ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১)
, ২৯ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক অর্থাৎ দাড়ি মুবারকের বর্ণনা:
আবূ দাউদ শরীফের বিখ্যাত শরাহ বজলুল মাজহুদে উল্লেখ আছে যে, ফিতরাত অর্থ হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত। অর্থাৎ এই দশটি সুন্নত যেগুলোর মধ্যে গোঁফ কাটা ও দাড়ি লম্বা করাও অন্তর্ভুক্ত, তা সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও সুন্নত বা তরীক্বা।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখতেন, যেটা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আয়াত শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
أُولٰئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
অর্থ: উনারা এরূপ, উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং হিদায়াত বা পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনি উনাদের জন্যও অনুসরণীয়।
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ পালন করা যেহেতু ফরয, সেহেতু সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফিতরাতও অনুসরণযোগ্য হিসেবে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখাও ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর সবচেয়ে বড় দলীল হচ্ছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক অর্থাৎ দাড়ি মুবারক কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখতেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرْتْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ اَنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهٖ طُوْلًا وَعَرْضًا عَلٰى قَدْرِ الْقَبْضَةِ.
অর্থ: হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখতেন এবং একমুষ্ঠির বেশীগুলো কেটে ফেলতেন। (তানউয়ীর)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, তাবেয়ী হযরত ইয়াযীদ ফারসী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যুগে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট ব্যক্ত করলে তিনি বর্ণনা করেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখলো, সে বাস্তবিকভাবে আমাকেই দেখলো, কেননা শয়তান আমার ছূরত ধারণ করতে পারে না।
অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইয়াযীদ ফারসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি স্বপ্নে দেখা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছূরত বা আকৃতি মুবারক বর্ণনা করতে পারবেন কি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই পারবো। এ কথা বলে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও বরকতময় ছূরত বা আকৃতি মুবারক বর্ণনা করতে লাগলেন। যার মধ্যে একটি বর্ণনা এরূপ ছিলো-
مَلَأَتْ لِحْيَتُهٗ مَا بَيْنَ هَذِهٖ إِلٰى هٰذِهٖ
অর্থ: (আমি দেখলাম) উনার মহাসম্মানিত নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক অর্থাৎ দাড়ি মুবারক (প্রস্থে নিজ গন্ডদ্বয় এবং চিবুকের প্রতি ইঙ্গিত করে) এপাশ ওপাশের মধ্যবর্তী স্থান (ডান-বাম গন্ডদ্বয়ের উভয় পার্শ্ব এবং দৈর্ঘে চিবুকের পাশও) ভরাট করে রেখেছিলেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছূরত মুবারকের এরূপ বর্ণনা শুনে বললেন-
لَوْ رَأَيْتَهُ فِي الْيَقَظَةِ مَا اسْتَطَعْتَ أَنْ تَنْعَتَهُ فَوْقَ هَذَا
অর্থ: হে ইয়াযীদ ফারসী! হায়াত মুবারকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখার সৌভাগ্য হলেও স্বপ্নে দেখার চেয়ে বেশী সুন্দর করে উনার ছূরত বা আকৃতি মুবারক বর্ণনা করা আপনার পক্ষে সম্ভব হতো না। (শামায়েলে তিরমিযী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক অর্থাৎ দাড়ি মুবারক ছিল কমপক্ষে একমুষ্ঠি ও সীনা পোর, যা সমস্ত সীনা মুবারক উনাকে ভরাট করে রাখতো।
সুতরাং উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক (দাড়ি মুবারক) ছিল কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা। এবং পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দাড়ি মুবারকও কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা ছিল। অতএব, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয। আর কমপক্ষে একমুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে দাড়ি কাটা ও ছাঁটা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)