জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইবনে উবাই (২)
বিলাদত শরীফ: (তারিখ উল্লেখ নেই) বিছাল শরীফ: ১২ হিজরী (৬৩৩ খৃ:)
, ১৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৫জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পিতার মুনাফিকী প্রকাশ:
বনু মুস্তালিক জিহাদের সময় এই উবাই বিন সুলুল বলেছিলো, মদীনা শরীফে ফিরে গেলে সম্মানিত ব্যক্তিরা ইতর ব্যক্তিদেরকে মদীনা শরীফ হতে বের করে দিবে। এই সময় তার পুত্র হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! সেই ইতর লোক এবং আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিই সম্মানিত ব্যক্তি। আপনি যদি অনুমতি দান করেন, তাহলে আমি তাকে হত্যা করবো। অথচ খাযরাজ গোত্রের সকলেই জানে যে, তাদের মধ্যে কেউই আমার অপেক্ষা তার নিজ পিতার প্রতি অধিকতর সদ্ব্যবহার করে না। কিন্তু আমার আশঙ্কা হয় যে, আপনি অন্য কোন মুসলমান ব্যক্তিকে এই কাজের অনুমতি দান করেন এবং সে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে আমার পিতাকে হত্যা করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার পিতার হত্যাকারীকে জীবিত অবস্থায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দেখা আমার সহ্য নাও হতে পারে। সুতরাং আমি তাকে হত্যা করতে বাধ্য হবো। ফলে একজন কাফিরের জন্য একজন মুসলমানকে হত্যা করে ফেলবো এবং এজন্য আমাকে জাহান্নামে যেতে হবে। ’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার কথা শুনে ইরশাদ মুবারক করলেন, তার সাথে ভাল ব্যবহার করবেন। (ইছাবা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করলেন, সে যতদিন আমাদের সাহচর্যে থাকবে, ততদিন তার সাথে সদয় ব্যবহার করবেন, যাতে লোকেরা এ কথা বলতে না পারে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সঙ্গীদেরকে হত্যা করেন। আপনার পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করুন এবং তার সাথে ভালভাবে জীবন যাপন করুন। (উসুদুল গাবা)
হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ শেষ করে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন। পিতাকে আসতে দেখে উটের পিঠ থেকে নেমে তরবারি উঁচু করে ধরে বললেন, যতক্ষণ আপনি মুখ দিয়ে এ কথা উচ্চারণ না করবেন- “আমি ইতর এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতি সম্মানিত” ততক্ষণ এ তরবারি কোষবদ্ধ হবে না। আপনি এখান থেকে এগোতে পারবেন না। পুত্রের মুখে এ কথা শুনে অবস্থা বেগতিক দেখে উবাই বিন সুলুল উচ্চারণ করলো, “আপনার ধ্বংস হোক! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত এবং আমি ইতর”। এরই মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে তাশরীফ মুবারক রাখলেন। পিতা-পুত্রের সংলাপ শুনতে পেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ দিলেন, তাকে ছেড়ে দিন। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যতদিন সে আমাদের মধ্যে আছে আমরা তার সাথে ভাল ব্যবহার করবো। (তাবাকাত, হায়াতুছ ছাহাবা)
তাবুক জিহাদ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফে ফেরার পর মুনাফিক সর্দার উবাই বিন সুলুল মারা যায়। (তাবাকাত)
পিতার মৃত্যুর পর:
যখন হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা মুনাফিক সর্দার উবাই বিন সুলুলের মৃত্যু হয়, তখন হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজী করলেন, আমাকে আপনার লেবাস মুবারক অর্থাৎ কোর্তা মুবারকটি দান করুন। ইহা দ্বারা আমি আমার পিতাকে কাফন দিবো। আপনি তার জানাযার নামায পড়াবেন এবং তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উনার কোর্তা মুবারক দান করলেন এবং বললেন, গোসল ও অন্যান্য কাজ হতে অবসর হলে আমাকে সংবাদ দিবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তার জানাযার নামায পড়াবার জন্য অগ্রসর হলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি মুনাফিকদের জানাযা পড়াবার জন্য আপনাকে কি নিষেধ করেননি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মুনাফিকদের জন্য মাগফিরাত চাওয়া এবং না চাওয়া এ দুয়ের যে কোন একটির অধিকার আমাকে দেয়া হয়েছে। এই বলে তিনি তার জানাযা পড়ালেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন পাক উনার আয়াত শরীফ নাযিল করে ইরশাদ মুবারক করেন, আয় মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওদের (মুনাফিকদের) মধ্যে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনও তার জানাযার নামায পড়বেন না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন না। তারা তো মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে অস্বীকার করেছিলো এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। এরপর হতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুনাফিকদের জানাযার নামায পড়া পরিত্যাগ করেন। (উসুদুল গাবা) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪২)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (৩)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা ফরয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (২)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)