বিভাগ: মহিলাদের স্বাস্থ্য
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ও প্রতিকার-১
, ২০শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৪ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২৯শে মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বড় ইস্তিঞ্জা শক্ত হয়, যার কারণে অনেকে মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা ৩-৪ দিন বড় ইস্তিঞ্জা নাও হতে পারে। এগুলো সবই সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগ এর মতো পায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। বড় ইস্তিঞ্জা কষা কেন হয় তা জেনে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়াই সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ কী কী?:
সাধারণত: সপ্তাহে যদি তিন বারের কম বড় ইস্তিঞ্জা হয়, তবে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলো:
* বড় ইস্তিঞ্জা শুকনো, শক্ত চাকার মত হওয়া।
* বড় ইস্তিঞ্জার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া।
* বড় ইস্তিঞ্জা করতে কষ্ট হওয়া।
* পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হওয়া।
* পেটে ব্যথা হওয়া, পেট ফাঁপা লাগা, বা বমি বমি ভাব হওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?:
নানাবিধ কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন ও গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কারণ হলো-
* খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা।
* শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।
* বড় ইস্তিঞ্জার বেগ আসলে তা চেপে রাখা।
* মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণœতা।
* ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
এই কারণগুলো কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি করে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা সহজ হবে।
১. যথেষ্ট ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া:
ফাইবার বা আঁশ হলো এক ধরনের শর্করা। পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় বড় ইস্তিঞ্জা তৈরি হয় ও জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে। পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে ফাইবার বড় ইস্তিঞ্জায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে বড় ইস্তিঞ্জা নরম ও ভারী হয়, সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে বড় ইস্তিঞ্জা শক্ত হয়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা:
পানি খাবারের ফাইবারের সাথে মিলে বড় ইস্তিঞ্জাকে ভারী ও নরম করে। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে বড় ইস্তিঞ্জা চলাচল সহজ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৩. শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব:
নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি সচল হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে বড় ইস্তিঞ্জা বেরিয়ে আসে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব হলে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৪. পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা:
বড় ইস্তিঞ্জা শক্ত হলে অনেকে টয়লেটে যেতে চায় না, কারণ তখন মলত্যাগ করতে কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তুবড় ইস্তিঞ্জার বেগ আসলে তা যদি আটকে রাখা হয়, তাহলে শরীর ক্রমশ সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। পেটের ভেতর বড় ইস্তিঞ্জা জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরও শক্ত হতে থাকে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
৫. মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণœতা:
অনেক সময় মানসিক চাপ, কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা বা বিষণœতায় ভোগার ফলে শরীরের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির ছন্দপতন হয়, শরীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৬. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে,
ট্রামাডল বা ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ঔষধ আইবুপ্রোফেন, আয়রন ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ঔষধ এ ছাড়া একসাথে পাঁচটার বেশি ঔষধ খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কী?:
যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নিচে ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করা যায় তা তুলে ধরা হয়েছে।
১. খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে এমন খাবার খেতে হবে। সবুজ শাক-সবজি, ফলমূল, ডাল, লাল আটা ও লাল চালের মতো গোটা শস্যদানা বেশি করে খাওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে দৈনিক প্রায় ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কীভাবে ফাইবার যোগ করবেন?:
১. ভাত বা রুটি খাওয়ার ক্ষেত্রে লাল চাল ও লাল আটা ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে।
২. প্রতিবেলার খাবারে ডাল রাখতে পারেন। ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে।
৩. প্রতিবেলার খাবারে কয়েক ধরনের বা সম্ভব না হলে কমপক্ষে এক ধরনের সবজি রাখতে হবে।
৪. যেসব ফল বা সবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো খোসা না ফেলে খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ খোসায় উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে। টমেটো, আপেল ও আলুর মতো খাবারগুলো খোসাসহ খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
৫. যেকোনো ফল বা সবজি গোটা বা আস্ত খেলে ভালো ফাইবার পাওয়া যায়। জুস বা ভর্তা বানিয়ে খেলে আঁশের পরিমাণ কমে যায়।
তবে খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ হুট করে বাড়ানো উচিত নয়। কারণ হঠাৎ ডায়েটে ফাইবারের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেললে বায়ুর সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া পেট ফাঁপা, তলপেটে তীব্র ব্যথাসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই খাদ্য তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। গতকাল যদি শুধু একটি ফল খেয়ে থাকেন, তাহলে আজ দুটো খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। সাথে কিছু বাদাম খান। রান্না করা সবজি খেতে না চাইলে ভাতের সাথে টমেটো, শসা, গাজর কেটে সালাদ খাওয়া শুরু করতে পারেন।
সূত্র: সহায় ডট হেলথ।
-সম্পাদনায় আহমদ মারদ্বিয়া।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসান মুবারক
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)