقِيمُوا الصَّلَاةَ
অর্থ: তোমরা নামায কায়িম করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৩)
নামায পড়তে নিষেধ করেছেন, তার দলীল তারা উল্লেখ করে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ
অর্থ: হে ঈমানদাররা! তোমরা পবিত্র ছলাত উনার ধারে কাছেও যাবে না।
উল্লেখিত বাক্য মুবারক ২টি একই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্ধেক অংশ। আর বাক্বী অংশ হলো
وَأَنتُمْ سُكَارَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ
মাতাল বা নেশাগ্রস্থ অবস্থায়, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও, যা কিছু তোমরা বলেছো।
তাহলে পরিপূর্ণ আয়াত শরীফ হলো;
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنتُمْ سُكَارَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ
পরিপূর্ণ অর্থ হলো: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মাতাল বা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় পবিত্র নামায উনার ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও, যা কিছু তোমরা বলেছো। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
আর সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ করা ও পবিত্র রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও তদ্রুপ তাদের কুফরী-নেফাক্বী মতকে প্রতিষ্ঠার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মিথ্যা-মনগড়া অর্থ ও অপব্যাখ্যা করার সাথে সাথে সরাসরি ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে বলে যে, তিনি নাকি বলেছেন-
لاعبرة لاختلاف المطالع
অর্থ: নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়। নাউযুবিল্লাহ! চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)