সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ৩০ শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৭ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত মেয়ে। পিতার বংশ: কুরাইশ বংশের বনু ‘আদী বিন কা‘ব শাখা। তিনি ও উনার সহোদর ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সম্মানিতা মাতা হযরত যয়নব বিনতে মাজ‘উন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি।
যিনি ছিলেন একজন সুপ্রসিদ্ধ সম্মানিতা ছাহাবিয়া। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছয় বছর পূর্বে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ৫ বছর পূর্বে, হিজরতের ১৮ বছর পূর্বে, পবিত্র মাহে রজবুল হারাম শরীফ উনার ১৪ তারিখ, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র মক্কা শরীফে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সে সময় কুরাইশগণ পবিত্র কা’বা ঘর পূনঃনির্মাণে ব্যস্ত ছিলো। (তাবাক্বাত, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)
প্রাথমিক জীবন:
প্রথমে হযরত খুনায়স বিন হুযাফা আস সাহমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফে “আছ-ছাবিকুনাল আউওয়ালুন” অর্থাৎ প্রথম দিকের দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দারুল আরকামে যাওয়ার পূর্বেই তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাবশায় দ্বিতীয় দলটির সাথে হাবশায় হিজরত করেন। (তাবাকাত)
এক সময় হাবশায় একটি খবর প্রচারিত হয় যে, পবিত্র মক্কা শরীফে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ সবাই দ্বীন ইসলাম কবুল করছে। এ খবর শুনে অনেকেই পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসেন। ফিরে এসে দেখেন খবরটি সঠিক নয়। তখন অনেকে পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করতে থাকেন। আর অনেকে পুণরায় হাবশায় ফিরে যান। হযরত খুনায়স বিন হুযাফা আস সাহমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ সময় পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসেন এবং এখানেই অবস্থান করতে থাকেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে বলা যায় যে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার পরিবার যখন দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন, তিনিও তখন দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরতের নির্দেশ মুবারক হলে তিনি ও উনার আহাল হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা উভয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত মুবারক করেন। পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে উনারা কুবার বনু আমর ইবনে আওফ গোত্রের হযরত রিফা’য়া ইবনে আবদুল মুনজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন। (ইবনে হিশাম)
হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বদর জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জিহাদে তিনি দেহের একাধিক স্থানে জখম প্রাপ্ত হন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে এসে শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করেন। হযরত উছমান ইবনে মাজউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাশে জান্নাতুল বাকীতে উনাকে দাফন মুবারক করা হয়। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ:
হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করার পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার যিনি সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট গেলেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি কোন উত্তর দিলেন না। অতঃপর তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করেন। এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত যাওজাতুল মুকাররামাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশে তিনি ছিলেন শোকাভিভূত। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এখন আমার বিবাহের কোন ইচ্ছা নেই।
এতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমত মুবারকে নিজের মনের আরজু প্রকাশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার সাথে নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার অপেক্ষা উত্তম এক ব্যক্তির সঙ্গে, আর হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার অপেক্ষা উত্তম এক মহিলার সাথে। (উসুদুল গাবা)
(এখানে বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বিনতু ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে, যেহেতু তিনি তখনও উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেননি। )
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নিজের জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার প্রস্তাব পাঠান। সেই অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয় এবং অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয় (ইছাবা, উসুদুল গাবা)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয় ৩য় হিজরী পবিত্র মাহে শা’বান শরীফ উনার ৪ তারিখ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)। সেই সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ২১ বছর ২০ দিন। (দৈনিক আল ইহসান শরীফ)
এই নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাত হলে তিনি বলেন যে, আপনার মেয়ে সম্পর্কে আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আলোচনা মুবারক করতে শুনেছি। তখন আমার ধারণা হয়েছিল, হয়তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সাথে নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন। সেজন্য আপনি যখন আপনার মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তখন আমি চুপ ছিলাম, আমি কিছু বলিনি। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম তিনি হিজরী ৪৫ সনে পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার ১৩ তারিখ, ইয়াওমুল খমীস (বৃহস্পতিবার) পবিত্র মদীনা শরীফে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
