বুলন্দী শান মুবারক
জাগ্রত অবস্থায় সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভের সু-নছীব
, ১২ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১০ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি (মহান আল্লাহ পাক) আপনাকে শাহিদ-হাযির-নাযির বা সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সর্তককারীরূপে পাঠিয়েছি।” (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ০৮)
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার হায়াত মুবারকে মানুষ উনার যিয়ারত মুবারক এবং ছোহবত মুবারক লাভ করে যেমন অশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন, ঠিক দুনিয়ার যমীন থেকে দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেওয়ার পরও জাগ্রত এবং ঘুমন্ত অবস্থায় উনার যিয়ারত মুবারক লাভ করে মানুষ অশেষ নিয়ামত, রহমত, বরকত, সাকীনা ও সীমাহীন কল্যাণ লাভে ধন্য হয়ে থাকেন। এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা মুবারক কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। নিম্নে এ ধরণের কতিপয় ঘটনা মুবারক উল্লেখ করা হলো।
শায়েখ আবূ সাঈদ কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, “গাউছুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আমি কয়েকবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভে ধন্য হয়েছি। অন্যান্য হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারত মুবারকও পেয়েছি। আর এ যিয়ারত মুবারক ছিলো জাগ্রত অবস্থায়।” সুবহানাল্লাহ!
এক ব্যক্তি এক জঙ্গলে একাকী ভ্রমণ করছিল। সে যে জন্তুটির উপর আরোহন করেছিলো তার পা ভেঙ্গে গেলো। ঐ বিপদের মুহূর্তে সে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে লাগলো। একটু পরে সে তিনজন বুযূর্গ লোককে আগমন করতে দেখলো। একজন একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন আর দু’জন কাছে আসলেন এবং ঐ জন্তুটির পা ঠিক করে দিলেন। তখন ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, “মুহতারাম! আপনাদের পরিচয় জানতে পারি কি?” তখন উনারা বললেন, “আমরা সিবতু রসূল আর রবি’ হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ও সিবতু রসূল আল খমিস হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম। এবং যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি আমাদের প্রাণপ্রিয় নানাজান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! তখন সে ব্যক্তি ফরিয়াদ করলো, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে দয়া করে আপনার কদমবুছি করার বরকত দানে ধন্য করুন” তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তোমার মুখ হতে হুক্কার গন্ধ আসছে।” নাঊযুবিল্লাহ!
ইমাম আবু ওহাব সা’রানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ষোড়শ খৃষ্টাব্দের শুরুতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন সে যুগের বিশিষ্ট বুযূর্গ এবং বিখ্যাত আলিম। তিনি জাগ্রত অবস্থায় উনার ৮ জন সাথীসহ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে বুখারী শরীফ পাঠ করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
হযরত ইমাম দুসুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ছিলেন তৎকালীন সময়কার বিখ্যাত আলিম, ছূফী এবং বুযূর্গ। ৪৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন। তিনি জীব-জন্তু এবং পশু-পাখিদের ভাষা জানতেন। উনার অনেক কারামত ছিলো। তিনি জাগ্রত অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভ করেছেন।
শায়েখ আব্দুল্লাহ ইবনে আবী জায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানার বিশিষ্ট বুযূর্গ। তিনি জাগ্রত অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভ করেছেন।
কাজী শরফুদ্দীন আল বাজরী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন যে, শায়েখ আব্দুল্লাহ ইবনে মূসা ইবনে নো’মান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, “আমি ৬৩৭ হিজরীতে হাজীদের কাফেলায় ছিলাম। আমি উট থেকে নিচে অবতরণ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম এবং নিদ্রিত হলাম। জাগ্রত হয়ে দেখি কাফেলা সেখান থেকে চলে গেছে। একা থাকার কারণে আমার ভয় এবং পিপাসা পেয়ে বসলো। এমন অবস্থায় আমি কাঁদতে লাগলাম। এ অবস্থায় বেঁচে থাকার আর কোন আশা রইলো না। মৃত্যু যেন আমার সম্মুখে হাযির হয়ে গেছে। তারপর আমি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে ক্রন্দনরত অবস্থায় এই বলে দোআ করলাম, “আয় পরওয়ার দিগার! আপনার সম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় আমার প্রতি দয়া করুন এবং গায়েব থেকে আমার জন্য সাহায্য প্রেরণ করুন। এগুলো উচ্চারণ করার পরই পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক তিনি অসীম করুণা করে, মেহেরবাণী করে আমার জন্যে সাহায্য প্রেরণ করলেন। আমি তখন একটি শব্দ শ্রবণ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে কোন বুযূর্গ আমার হাত ধরে ফেলেন। পরক্ষণেই আমার ভয় দূর হয়ে গেল এবং পিপাসাও চলে গেল। ঐ ব্যক্তি আমাকে নিয়ে সামনে অগ্রসর হলেন এবং ক্ষণিকের মধ্যে আমাকে আমার কাফেলার উটের সামনে হাযির করলেন। তখন আমি এত খুশি হলাম যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এরপর তিনি আমাকে উটের উপর আরোহন করিয়ে এ কথা বলে বিদায় হলেন- “যে ব্যক্তি আমার উছীলায় সাহায্য প্রার্থনা করে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে মাহরূম করেন না।” তখন তিনি প্রত্যাবর্তন করছিলেন। উনার নূর মুবারকের কারণে অন্ধকার রাত আলোয় ঝলমল করছিলো। আমি এজন্য দুঃখিত হলাম এবং আক্ষেপ করলাম, হায়! কেন আমি উনার সম্মানিত নূরুদ দারাজাত (কদম) মুবারকে আমার এই অভাগা মুখের ঠোট দিয়ে চুমু খেলাম না! আমার মন আরও ব্যাকুল হয়ে গেল। এ যে আর এক বেদনা। এ বেদনা যে ভুলবার মত নয়। মূলত তিনি ছিলেন স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
ইমাম আহমদ আবুল আব্বাস মারাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, বিগত চল্লিশ বছর যাবত কখনও আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক থেকে আলাদা ছিলাম না। যদি ক্ষণিকের জন্য আমি আড়ালে চলে যাই এবং উনার দীদার নছীব না হয় তবে আমি নিজেকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত মনে করি না।” সুবহানাল্লাহ! (হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
-আহমদ হুসাইন মুফহিম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আলোচনায় বা লেখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসমে যাত বা নাম মুবারক বারবার বলা ও লেখা সম্পূর্ণ আদবের খিলাফ (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৭)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৪)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৬)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক (৩)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)