বরকতময় ঐতিহাসিক দিবস আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ
, ২৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২০ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ মুবারক দিবস সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, পবিত্র ১১ হিজরী সনের পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ যিয়ারত করার বিষয়ে ওহী মুবারক করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জান্নাতুল বাক্বী শরীফ যিয়ারত মুবারক করেন এবং যিয়ারত মুবারক শেষে উনার ছের মুবারকে (সম্মানিত মাথা মুবারক) মারীদ্বী শান (ব্যথা) মুবারক জাহির করেন। এর ৮/১০ দিন পর তিনি আবার ছিহ্হাতী (স্বাভাবিক) শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর ছফর শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি জান্নাতুল বাক্বী শরীফ যিয়ারত মুবারক করার বিষয়ে ওহী মুবারক করেন। অতঃপর তিনি জান্নাতুল বাক্বী শরীফ যিয়ারত মুবারক করেন। যিয়ারত মুবারক শেষে তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মাঝে তাশরীফ মুবারক রাখেন এবং তিনি ‘ওয়াহ র’সাহু’ ‘ওয়াহ র’সাহু’ অর্থাৎ আমার ছের মুবারক, ছের মুবারক- একথা বলে উনার ছের মুবারক উনার মারীদ্বী শান মুবারক উনার কথা উল্লেখ করেন এবং পর্যায়ক্রমে মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ পেতে থাকে।
অতঃপর এই পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার ৩০ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) দিন সকালে তিনি ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। ফলে ভোর বেলা ঘুম মুবারক থেকে জেগে তিনি বললেন, ‘আমার নিকট কে আছেন?’ এ কথা শুনামাত্রই উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ছুটে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি হাজির আছি। ’ তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! মারীদ্বী শান মুবারক ত্যাগ করে ছিহহাতী শান মুবারক গ্রহন করার ফলে পবিত্র জিসিম মুবারক বেশ হালকা মনে হচ্ছে। ’ সুবহানাল্লাহ! এ কথা শুনে উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাড়াতাড়ি পানি এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছের মুবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত জিসিম মুবারক উনার মধ্যে পানি মুবারক ঢেলে ভালোভাবে গোসল মুবারক করিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এ সংবাদ পেয়ে অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও খিদমত মুবারকে হাজির হলেন।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! ঘরে কোনো খাবার আছে কি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘জ্বী-হ্যাঁ। ’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আমার জন্য তা নিয়ে আসুন আর আমার হযরত আওলাদ শরীফ অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুন নিসা আন নূরুর রাবি’য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাদেরকেসহ অন্যান্য হযরত নাওয়াসা ও হযরত নাওয়াসী আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও নিয়ে আসতে বলুন। উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সকলকে সংবাদ দিলেন। অতঃপর সাইয়্যিদাতুন নিসা আন নূরুর রাবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং অন্যান্য হযরত নাওয়াসা ও হযরত নাওয়াসী আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এসে হাজির হলেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর রুটি-গোশত ও সিরকা মুবারক তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ পরিবেশন করা হলো। তিনি সকলকে নিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে খুশি প্রকাশ করলেন। সংবাদ শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও বাইরে এসে হাজির হন। কিছুক্ষণ পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইরে এসে উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আমার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে?’ এ কথা শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ব্যাকুলচিত্তে কান্না শুরু করলেন। উনাদের এ অবস্থা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্ত¡না দান করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন মারীদ্বী শান মুবারকে থাকার পর ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করে মসজিদে নববী শরীফ তাশরীফ মুবারক নেন এবং নামাযের ইমামতী করেন- এই অপার আনন্দে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকে হাদিয়া মুবারক পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত রয়েছে যে, খুশি হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ৭ হাজার দীনার, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ৫ হাজার দীনার, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ১০ হাজার দীনার, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ৩ হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একশত উট ও একশত ঘোড়া হাদিয়া মুবারক করতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
আর একারণেই আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
মূলকথা হলো- পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া শরীফ (বুধবার); যা কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য এক সুমহান ঈদ বা খুশির দিন। এ উপলক্ষে সকলের জন্য আবশ্যক হচ্ছে- এই মুবারক দিনে খুশি প্রকাশ করে সাধ্যমতো হাদিয়া পেশ করা, গোসল করা, ভালো খাওয়া, অধিক পরিমাণে মীলাদ শরীফ, দুরূদ শরীফ পাঠ করা। এর সাথে সাথে দান-ছদক্বাও করা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)