সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
, ০১ লা জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ০৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত আবু তালহা ইবনে সাহল আল আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত বীরত্বের অবিস্মরণীয় মেছাল
মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত একনিষ্ঠ প্রিয় ছাহাবী উনাদের অন্যতম হলেন হযরত আবু তালহা ইবনে সাহল আল আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। জীবন বাজী রেখে তিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি জিহাদেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুব নিকট থেকে কাফির-মুশরিকদের সাথে মরণপন লড়াই করেছেন।
বিশেষ করে তিনি ঐতিহাসিক উহুদের জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইশক-মুহব্বতের যে ঈমানদীপ্ত নযরানা পেশ করেছেন তা সত্যিই বেমেছাল। এই যুদ্ধে তিনি ছিলেন মুজাহিদ তীরন্দায বাহিনীর অন্যতম সদস্য। প্রচ- যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুজাহিদ বাহিনী বিভিন্ন দিকে সাময়িক বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়লে তখন হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ মুষ্টিমেয় কিছু ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম নিজেদের জীবন বাজী রেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেষ্টন করে কাফির-মুশরিকদের আক্রমন প্রতিহত করছিলেন।
এক পর্যায়ে হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঢাল হাতে নিয়ে সীনা টান করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে দ-ায়মান হয়ে মুশরিক বাহিনীর দিকে মুহুর্মুহু তীর নিক্ষেপ করছিলেন। বিরতিহীনভাবে তিনি এত বেশি জোরে তীর নিক্ষেপ করছিলেন যে, কাফিরদের শরীরে তা সমূলে বিদ্ধ হয়ে তাদেরকে ঝাঝড়া করে দিচ্ছিল। এ সময় প্রতিটি তীর নিক্ষেপের পরপরই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় নূরুল হুদা মুবারক (মাথা মুবারক) উত্তোলন করে দেখতেন তীরগুলো কাফির-মুশরিকদের জায়গামত বিদ্ধ করছে কি-না।
এ অবস্থায় মুশরিক বাহিনীর কোন তীর এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কষ্টের কারণ হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল ইলিম মুবারক বা বক্ষ মুবারকে হাত রেখে বলছিলেন- ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দয়া করে জমীনে বসে পড়–ন। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। অবশ্যই আপনার জিসিম মুবারকে কোন তীর বিদ্ধ হতে পারবে না। আপনার নূরুল ইলিম মুবারক বা বক্ষ মুবারকের সম্মুখেই তো ঢাল স্বরূপ আমার বক্ষ রেখেছি। বিদ্ধ হলে আগে আমার বক্ষে বিদ্ধ হবে। আপনি শুধু নির্দেশনা দান করুন। ’
এ সময় তিনি ইশকে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে কাছীদা শরীফ আবৃত্তি করতে করতে তীর নিক্ষেপ করছিলেন এবং একের পর এক কাফির ধরাশায়ী করছিলেন। তিনি বারবার যে কাছীদা শরীফটি পাঠ করছিলেন সেটি ছিল এই- ‘রসূল পাক উনার তরে/মরণপণ লড়াই করে/যাই যদি মরে/দুঃখ থাকবে না অন্তরে। নূরানী চেহারা মুবারকের তরে আমার মুখখানি নিলাম ঢাল করে। ’ সুবহানাল্লাহ!
সেদিন তিনি এমন ঈমানদীপ্ত বীরত্বের সাথে লড়াই করেন যে, এক এক করে উনার তিনটি ধনুক ভেঙে পড়ে। বিরামহীন আক্রমণের প্রচ-তায় এক পর্যায়ে উনার দুই হাতই অবশ হয়ে যায়- এতে একটিবারের জন্যও তিনি ‘উহ’ শব্দ বলে আওয়াজ করেননি।
কারণ ঐ মুহূর্তে উনার ধ্যানে খেয়ালে একটি চিন্তাই কাজ করছিল আর সেটা হলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে গোলামীর আঞ্জাম সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি-না। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
ঈমানদীপ্ত বীর ছাহাবী হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিও ছিলেন ইশকে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রঙ্গে রঞ্জিত।
যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের শর্তকে মোহর ধার্য করেই হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
উনার সন্তান হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একান্ত একনিষ্ঠ বিশ্বস্ত খাদিম হিসেবে কবুল করে নেন। সুবহানাল্লাহ!
মূলতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আনুগত্য-মুহব্বত করার অনুপম দৃষ্টান্ত হলেন হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার পরিবার পরিজন।
উনাদের ঈমানদীপ্ত ইশক-মুহব্বত, বীরত্ব-খিদমত থেকে দীক্ষা নিয়ে বর্তমান যামানায় মুসলিম উম্মাহ্র উচিত; মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ও সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ উনাদের গোলামীতে মশগুল হওয়া। এতেই মিলবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চিরস্থায়ী রেজামন্দি-সন্তুষ্টি। যে রেজামন্দী সন্তুষ্টি লাভের অবিস্মরণীয় মেছাল রেখে গেছেন হযরত আবু তালহা ইবনে সাহল আল আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার পরিবার-পরিজন। সুবহানাল্লাহ! (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)