তখন ছিল হযরত মু‘য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত মুবারককাল। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গভর্ণর ছিলেন তখন মারওয়ান, তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বহনকারী খাটিয়া নিজ কাঁধে নিয়ে রওযা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছে দেন। জান্নাতুল বাক্বীতে উনার পবিত্র রওযা শরীফ অবস্থিত। এখানে অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথেই উনার পবিত্র রওযা শরীফ। এ সময় উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৬৩ বছর ২৯ দিন।
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সামগ্রিকভাবে সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে খ্বালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে অসংখ্য-অগণিত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন।
পবিত্র সূরা আহযাব শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে ‘উম্মাহাতুল মু’মিনীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন-
أَلنَّبِيُّ أوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهٗ أُمُّهَاتُهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
খ্বালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক এই পবিত্র আয়াত শরীফে উনাদেরকে أُمُّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মর্ম থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বহহারাতগণ একমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকল মু’মিন অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন উনাদের সকলেরই মহাসম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খ্বালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পূতঃপবিত্রা ও সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারিণী করে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন সেজন্য উনাদের আরেকটি লক্বব মুবারক হচ্ছে أَزْوَاجِ مُطَهَّرَاتْ (আযওয়াজে মুত্বহহারাত অর্থাৎ পূতঃপবিত্রা আহলিয়াগণ) অর্থাৎ উনাদের চরিত্র সকল প্রকার কলুষমুক্ত। বরং উনারা হলেন পবিত্রতাদানকারী। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একদিক দিয়ে সম্মানিত মহিলা ছাহাবী, অন্যদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বহহারাত, পবিত্র আহলু বাইত শরীফ উনাদের সম্মানিত সদস্য। পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। ’ সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
উনারা নিজেরা শুধু পবিত্রই নন, বরং উনারা পবিত্রতাদানকারী, যা উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করলে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবার দিক থেকে কয়েকটি স্তর রয়েছেন। সর্বপ্রথম স্তর মুবারক এবং সর্বাধিক মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনারা, কারণ উনারা হচ্ছেন সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল।
এরপরেই হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম। অতঃপর হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং অতঃপর অন্যান্য আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
উনারা সকলেই উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক “মুত্বাহহার” ও “মুত্বাহহির” অর্থাৎ সৃষ্টিগতভাবেই পবিত্র এবং সাথে সাথে পবিত্রতাদানকারীও বটে। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।
সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে জান্নাতে একসাথে অবস্থান মুবারক করবেন। উনারা সকলেই সর্বো”” মর্যাদা-মর্তবার অধিকারিণী। সেজন্যই খ্বালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আহযাব শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا أنْ تَنْكِحُوْا أزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেয়ার অর্থাৎ বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তোমাদের কেউ বিবাহ করতে পারবে না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সুউচ্চ মর্যাদা, মর্তবা মুবারক সম্পর্কে এই একই পবিত্র সূরা শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ.
অর্থ: হে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য কোন নারীদের মত নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন কারো মত নন, একইভাবে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও সৃষ্টির কারো মত নন। সুবহানাল্লাহ!
বর্তমানে কিছু নামধারী তথাকথিত মুসলমান যেমন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করে থাকে, তেমন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরও শান মুবারক নিয়ে চূ-চেরা ক্বীল ও ক্বাল করে থাকে। উনাদের জীবনে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাবলীকে সাধারণ মানুষের মানদ-ে পরিমাপ করে থাকে, তাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عويـمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه وسلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجـمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী এবং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়বর্গ নিযুক্ত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত। আর মহান আল্লাহ পাক তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না। নাউযুবিল্লাহ! (তাবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, খ্বালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান মুবারককে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সকলের উপরে স্থান দিয়ে উনাদেরকে পৃথকভাবে আলাদা সম্মান দান করেছেন। উনাদের ব্যাপারে কোনরূপ চূ-চেরা করার কোন সুযোগ নেই।
সামগ্রিকভাবে সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সুমহান মর্যাদা এবং অনুপম বৈশিষ্ট্যের অধিকারিণী এবং সম্মানিতা। তবে উনাদের প্রত্যেকেরই পৃথকভাবে কিছু কিছু খাছ খাছ বৈশিষ্ট্য রয়েছেন। বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। তিনি বলতেন-
إنها إبنة أبيها
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম তিনি সত্যিই উনার পিতা উনার মেয়ে অর্থাৎ উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় তিনি ছিলেন দৃঢ়মনা এবং সংকল্পে অটল। সুবহানাল্লাহ!
একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফত মুবারক চলাকালীন রাতের বেলায় নগর পরিভ্রমণে বের হয়ে এক মহিলাকে করুণভাবে কাছীদা আবৃত্তি করতে শুনেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে? মহিলা বললো, কয়েক মাস থেকে আমার আহাল আমার থেকে দূরে রয়েছেন। উনাকে কাছে পাওয়ার অনুভূতি আমার মধ্যে তীব্র হয়ে উঠেছে।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললেন, আমি আপনার নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চাই। এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন। আমার জানার বিষয় হচ্ছে- মেয়েরা তাদের আহাল থেকে কতদিন দূরে থাকলে আহালকে কাছে পাওয়ার অনুভূতি তীব্র হয়ে উঠে। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি লজ্জায় মাথা নত করে ফেলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি বলুন! মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য প্রকাশের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি হাতের ইশারায় ৪ মাস বুঝিয়ে দেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ফরমান জারী করেন; কোন সৈনিককে যেন ৪ মাসের অধিক সময় আটকে রাখা না হয়। (কানযুল উম্মাল, হায়াতুছ ছাহাবা)
দ্বীনী বিষয়সমূহে যে উনার গভীর জ্ঞান ছিল, বিভিন্ন ঘটনা থেকে তা জানা যায়। ‘ইবনে মাজাহ শরীফ এবং ত্ববারনী শরীফ’ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَفْصَةَ قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ إِنِّي لأَرْجُو أَلاَّ يَدْخُلَ النَّارَ أَحَدٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا وَالْحُدَيْبِيَةَ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَلَيْسَ قَدْ قَالَ اللَّهُ وَإِنْ مِنْكُمْ إِلا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا قَالَ أَلَمْ تَسْمَعِيهِ يَقُولُ ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا.
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি এটা প্রত্যাশা করি যে, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি চান, তাহলে যে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বদর ও হুদায়বিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন, উনাদের কেউ জাহান্নামে যাবেন না। তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম বললেন, মহান আল্লাহ পাক তো ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا
“তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, সেখানে (জাহান্নামে) পৌঁছবে না। এটা আপনার রব তায়ালা উনার অনিবার্য ফায়ছালা মুবারক। ” (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭১)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন ইরশাদ মুবারক করেন: হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে এ কথাও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا
“অতঃপর আমি মুত্তাক্বী উনাদেরকে নাজাত দিবো এবং জালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিবো। ” (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭২)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মধ্যে ইলম সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ দেখে উনাকে বিভিন্ন বিষয়ে ইরশাদ মুবারক করতেন।
৩য় হিজরীর পবিত্র মাহে শা’বান শরীফ থেকে ১১ হিজরীর সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূর, শাহরুল আ’যম শরীফ পবিত্র মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস পর্যন্ত ৭ বছর ৭ মাস ৮ দিন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন এবং সরাসরি খিদমত মুবারকের আনজাম দিয়েছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক ও তত্ত্বাবধানে থেকে তিনি যেভাবে তা’লীম ও তরবিয়ত পেয়েছেন। পরবর্তীতে সুদীর্ঘকাল সেইভাবে উম্মতের তা’লীম ও তরবিয়তে তিনি ব্যাপৃত ছিলেন।
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর অর্থাৎ পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করার পর সমস্ত উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সমস্ত মহিলা জাতির শিক্ষা, দীক্ষা, দ্বীনী ইলম এবং হিদায়েতের কেন্দ্রস্থল ছিল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফসমূহ। এমনকি অন্যান্য মশহূর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও অনেক কঠিন মাসয়ালা সমাধান করার জন্য উনাদের খিদমত মুবারকে তাশরীফ আনতেন। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ বিশারদগণের মতে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার থেকে সংকলিত হাদীছ শরীফের সংখ্যা ৬০টি। তবে উনার মুবারক আচার, ব্যবহার, চাল-চলন সবই হাদীছ শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের অন্তর্ভুক্ত।
