শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যাত পাক (পবিত্র সত্ত্বা) উনার সাথে অথবা মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফাত বা গুনাবলীর কোনটির মধ্যে উনার মতো অপর কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে অংশীদার সাব্যস্ত করার নাম শিরক। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার যাত পাক ও ছিফাত সমূহের মধ্যে কাউকে শরীক করে তাকে মুশরিক বলে।
মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া অসীম। তিনি ইচ্ছা করলে বান্দার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু শিরক এমনই মারাত্মক গুনাহ বা অপরাধ যে, তিনি কিছুতেই শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পরিস্কারভাবে ঘোষণা করা হয়েছে-
إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সাথে শরীক করার গুনাহ অর্থাৎ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। এতদভিন্ন আর সমস্ত গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৬)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
অর্থ: নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শিরক করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর জাহান্নামই তার বাসস্থান। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং৭২)
শিরক দুই প্রকার। (এক) শিরকে জলী। জলী অর্থ প্রকাশ্য বা সরাসরি। অর্থাৎ সূর্য, আগুন, মূর্তি বা দেব-দেবী ইত্যাদির কোন কিছুকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে মা’বুদ সাব্যস্ত করার নাম শিরকে জলী। এই প্রকারের শিরক চির অমার্জনীয়। এমনকি এই প্রকার শিরক অনুষ্ঠানকারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরকালীন কল্যাণের জন্য দুআ করা পর্যন্ত নিষেধ।
যেমন এ মর্মে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
অর্থ: মুশরিকদের জাহান্নামী হওয়ার বিষয় পরিষ্কাররূপে জানা সত্বে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা কোন নবী আলাইহিস সালাম উনার পক্ষে কিংবা ঈমানদারগণ উনাদের পক্ষে কিছুতেই উচিত নয় যদিও তারা ঘণিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৩)
(দুই) শিরকে খফী। খফী শব্দের অর্থ গোপন বা অপ্রকাশ্য। এই প্রকার শিরক মু’মিন মুসলমান নিজেদের অজ্ঞতার কারণে ও অজান্তে করে থাকে। এটা অতি সূক্ষ্ম বিষয়। যার কারণে সাধারণ মু’মিন মুসলমানদের পক্ষে এটা উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না বলে অনেকেই এই অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকে। যেমন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনেক লোক ঈমান এনে থাকে এবং তারা শিরকও করে থাকে। ” নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১০৬)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাৎপর্য হচ্ছে, মু’মিনগণ অন্তরে বা আন্তরীকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে একমাত্র মা’বুদ বলে বিশ্বাস করে সত্যই, কিন্তু গুপ্ত বা সুক্ষ্মভাবে শিরকও করে থাকে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلشِّرْكُ فِي أُمَّتِي أَخْفٰى مِنْ دَبِيبِ الذَّرِّ عَلَى الصَّفَا
অর্থ: আমার উম্মতের মধ্যে শিরক হচ্ছে পাহাড়ের বুকে চলন্ত পিপিলিকার পায়ের শব্দ হতেও অধিকতর সূক্ষ্ম । (জামে’ ছগীর)
মোটকথা, কোন লোক নেক কাজ করতে যেয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিল ব্যতীত অন্য কোন পার্থিব উদ্দেশ্য রাখলে তা শিরকে খফীর পর্যায়ভুক্ত হয়ে পড়ে। যেমন কোন লোক নামায পড়লো লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। সে নামায পড়লো মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে কিন্তু নিয়ত করলো লোক দেখানোর। নাউযুবিল্লাহ! এভাবে সে অতি সূক্ষ্মভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অপরকে শরীক করে ফেললো। কোন ঈমানদার ব্যক্তি ঔষধ সেবন করে রোগ হতে আরোগ্য লাভের জন্য; কিন্তু সেই ঔষধকেই আরোগ্যদাতা মনে করলো। এতেও সে শিরকে খফীর অপরাধ করলো।
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কারো কাছে সাহায্য পাওয়ার আশায় বলে, উপরে আল্লাহ নীচে আপনি ছাড়া আমার সাহায্যকারী কেউ নেই। অথবা বলে, আগে আল্লাহ পাক পরে আপনি অথচ এ ধরনের কথা শিরকে খফীর অন্তর্ভুক্ত।
মুসলিম সৈন্যদল জিহাদে বিজয় লাভ করে যদি মনে করে যে, সৈন্যসংখ্যার আধিক্য ও অস্ত্রবলের কারণেই জিহাদে বিজয় লাভ করেছি, তবে সেটাও শিরকে খফীর অন্তর্ভুক্ত হবে।
কোন উপার্জনকারী যদি মনে করে জীবিকা তার স্বহস্তে উপার্জিত এবং তাতে মহান আল্লাহ পাক উনার কোন দান নেই, তবে সেও শিরকে খফীর অপরাধে অপরাধী। এরূপ আরো শত-সহ¯্র বিষয় মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের মধ্যে প্রকাশ পায়, যা শিরকে খফীর অন্তর্ভুক্ত। এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
উল্লেখ্য, শিরকে খফীর ফলে ঈমান আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে অন্তর হতে ঈমানের নূর মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ কারণেই প্রত্যেক মু’মিন মুসলমান পুরুষ মহিলার জন্য ফরয হচ্ছে, রিয়াসহ অন্তরের যাবতীয় বদখাছলত দূরীভূত করে অন্তরে ইখলাছ পয়দা করা এবং এজন্য একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা। কেননা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ক্বলবী যিকির না করা পর্যন্ত কখনোই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে না, রিয়া বা লোক দেখানো মনোভাবসহ অন্যান্য বদখাছলত দূরীভূত হবে না এবং ইখলাছও হাছিল হবেনা। ফলে শিরকে খফী হতে বেঁচে থাকাও সম্ভব হবে না এবং নাজাতও পাওয়া যাবে না।
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৫৭তম সংখ্যা থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইন
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের তৃতীয় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জমিনে ফিতনা-ফাসাদের বড় একটা কারণ বেপর্দা-বেহায়া নারী
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (১)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৭)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়বদ্ধতা
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মাহরাম ও গায়রে মাহরাম বিষয়ক বর্ণনা
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তানকে দুনিয়াদার নয় আল্লাহওয়ালা হওয়ার শিক্ষা প্রদান করতে হবে
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শীতে ত্বকের যত্ন নিতে যা খাবেন
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)