সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ০৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন হযরত উম্মে হাবীবা বিনতে আবি সুফিয়ান আলাইহাস সালাম। তিনি কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া শাখার অন্তর্ভূক্ত। হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার মেয়ের নাম, সেজন্য হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম এই কুনিয়াত মুবারকেই তিনি প্রসিদ্ধ হয়েছেন। উনার প্রকৃত নাম মুবারক ছিল হযরত রামলা আলাইহাস সালাম। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কুরাঈশ নেতা ছিলেন।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আসল নাম ছিল ছখর ইবনে হারব (ইছাবা)। তিনি ছিলেন এক বড় ব্যবসায়ী। শাম (সিরিয়া), রোম ও আজমে (অনারব দেশ সমূহ) তিনি কাফেলা পাঠাতেন। মাঝে মাঝে কাফেলার সাথে তিনি নিজেই যেতেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের নাম হযরত যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি প্রখ্যাত ধনী ছাহাবী হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ আছ-ছাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া ছিলেন। উনার শাদী মুবারক হয়েছিল ইসলাম-পূর্ব জীবনে। তখন হযরত ‘উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়ার সংখ্যা ছিল দশ জন। তন্মধ্যে চার জন কুরাইশ বংশীয়া এবং হযরত যয়নব বিনতে আবী সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন উনাদের অন্যতমা। হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দেন, তিনি যেন চারজন আহলিয়াকে রেখে অবশিষ্টদেরকে ত্যাগ করেন। সুতরাং তিনি চারজনকে বাছাই করে নেন। উনাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত যায়নাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অপর দুই মেয়ে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবাহ আলাইহাস সালাম এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের শাদী হয় উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ এবং হযরত আবু আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সাথে, যারা ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার দুই ভাই।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উহুদের জিহাদে (ঈমান গ্রহণ না করা অবস্থায়) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম উনার কলিজা মুবারক চিবিয়ে ছিলেন। হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পরে ইসলাম গ্রহণ করে ছাহাবিয়া হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্য আহলিয়া যিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন উনার নাম হযরত ছফিয়া আলাইহাস সালাম যিনি তৃতীয় খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ফুফু ছিলেন। কাজেই উমাইয়া খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াতা আশার আলাইহাস সালাম উনার বৈমাত্রিয় ভাই।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার পিতার পরিবার পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় পর্যন্ত ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী থাকলেও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম এবং উনার অন্য দুই বোন হযরত যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের জাওয মুকাররমের পরিবার দ্বীন ইসলাম উনার সূচনা পর্বেই মুসলমান হয়ে যান। কাজেই উনারাও উনাদের জাওয মুকাররম উনাদের সাথে পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুল করেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দুই জনই ছাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম সম্মানিত নবুওয়ত মুবারক প্রকাশের ১৭ বছর পূর্বে ২৯ জুমাদাল উলা শরীফ, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন (ইছাবা, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী হয়েছিল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সঙ্গে (তার ঔরসেই হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন)। অতঃপর দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে উভয়ে এক সঙ্গে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার আহাল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। উনার অপর এক বোন হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে উনার জওয মুকাররম হযরত আবু আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে হাবশায় হিজরত করেছিলেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ:
হাবশায় কিছুদিন অবস্থানের পর উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করে। উবায়দুল্লাহ ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করার কিছুদিন পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি একটি স্বপ্ন মুবারক দেখেন। স্বপ্নে তিনি উনার আহাল উবায়দুল্লাহকে বিভৎসরূপে দেখেন। তিনি ভীত-শঙ্কিত হয়ে আপন মনে বলেন, নিশ্চয়ই তার কোন খারাপ পরিণতি হতে যাচ্ছে। সকাল বেলা উবায়দুল্লাহ উনাকে বলল: উম্মু হাবীবা! আমি ধর্মের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি। ঈসায়ী ধর্ম থেকে অন্য কোন ধর্ম ভাল বলে মনে হয়নি। যদিও আমি মুসলমান হয়েছি, তবে আমি ইহা ত্যাগ করে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করছি। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম তার এহেন পথভ্রষ্টতায় যথেষ্ট তিরস্কার করলেন এবং নিজের স্বপ্নের কথাও তাকে বললেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হলো না। সে ঈসায়ী ধর্মে থেকে গেল। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম তাকে ছেড়ে দিয়ে একাকী বসবাস করতে লাগলেন। অতঃপর উবায়দুল্লাহ তার বেপরোয়া জীবনযাপনের এক পর্যায়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম আরো বলেন, উক্ত স্বপ্নের মধ্যে আমি আরও দেখলাম, কেউ আমাকে “ইয়া উম্মাল মু’মিনীন” বলে ডাকছেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হয়ত আমার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। (তাবাক্বাত, শরহুল মাওয়াহিব)।
ইতিমধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ আনয়ন করেন। তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশের ইসলাম ত্যাগ এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার ঈমানী দৃঢ়তার উপরোক্ত সংবাদ অবগত হন। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট প্রেরণ করে উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষ হতে হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে জনৈকা দাসী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত প্রস্তাব সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট উপস্থাপন করলে তিনি এই মুবারক এই সুসংবাদ উনার জন্য খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে স্বীয় অলঙ্কার (২টি রূপার চুড়ি, কানের দুল ও একটি নকশা করা আংটি) উক্ত দাসীকে হাদিয়া করেন। অতঃপর সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার ভাই হযরত জাফর ত্বাইয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে রাজ দরবারে আহ্বান করে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতঃ উপস্থিত সকলকে আপ্যায়ন করেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে ৪০০ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) মোহরও আদায় করে দেন। মোহরের অর্থ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট পৌঁছলে সেখান থেকে ৫০ দীনার তিনি দাসী হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে দিতে চান। কিন্তু হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা তা গ্রহণ করতে অসম্মতি জানান এবং বলেন, স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে কিছু নিতে নিষেধ করেছেন। তাই তিনি ইতিপূর্বে উনাকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল তাও ফিরিয়ে দেন। এ সময় হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নিজের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা জানান এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনাকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন এবং উনার তরফ থেকে উনার নিকট সালাম পৌঁছিয়ে দেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম বলেন: আমি পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার সব কথা বলি এবং তার সালাম পেশ করি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৃদু হেসে উত্তর দেন-
و عليها السلام و رحمة الله و بركاته -
পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার তারিখ:
হিজরী ৭ম হিজরী সনের ৩ মাহে ছফর শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) এই পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৩৬ বছর ৮ মাস ৪ দিন (ইছাবা, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
বর্ণিত আছে যে, এই নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের সংবাদ যখন হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট পৌঁছে তিনি অসন্তুষ্ট হননি, যদিও তখন পর্যন্ত তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তখন মন্তব্য করেছিলেন:
ذاك الفحل، لا يقرع أنفه
অর্থ: তিনি তো এমন সম্ভ্রান্ত কুফূ অর্থাৎ সমকক্ষ, যা প্রত্যাখ্যান করা যায়না। অর্থাৎ এই নিসবাতুল আযীম শরীফ খুবই মানানসই হয়েছে (তাবাকাত)।
পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ আনয়ন:
নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার পর স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জা’ফর ত্বাইয়ার বিন আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে একদল মুহাজিরের সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনাকে জাহাজযোগে পবিত্র মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। এই কাফিলা যখন পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছেন, তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বরে অবস্থান করছিলেন। সুবহানাল্লাহ ! (আবু দাউদ শরীফ, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশারহ আলাইহাস সালাম উনার আক্দ মুবারক স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পন্ন করেছেন। এই ব্যাপারে ইজমা হয়েছে। তবে হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের বর্ণিত একটি পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, উনার আক্দ মুবারক সম্পন্ন হয়েছে পবিত্র মদীনা শরীফে হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ব্যবস্থাপনায়। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)। এই উপলক্ষে মুবারক ওলীমার ব্যবস্থা করা হয় এবং মেহমানদের গোশত খাওয়ানো হয়। সীরাত বিশেষজ্ঞগণ কেউ কেউ বলেছেন, হতে পারে পবিত্র মদীনা শরীফে আসার পর আবার একটি আক্দ মুবারক এবং ওলীমা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম বলেন: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, তখন এই পবিত্র আয়াত শরীফটি নাযিল হয়-
عَسَى اللهُ أنْ يَّجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَ بَيْنَ الّذِيْنَ عَادَيْتُمْ مِنْهُمْ مَوَدَّةً
অর্থ: যারা আপনাদের শত্রু খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের মধ্যে এবং আপনাদের মধ্যে শীঘ্রই বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ ! (সুরা আল মুমতাহিনা-৭)
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
হিজরী ৪৪ সনের ১৭ মাহে শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) ৭৩ বছর ২ মাস ১৮ দিন বয়স মুবারকে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত মু‘য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনার খিলাফতের সময় তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন (আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)।
বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ডেকে বলেন: নবী পরিবারে আজওয়াজে মুতাহহারাত হিসাবে আমরা একসঙ্গে বসবাস করেছি। যদি কোন ব্যাপারে আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমাকে মাফ করে দিন এবং আমার জন্য দোয়া করুন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন:
سررتنى سرك الله
(আপনি আমাকে খুশী করেছেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে খুশী করুন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সুরা আহযাবের ৬নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে ‘উম্মাহাতুল মু’মিনীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন-
ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক এই পবিত্র আয়াত শরীফে উনাদেরকে أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) এই সম্মানিত লক্বব মুবারকে উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মর্ম থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আজয়াজুম মুত্বাহারাগণ তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকল মু’মিন অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন উনাদের সকলেরই মহাসম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম সংখ্যায় ১৩ জন ছিলেন। উনাদের সকলই অনেক বৈশিষ্ঠ্যপূর্ণ গুণাবলীতে গুণান্বিতা। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশারহ আলাইহাস সালাম উনারও অনেক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণাবলী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। উনার এই সম্মানিতা মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার পিতা কুফরী অবস্থায় থাকাকালীন সময়েই ইসলামের জন্য স্বীয় জন্মভূমি ত্যাগ করে সুদূর হাবশায় হিজরত করেন এবং সেখানে উনার আহাল বিধর্মী হয়ে গেলেও তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে পরিত্যাগ করেন। ফলত তিনি সমুদয় বিপদ তুচ্ছ করে পবিত্র ঈমানী দৃঢ়তায় দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি প্রগাঢ় মুহব্বত ও মাহাত্মের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি বেমেছালভাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সূত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
মুহাদ্দিছে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা বলা হয়েছে ৬৫ খানা। তবে প্রকৃতপক্ষে সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ পবিত্র সুন্নতের পাবন্দ। কাজেই উনাদের কাজকর্ম, কথা-বার্তা, আচার ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় হিজরী ৭ সনে এবং উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হয় হিজরী ৪৪ সনে। প্রায় ৩৭ বছর তিনি উম্মতের হিদায়েতের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার মেয়ে হযরত হাবিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহেই প্রতিপালিত হন। ছাক্বীফ গোত্রের এক বড় নেতার সাথে উনার শাদী মুবারক হয়েছিলেন।
একবার উনার পিতা কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হননি) হুদায়বিয়ার সন্ধির মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করেন। এ উপলক্ষে তিনি উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাক্ষাত করতে উনার ঘরে আসেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারকে বসছিলেন, ঠিক এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত বিছানা মুবারক উল্টিয়ে ফেলেন। উনার পিতা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন: আপনার এ বিছানা কি আপনার পিতা অপেক্ষা অধিকতর প্রিয়? সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন: ইহা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছানা মুবারক। আপনি যেহেতু মুশরিক, আপনি অপবিত্র। তাই এ বিছানায় আপনি বসতে পারেন না। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, আল-বিদায়া)।
হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসঙ্গে বলেন, বংশের দিক থেকে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে কেউই উনার চেয়ে বেশী নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিক নিকটের ছিলেন না। উনার চেয়ে বেশী মোহর অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সময় ছিলো না। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করা অবস্থায় নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়নি। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে শুনেছিলেন যে, যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত নফল নামায পড়ে, জান্নাত তার আবাসস্থল হবে। যখন হতে তিনি এ পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনেছেন, এই নামায কখনও তিনি পরিত্যাগ করেননি (বুখারী শরীফ)। গরীব দুঃখী ইয়াতীমদের প্রতি তিনি খুব লক্ষ্য করতেন। একবার এক মুসলমানের মৃত্যু হলে তার সব সন্তান সন্ততিকে তিনি লালন পালনের ভার গ্রহণ করেন এবং তাদের বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের লালন পালন করেন। সুবহানাল্লাহ !
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফের উপর তিনি কঠোরভাবে আমল করতেন। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বিছাল শরীফ লাভ করেন, তিন দিন পরই তিনি সুগন্ধি চেয়ে নিয়ে নিজ কপাল মুবারকে মাখেন এবং বলেন: আমি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার একমাত্র আহাল (স্বামী) ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নেই। আহালের (স্বামীর) জন্য চার মাস দশ দিন শোক করতে হবে। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
(সুত্রসমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাক্বাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ )
-সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)