চেপে থাকা ইতিহাস:
সতীদাহ প্রথা নির্মূলে মুসলিমরাই প্রথম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, রামমোহন নয়
, ১৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২২ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২০ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস
সনাতন সমাজে সব চেয়ে খারাপ এবং বর্বর প্রথা হিসেবে গণ্য হয়েছে সতীদাহ প্রথা। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জোর পূর্বক স্বামীর সাথে চিতায় ভস্ম করা ছিল এই প্রথা।
ব্রাহ্মণদের হাত ধরেই এ প্রথা এসেছে। কারণ ব্রাহ্মণরাই তাদের রীতি ও নীতি নির্দেশক। তবে ব্রাহ্মণদের সাথে পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয়ও জড়িত আছে বলে অনেক ইতিহাসবিদ মতামত ব্যক্ত করেছে- তা না হলে হঠাত করে কেন এ প্রথা প্রকটভাবে চলে আসবে। ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় পরাজিত হওয়ার পর অন্তপুরের নারীরা শত্রুর হাতে নির্যাতিত হওয়ার চেয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণকে বেছে নিত। এ ধরণের আত্মাহুতিকে জহর বলা হত।
সতীদাহ প্রথা বন্ধে ভারতীয় মুসলিমদের অবদানকে শুধু মুছেই ফেলার চেষ্টা করা হয়নি, রীতিমতো তা অস্বীকার করে উল্টোদিকে সতীদাহের দায় মুসলিমদের ঘাড়েই চাপিয়ে দেয়ার হীন চেষ্টা করা হয়েছে!
গুপ্ত সম্রাজ্যের (খৃষ্টাব্দ ৪০০) আগে থেকেই ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। প্রাচীন সতীদাহ প্রথার উদাহারণ পাওয়া যায় অন্তর্লিখিত স্মারক পাথরগুলিতে। সবচেয়ে প্রাচীন স্মারক পাথর পাওয়া যায় ভারতের মধ্য প্রদেশে, কিন্তু সব থেকে বড় আকারের সংগ্রহ পাওয়া যায় ভারতের রাজস্থানে। এই স্মারক পাথরগুলিকে সতী স্মারক পাথর বলা হতো যেগুলো পূজা করার বস্তু ছিল।
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক লেখকের অনেক ধরণের বক্তব্য আছে। কাজেই সতীদাহ প্রথাকে ভারতবর্ষে মুসলিম বা ইসলামের আগমনের সাথে মিলিয়ে ফেলা অসৎ উদ্দেশ্য ও ডাহা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। সতীদাহ প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিম শাসশন আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন-
১. সতীদাহ প্রথা বন্ধের প্রথম সরকারি প্রচেষ্টা মুসলিমরা করেছিলেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক সর্বপ্রথম এই প্রথা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। [L. C. Nand, Women in Delhi Sultanate, Vohra Publishers and Distributors Allahabad 1989]
২. মুঘল সম্রাটদের মধ্যে যারা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে হুমায়ূন স্থানীয় হিন্দুদের প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন। [Central Sati Act- An analysis by Maja Daruwala is an advocate practising in the Delhi High Court. Courtsy: The Lawyers January 1988. The web site is called ÒPeopleÕs Union for Civil LibertiesÓ]
৩. অনেক সময় মুঘল শাসন থেকে বিধবা মহিলাদের পেনশন বা উপহার দেয়া হতো সতীদাহ না করার জন্য। [উপরের সূত্র দ্রষ্টব্য]
৪. শিশুদের এই প্রথা থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। সম্রাট শাহজাহানের সময় নিয়ম ছিল কোনো অবস্থাতেই যেসব মহিলাদের সন্তান আছে তাদের দাহ হতে দেয়া হবে না। [ÒEconomic and Social Developments under the MughalsÓ from Muslim Civili“ation in India by S. M. Ikram edited by Ainslie T. Embree Nwe York: Columbia University Press, 1964. This page maintained by Prof. Frances Pritchett, Columbia University]
৫. সব থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয় সম্রাট আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়। ১৬৬৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রুল জারি করেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে মুঘল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত দেশের কোথাও সতীদাহ ঘটতে সরকারি অনুমতি দেয়া হবে না। ইউরোপীয় পর্যটকদের বর্ণনা অনুযায়ী সম্রাট আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শাসনামলের শেষের দিকে সতীদাহ প্রথা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শুধু হিন্দু শাসকদের স্ত্রীরা ব্যতীত। [ÒEconomic and Social Developments under the MughalsÓ from Muslim Civili“ation in India by S. M. Ikram edited by Ainslie T. Embree Nwe York: Columbia University Press, 1964. This page maintained by Prof. Frances Pritchett, Columbia University]
ইসলাম উনার বিভিন্ন শিক্ষা নিয়ে হিন্দু ধর্মের সংস্কারে সৃষ্টি হয় শিখ ধর্ম যাতে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ। তার মানে ভারতে সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের প্রথম অমুসলিম ভারতীয় পদক্ষেপটিও আসে ইসলাম উনার প্রভাবেই।
বাস্তবতা হচ্ছে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম বারের মতো পদক্ষেপ নেন সুলতান মুহাম্মদ তুঘলক। এরপর একে একে শাসক হুমায়ূন, আকবর, শাহজাহান, ও আওরঙ্গজেব সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেন।
অতএব, হিন্দু সমাজের এই বর্বর ও অমানবিক প্রথা উচ্ছেদে মুসলিমদের অবদানকে যারা পরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলে উল্টোদিকে মুসলিমদের উপরই এর দায় চাপাতে চায় তাদের উচিত সঠিক ইতিহাসের দিকে পুনরায় ফিরে তাকানো। তাহলেই তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, সতীদাহ প্রথা প্রচলনের সাথে মুসলিমদের কোনো রকম সম্পর্ক তো নেই-ই বরং এই প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের অবদান অনস্বীকার্য।
-মুহম্মদ আসাদুল্লাহ ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)