সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ১৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৬ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পূর্বে নাম মুবারক ছিল হযরত র্বারা আলাইহাস সালাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম তিনি এই নাম মুবারক পরিবর্তন করে হযরত জুওয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম রাখেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতা হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের সাইয়্যিদ। পরবর্তীতে তিনি একজন ছাহাবী হন। উনার নসবনামা মুবারক এইরূপ: হযরত জুওয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম বিনতে হযরত হারিছ ইবনে আবী দ্বিরার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। বনু মুস্তালিক গোত্র খুযা‘য়া গোত্রের শাখা। উনারা ছিলেন আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত নাছারা সম্প্রদায়ের লোক। খুযায়া গোত্রের অবস্থান পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাছাকাছি হওয়ার কারণে উনারা কুরাইশ গোত্রের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ২ বছর পূর্বে পবিত্র ১৩ই যিলক্বদ শরীফ ইয়াওমুল খ্বমীস (বৃহস্পতিবার) পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (দৈনিক আলইহসান শরীফ)
প্রথম শাদী মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার অল্প বয়স মুবারকে প্রথম শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয় উনার চাচাতো ভাই মুসাফি’ ইবনে ছাফওয়ান আল-মুস্তালাকীর সাথে। মুসাফি’ ইবনে ছাফওয়ান বনু মুস্তালিক জিহাদে নিহত হয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ:
এ বিষয়ে সীরাত গ্রন্থসমূহে কয়েকটি বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। এক বর্ণনা মতে, হিজরী ৫ম সনে অনুষ্ঠিত বনু মুস্তালিক জিহাদে তাদের পরাজয়ের পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বনু মুস্তালিক গোত্রের গণিমত মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ সমাপ্ত করেন।
জিহাদের নিয়ম অনুযায়ী পরাজিত অঞ্চলের পুরুষদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসাবে একত্রিত করা হতো এবং মহিলাগণকেও পৃথকভাবে যুদ্ধবন্দিনী হিসাবে একত্রিত করা হতো। শরয়ী বিধান অনুযায়ী বনু মুস্তালিক গোত্রের মহিলাগণকেও একত্রিত করে মুসলমানদের জিম্মায় রাখা হয়।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ছাবিত বিন কায়েস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিম্মায় পড়েন। তিনি হযরত ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে এই মর্মে মুকাতাবা চুক্তি করেন যে, তিনি মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হবেন।
অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এসে বললেন, আমি বনু মুস্তালিক গোত্রের সাইয়্যিদ হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মেয়ে। আমি এখন এমন অবস্থায় রয়েছি যে, আপনি ছাড়া কেউ দূর করতে পারবে না। আমি মুক্ত হওয়ার শর্তে মুক্তিপণ দিব বলে মুকাতাবা চুক্তি করেছি। আমার এ চুক্তিতে আমাকে আপনি মদদ করুন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটা কি ভাল হয় না যে আমি আপনার মুক্তিপণ দিয়ে দিব এবং আমার সাথে আপনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে? সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, এটা খুবই ভাল হবে।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা, উসুদুল গাবা)
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাজ মুবারক, কথা মুবারক এবং সম্মতি মুবারক প্রকাশ সবই ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- যে, ওহী মুবারক দ্বারা নির্দেশিত হওয়া ব্যতিত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন নিসবাতুল আযীমাহ শরীফই অনুষ্ঠিত হয়নি। সুবহানাল্লাহ!
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতা হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন আরবের একজন অন্যতম নেতা। মুসলিম বাহিনীর হাতে উনার মেয়ে বন্দী হলে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, আমার মেয়ে বন্দিনী হিসেবে থাকতে পারেন না। আমার মর্যাদা গোলামীর অনেক উর্ধ্বে। আপনি আমার মেয়েকে মুক্ত করে দিন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বিষয়টি আপনার মেয়ের মর্জির উপর ছেড়ে দেয়া হোক। হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার মর্জির উপর আপনাকে ছেড়ে দিয়েছেন। দেখুন, আপনি যেন আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার পিতাকে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছেই থাকতে পছন্দ করছি।
অতঃপর, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা, তাবাক্বাত)
হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাবাক্বাত কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতাই উনার মুক্তিপণ পরিশোধ করেন। যখন তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়ে যান, তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মতিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হিজরী ৫ম সনের ২৮শে যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল ইহসান শরীফ)
