পবিত্র শবে বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দেগী করা ও দিনে রোযা রাখা বিদয়াত নয় বরং খাছ সুন্নত মুবারক
, ১৩ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২০ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
عن النبي صلى الله عليه وسلم من صام من شعبان يوما حرم الله جسده على النار وكان الرفيق وحضرت يوسف عليه السلام في الجنان واعطاه الله ثواب حضرت ايوب عليه السلام وحضرت داؤد عليه السلام فان اتم الشهور كله هون الله عليه سكرات الموت ودفع عنه ظلمة القبر وهول منكر ونكير وستر الله عورته يوم القيامة.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে মাত্র একটি রোযা রাখবে তার শরীরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দোযখের জন্য হারাম করে দিবেন এবং বেহেশতের মাঝে সে ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গী হিসেবে থাকবেন এবং তৎসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনাদের ন্যায় ছওয়াব লাভ করবেন। অতঃপর কোন ব্যক্তি যদি পূর্ণ শা’বান মাসেই (১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ) রোযা রাখে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সে ব্যক্তির উপর মৃত্যুর তাকলীফ সহজ করে দিবেন এবং ক্ববরের অন্ধকার দূর করে দিবেন। অতঃপর হযরত মুনকার-নাকীর আলাইহিমাস সালাম উনাদের প্রশ্নের ভয়াবহ অবস্থা দূর করে দিবেন এবং ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি সে ব্যক্তির লজ্জাস্থান আবৃত রাখবেন।
কাজেই উপরোক্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র শবে বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দেগী করা ও দিনে রোযা রাখা বিদয়াত নয় বরং সম্মানিত শরীয়ত সম্মত এবং খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্যে তিনটি রোযা রাখা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক। যারা তিনটি রোযা রাখবে উনাদের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন।
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে যতবেশি রোযা রাখতে দেখি অন্য কোনো মাসে তা দেখি না তার কি কারণ? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র শা’বান শরীফ মাস হচ্ছেন মুবারক বা বরকতময় মাস। এ মাসে বান্দা-বান্দীদের আমলসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার টিকট পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমল মুবারক সমূহ রোযাদার অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হোক।” সুবহানাল্লাহ!
বিশ্ববিখ্যাত ‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
وعن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال جاءنى جبرائيل عليه السلام ليلة النصف من شعبان وقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارفع راسك الى السماء فقلت ما هذه الليلة؟ قال هذه ليلة يفتح الله فيها ثلٰث مائة باب من ابواب الرحمة يغفر لجميع من لا يشرك به شيئا الا ان يكون ساحرا او كاهنا او مصرا على الزنا او مدمن خمر وعنه صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله على خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا مشرك والمشاحن يعنى المصارم لاخيه المسلم.
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র শা’বান শরীফ মাসের অর্ধ রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (দয়া করে) আপনি আকাশের দিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাথা মুবারক) উত্তোলন করুন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এই রাত্রির বৈশিষ্ট্য কি? তখন হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এই অর্ধ শা’বানের রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি ৩০০টি রহমতের দরজা মুবারক খুলে দেন। যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরিক করেনা, যাদু করেনা, গণক নয়, বারংবার ব্যভিচার করেনা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিন্ন করেনা। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, অর্ধ শা’বানের রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমত মুবারক নাযিল করেন। অতঃপর সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে যারা মুশরিক এবং হিংসুক অর্থাৎ যে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে হিংসা করে থাকে তাদেরকে ঐ রাত্রিতে ক্ষমা করেন না।
বিশ্ববিখ্যাত ‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
ان الجن والطير والسباع وحيتان البحر يصومون يوم النصف من شعبان
অর্থ: নিশ্চয়ই জ্বিন, পশু-পাখী জীব-জন্তু এমনকি সমুদ্রের মাছেরাও অর্ধ শা’বানের অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের দিন রোযা রাখে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুল বরকত)
পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে তিনটি রোযা রাখার ব্যাপারে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যারা তিনটি রোযা রাখবে উনাদের সমস্ত গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং জান্নাতী উটে আরোহণ করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই সকলের জন্য আবশ্যক হলো পবিত্র শবে বরাতের রাতে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা, দোয়া-মুনাজাত করা, ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখা।
সম্মানিত সুন্নত মুবারক অস্বীকারকারীরা অবশ্যই কাফির
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ الله تعالي عنه قَالَ لَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَكَفَرْتُمْ-
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দাও, তাহলে অবশ্যই তোমরা কুফরী করলে। (আবূ দাউদ শরীফ, ফতহুল বারী লি ইবনে রজব ৫/৪৪৭)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুসরণ করা সকলের জন্য ফরয এবং অস্বীকারকারীরা কাফির।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঠান্ডা ও মিঠা পানি পান করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফল খাওয়া মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাঁটি মধুসহ সকল সুন্নতী সামগ্রী
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)