নারী ও পুরুষদের মধ্যে যাঁরা উনার নিকট থেকে হাদীছ শরীফ শুনেছেন এবং বর্ণনাও করেছেন, উনাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হামযা ইবনে আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাফিয়া বিনতে আবী উবায়দা রহমতুল্লাহি আলাইহা (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া), হযরত মুত্তালিব ইবনে আবী ওয়াদায়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত উম্মু মুবাশশির আল-আনছারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত আবদুর রহমান ইবনে হারিছ ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ছাফওয়ান ইবনে উমাইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ছাওয়া আল-খুযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হযরত আল-মুসাইয়্যিব ইবনে রাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল-মাজলায রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আরো অনেকে। (তাহযীবুত তাহযীব, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিফাজতকারী হিসাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে থাকাকালীন সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ কিতাব আকারে এককভাবে সংকলিত ছিলো না। প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথক পৃথকভাবে অনেকের নিকট অংশ বিশেষ লিখিত ছিল। তাছাড়া হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অনেকেই হাফেজে কুরআন ছিলেন বিধায় তখন কিতাব আকারে এককভাবে লিখিত সংকলনের প্রয়োজন উনারা বোধ করেননি।
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে ইয়ামামার জিহাদে যখন অনেক হাফেজে কুরআন শাহাদাতবরণ করেন, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শঙ্কিত হন এবং লিখিতভাবে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ এককভাবে সংকলন করে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনিসহ বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং হাফেজে কুরআনগণ সমভিব্যাহারে উনাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি সংকলন প্রস্তুত করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে এই পবিত্র সংকলনটি খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত থাকে। অতঃপর উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পর তা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট পৌঁছে।
উল্লেখ্য যে, এই সংকলনটি পবিত্র কুরআন শরীফ কুরাইশ ভাষায় যেভাবে নাযিল হয়েছিল ঠিক সেভাবে সংকলিত হয়েছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পর যখন তা বিভিন্ন গোত্রে পৌঁছে তখন কুরাইশ ভাষায় উচ্চারণ পদ্ধতি বিভিন্ন স্থানীয় লোকদের অনেকের নিকট কঠিন বোধ হয়, কারণ সকল গোত্রের ভাষা বিশুদ্ধ কুরাইশ ভাষার উচ্চারণ পদ্ধতি অনুযায়ী ছিল না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাধারণ লোকদের সুবিধার জন্য সাময়িকভাবে বিভিন্ন গোত্রীয় উচ্চারণ পদ্ধতিতে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠের অনুমতি দিয়েছিলেন। আমিরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে যখন ইসলামী রাষ্ট্র বিশাল আকারে সম্প্রসারিত হয়, তখন বিভিন্ন স্থানে কুরআন শরীফ পাঠের পদ্ধতিতে প্রচুর তারতম্য দেখা দেয়।
পরিশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজ্মা অর্থাৎ সম্মিলিত অভিমত অনুযায়ী শুধু কুরাইশ ভাষায় নাযিলকৃত পাঠ পদ্ধতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অতঃপর কুরাইশ ভাষার উচ্চারণ পদ্ধতিতে যে বিশুদ্ধ সংকলনটি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত ছিল, তা তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট অর্পণ করেন। অতঃপর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই সংকলনটিই মূল কপি’ হিসাবে গৃহীত হয় এবং সর্বত্র প্রচারিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে তিনি উনার ভাই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ মুবারক করেন, যেন উনার সমস্ত অর্থ সম্পদ গরীব-দুঃখী, অসহায়, ইয়াতীমদের মধ্যে দান করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে উনার নির্দেশ মুবারক কার্যকর করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে এবং পরবর্তী জীবনে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি প্রচুর ইবাদত-বন্দেগী করতেন। সবসময় রোযা রাখতেন এবং প্রতিনিয়তই রাত জেগে নামায আদায় করতেন। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি অতি মাত্রায় রোযা পালনকারিণী এবং রাতের বেলায় খুব বেশী ইবাদতকারিণী। (তাবাকাত)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন একজন সৎকর্মশীলা নারী। (আনসাবুল আশরাফ)
উনার সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি রোযা অবস্থায় বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত)
(সূত্রসমূহ: ইবনে সা’দ, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, উসুদুল গাবা, ইছাবা, হায়াতুছ ছাহাবা, আল-আ’লাম, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস্ সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল খ্বামিসাহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানিহ উমরী মুবারক
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার জীবনী মুবারক
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মালিকাতুল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র জীবনী মুবারক
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মালিকাতুল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র জীবনী মুবারক
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সীরত মুবারক
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সীরত মুবারক
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সীরত মুবারক
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (৩)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (২)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (১)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)