বঙ্গবাজার: ক্ষতির আড়ালে দায় লুকিয়েছে সবাই
, ১৩ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৪ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৪ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২১ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) তাজা খবর
প্রায় এক মাস হতে চললো আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বঙ্গবাজার। নানা আশ্বাসেও দুশ্চিন্তা কাটছে না ব্যবসায়ীদের। সুনির্দিষ্টভাবে কারও থেকে পাওয়া যাচ্ছে না নতুন করে আবারও ব্যবসা করার নিশ্চয়তা। এখন পর্যন্ত এই দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছেন না ব্যবসায়ী, দোকান মালিক সমিতি বা সিটি করপোরেশনের কেউই।
অথচ সবার সমন্বয়েই বঙ্গবাজারে এতদিন ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল ব্যবসায়িক কর্মকা-। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছিলেন সংশ্লিষ্ট সবাই। তবে এখন অগ্নিকা-ের পর বড় করে দেখা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি। এর আড়ালে ঢাকা পড়ছে মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক না হওয়া, অবহেলা, গাফিলতি ও সবকিছুর ওপরে মুনাফা লোটার মানসিকতা।
যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে বঙ্গবাজার:
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ১৯৮৮ গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার ও সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট ভেঙে নতুন মার্কেট তৈরি করা হয়। সেসময় ওই স্থানের ব্যবসায়ীদের বর্তমান বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে দোকান করে দেওয়া হয়। পরে তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকা সিটির মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ২০ হাজার টাকার পে অর্ডারের বিনিময়ে দোকানিদের স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিলে ব্যবসায়ীরা সেখানে কাপড়ের মার্কেট গড়ে তোলেন।
১৯৯৫ সালে এখানে প্রথমবারের মতো আগুন লেগে সব কিছু পুড়ে যায়। তখন ওই স্থানে চারটি হকার্স মার্কেটে ৫২৫টি দোকান ছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ওই অগ্নিকা-ে সব কিছু পুড়ে নিঃশেষ হওয়ার পর মার্কেট সমিতি ও অন্যদের সহায়তায় আবারও লোহার পাত ও কাঠ দিয়ে বঙ্গবাজার মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়। তবে অভিযোগ আছে দোতলার অবকাঠামোয় তিন তলা বানানো হয় পরবর্তীতে। এতে ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এছাড়া লোহার পাত ও কাঠ দিয়ে তৈরি মার্কেটটি নিরাপদ কোনও অবকাঠামোয় তৈরি না হওয়ায় বৈদ্যুতিক লাইনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছিল। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় আরও বেশি ঝুঁকিতে ছিল মার্কেটটি। এই তথ্যগুলো জানিয়ে ব্যবসায়ী এবং মার্কেট কমিটিকে সতর্ক করে আসছিল ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
এর পর কয়েক দফায় সিটি করপোরেশন থেকে এখানে পাকা ভবন বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সাবেক মেয়র সাইদ খোকন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া বাবদ জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এক লাখ করে টাকা নেন। পরে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিলে বঙ্গবাজারের দোকান মালিকদের কিছু দাবি দাওয়ার সমাধান না হওয়ায় তারা নতুন ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেয়। এতে করে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। ফলে বঙ্গবাজার মার্কেটি ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে যায়। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লেগে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় মার্কেটি।
ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও নিয়মিত খাজনা নিতো সিটি করপোরেশন:
বঙ্গবাজার মার্কেট থেকে নিয়মিত দোকানের স্কয়ার ফিট অনুযায়ী খাজনা তুলতো দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ২০২২-২৩ এর অগ্রিম খাজনাও নিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু মার্কেটটি ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য দোকান মালিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ভবন তৈরির বিষয়ে কোনও আন্তরিকতা ছিল না সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষেরÍ এমটাই অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। ফলে অগ্নিকা-কে তাদের উচ্ছেদ করার অজুহাত হিসেবে দেখেছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত ‘নাসরিন গার্মেন্টস’ এর স্বত্বাধিকারী সামসুল আলম বলেন, আমার দোকানের আকার ছিল ১৫ স্কয়ার ফিট। এই মাপ অনুযায়ী সিটি করপোরেশন খাজনা নিতো ৩৩শ’ টাকা। তারপর ট্রেড লাইসেন্স বাবদও টাকা দিতাম সিটি করপোরেশনকে। টোটাল আট হাজার ৩০০ টাকার মতো নিতো।
বহুতল ভবন তৈরিতে সিটি করপোরেশনের আগ্রহের ঘাটতি ছিল বলে অভিযোগ করেন অনেক ব্যবসায়ী। এক ব্যবসায়ী বলেন, সিটি করপোরেশন চাইলেই হতো। রিট করা হয়েছে কারণ আমরা নিয়মিত খাজনা দেই। আমরা যেভাবে চেয়েছি ওভাবে হচ্ছিল না বলেই রিট করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যার সমাধানে আসতে পারতো সিটি করপোরেশন। কিন্তু রিট হওয়ার পর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে এরকম কিছু করছে বলে শুনি নাই।