হযরত ইবনুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অনেকে ঘটনাটি এভাবেও বর্ণনা করেছেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে অবস্থান মুবারক করা শুরু করেছেন, কিন্তু উনার পিতা হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা জানতেন না। তিনি মেয়েকে মুক্ত করার জন্য অনেক গুলি উটের উপর মুক্তিপণের অর্থ সম্পদ বোঝাই করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে রওয়ানা হন। পথে আকীক উপত্যকায় পৌঁছে উটগুলি চরানোর জন্য লাগামমুক্ত করে দেন। সেই উটগুলির মধ্যে দু’টি উট ছিল উনার অতি প্রিয়। এ কারণে তিনি উট দু’টি একটি গোপন স্থানে বেঁধে রাখেন। এরপর তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে এসে আরজ করেন, আমি আমার মেয়ের মুক্তিপণ নিয়ে এসেছি, এই নিন মুক্তিপণ এবং উনাকে আমার সাথে যাওয়ার অনুমতি দিন। তারপর তিনি যে অর্থ-সম্পদ, উট ইত্যাদি নিয়ে এসেছিলেন, এক এক করে সবই উপস্থাপন করতে লাগলেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, সেই উট দু’টি কোথায়, যাদেরকে আকীক উপত্যকায় লুকিয়ে রেখে এসেছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই ইলমে গ¦ইব মুবারকের এ বিষয়টি দেখে হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দারুণ বিস্মিত হলেন। তিনি সাথে সাথে কালিমা শরীফ পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি জানতে পারলেন যে, যাঁকে মুক্ত করতে তিনি ছুটে এসেছেন, তিনি এতদিনে আহলে বাইত শরীফ হিসেবে বসবাস করছেন। তিনি মেয়ের এমন সৌভাগ্যে দারুণ পুলকিত হন এবং অত্যন্ত আনন্দের সাথে মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। (উসুদুল গাবা, যারক্বানী)
হযরত আল-ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ আনয়নের তিন দিন পূর্বে আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন ইয়াছরিব অর্থাৎ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিক থেকে চাঁদ ছুটে এসে আমার কোল মুবারকে পড়লেন। কোন মানুষকে এ কথা বলা আমি ভাল মনে করিনি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক আনয়ন করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে তাশরীফ মুবারক আনয়ন করেছেন, সে কথা আমার এক চাচাতো বোন আমাকে না বলা পর্যন্ত আমার কিছুই জানা ছিল না। বনু মুস্তালিক জিহাদে পরাজয়ের পর আমি যখন মুসলমানদের জিম্মায় আসলাম, তখন আমার দেখা স্বপ্নের বাস্তব রূপ লাভের আশা পোষণ করলাম। আমি আমার এ স্বপ্নের কথা আমার গোত্রের কাউকে বলিনি। অতঃপর যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, আমি খ্বালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করলাম এবং শুকরিয়া আদায় করলাম। (যারক্বানী)
বনু মুস্তালিক গোত্রের যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধবন্দীনীদের মুক্তি:
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন শুনলেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তখন উনারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানার্থে বনু মুস্তালিক গোত্রের সমস্ত যুদ্ধবন্দী ও বন্দিনীদেরকে বিনা পণে মুক্ত করে দেন। উনাদের এক শত পরিবারের লোক সংখ্যা ছিলেন প্রায় সাত শত। (আছাহহুস সিয়ার)
এজন্য বলা হতো, কোন মহিলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার মত নিজের গোত্রের জন্য এতটা সৌভাগ্য আনয়ন করতে পারেনি। (উসুদুল গাবা)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ২০ বছর ১ মাস ১৫ দিন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককালে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার জন্য বাৎসরিক ভাতা ৬ হাজার দিরহাম নির্ধারিত ছিল। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত মুবারককালে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি হিজরী ৫০ সনের সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ১৭ তারিখ ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! জান্নাতুল বাকীতে উনার পবিত্র রওজা শরীফ স্থাপন করা হয়। (দৈনিক আল ইহসান শরীফ, যারক্বানী, আছাহহুস সিয়ার)
ফযীলত ও মর্যাদা:
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে। তদুপরি উনাদের প্রত্যেকের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণাবলী রয়েছেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত ইবাদত গুজার ছিলেন। তিনি খুব বেশী নফল নামায পড়তেন। একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট এসে দেখেন তিনি নামায পড়ছেন। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন। দ্বিপ্রহরে পূনরায় তিনি দেখেন তখনও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি নামায পড়ছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি অনবরত নামায পড়ছেন? তিনি উত্তরে বললেন, জী। তা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশী হয়ে উনাকে কিছু বিশেষ ধরণের নামায শিক্ষা দিলেন, যার ছওয়াব সাধারণ নফল নামায অপেক্ষা অনেক বেশী। (উসুদুল গাবা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি বেশী বেশী নফল রোযাও রাখতেন, বিশেষত: জুমুয়াবারে তিনি রোযা রাখতেন। (ইবনে সা’দ)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকে সাতটি হাদীছ শরীফ সংকলিত হয়েছে। ইহা মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা। প্রকৃতপক্ষে সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ অনুসারী। কাজেই উনাদের মুবারক কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচার ব্যবহার সবই হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি প্রায় ৪৫ বছর উম্মতের হিদায়েতের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ !
সূত্র: দৈনিক আল ইহসান শরীফ, উসদুল গাবা, ইছাবা, যারক্বানী, আছাহহুস সিয়ার।
-সাঈদ আহমদ গজনভী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (৩)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (২)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (১)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার জীবনী মুবারক
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদী বা হিদায়াতদানকারী (২)
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদী বা হিদায়াতদানকারী (১)
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন ঘুম বা বিশ্রামের জন্য সুন্নতী চকি
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)