তবে একাধিকবার বঙ্গবাজার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন বলেন, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন থাকতেও তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা একটাই কথা বলছে, তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন আইনে কোথাও ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের করার সুযোগ নাই। তারা বিকল্প ব্যবস্থা চেয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না পেয়ে তারা হাইকোর্টে গিয়েছে। হাইকোর্টে যাওয়ার পরেও আমরা একাধিকবার আনফিসিয়ালি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি।
ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটেই নতুন করে আরও এক হাজার দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন বলেন, একবার অগ্নিকা-ের পর তারা মার্কেটটি দোতলা করে। তখন দোকান ছিল সম্ভবত ১৯৬১টি। পরে ২০১৪ এর শেষে অথবা ২০১৫ এর শুরুতে রাতের অন্ধকারে আরও ১০০০ নতুন দোকান বরাদ্দ নেওয়া হয় সিটি করপেরেশন থেকে। এটা কে বা কারা করেছে তা আর তদন্ত হয় নাই। এখন এই অতিরিক্ত দোকানের লোড তো আর দোতলার অবকাঠামো নিতে পারবে না। তারা তিনতলা করেছে কিন্তু ফাউন্ডেশন তো দোতলার।
তিনি বলেন, আমরা যখন ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে এই মার্কেটের বিষয়ে কথা বলি, তারা জানান বঙ্গবাজার মার্কেটটিতে অগ্নিঝুঁকির পাশাপাশি ধসে পড়ারও ঝুঁকিও রয়েছে। এই বিষয়টা তাদের (ব্যবসায়ীদের) অনেক বোঝানো হয়েছে, কিন্তু তারা রাজি হয় নাই। তারা কোর্টে গিয়ে রিট করে দেয়। তখন তৎকালীন মেয়র আর চেষ্টাও করেন নাই। পরে বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস একাধিকবার এটা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। সর্বশেষ আমি যতদূর জানি ঈদের পর এটার চূড়ান্ত শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
খাজনা নেওয়ার বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, ঝুঁকির সঙ্গে খাজনা দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নাই। কেউ যদি সিটি করপোরেশনের জায়গায় ব্যবসা করে তাকে ভাড়া দিতে হবে।
লাভ গোনায় ব্যস্ত ছিল দোকান মালিক সমিতি:
বঙ্গবাজার মার্কেটের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব ছিল দোকান মালিক সমিতির ওপর। এজন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদাও তুলতো তারা। এছাড়া বঙ্গবাজারের কয়েকটি মার্কেটে তিন তলা গোডাউন ভাড়া দিয়ে সমিতি আয় করতো বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, যখন যে দলের সরকার আসে সেই দলের লোক কমিটির সদস্য হয়। তবে গত এক দশক ধরে সমিতির কমিটি পরিচালনা পরিষদের কোনও নির্বাচন হয় না। ফলে কমিটির সদস্যরা মার্কেটের কল্যাণের চাইতে মার্কেট পরিচালনার ভাগবাটোয়ারা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।
অভিযোগ বিষয়ে বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবাজারে আগে দোকান ছিল ২৩৭০টি। পরে করা হয়েছে আরও ৫৯১। আর তিন তলা তো সিটি করপোরেশনের অর্ডার নিয়েই করেছি। তারা অর্ডার না দিলে কি আর করতে পারতাম আমরা।
হাইকোর্টে রিট করার পর সিটি করপোরেশন থেকে সমস্যা সমাধানে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। হাইকোর্টে মামলা আমরা করি নাই। মামলা করেছে সাধারণ দোকানদাররা।
রিট করার বিভিন্ন কারণ ছিল জানিয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে নতুন ভবন তৈরির জন্য সয়েল টেস্ট করেছিল ফায়ার সার্ভিসের সামনে। মার্কেট এক জায়গায়, সয়েল টেস্ট আরেক জায়গায় করলে হবে নাকি। আবার শুধু পাইলিং করতে ৪২ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছিল তারা। তাহলে একটা দোকানের খরচ কত টাকা করে হবে এটা নির্ধারণ করে দিবে না তারা আমাদের? এগুলোর কিছুই করে নাই। না করায় সাধারণ দোকানদারেরা মামলা করেছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আন্তর্জাতিক নয় অভ্যন্তরীণ কারণেই জেঁকে বসেছে মূল্যস্ফীতি
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পুতিনের নেতৃত্বে আসবে পশ্চিম-বিরোধী ‘নতুন বিশ্বব্যবস্থা’র ডাক!
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
গাজায় যত্রতত্র দেখা যায় যুদ্ধাহত হাত-পা-বিহীন মানুষ
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত -প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘বাজান নেই, আমার সব শেষ’- এ আহাজারি নিহত সাব্বিরের পিতার
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে দানা
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ ১৮২, একজনেরও হদিস নেই
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণে হতাশায় দ্বীপবাসী
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আরও ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
স্পেশাল ট্রেন চালুর কথা জানেই না কৃষক!
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানে নারী-শিশু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)