সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (১২)
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা খাযরাজ গোত্রের কিছু লোক কাট্টা ইয়াহুদী আবু রাফে’কে হত্যার জন্য হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। আবু রাফে’র ষড়যন্ত্র ও শত্রুতার বিষয়ে পূর্ব থেকেই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবগত ছিলেন। সুতরাং তিনি খাযরাজ গোত্রীয় আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উক্ত বাতিল বিধ্বংসী প্রস্তাবে ইজাযত মুবারক দিলেন। এমনকি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে কয়েকজন খাযরাজ গোত্রীয় আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে ইয়াহুদী দুশমন আবু রাফে’র চিরস্থায়ী দফারফার জন্য প্রেরণ করলেন।
হিজায ভূমিতে আবু রাফে’র একটি দুর্গ ছিল। সেখানেই সে থাকতো। ঈমানদীপ্ত আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা যখন আবু রাফে’র দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছলেন তখন প্রায় সূর্য ডুবুডুবু। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার কারণে লোকজন নিজ নিজ পশুপাল নিয়ে তাদের বাড়ি ঘরের দিকে রওয়ানা দিয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সঙ্গী-সাথীদেরকে বললেন, আপনারা এখানে বসে অপেক্ষা করুন। আমি প্রথমে গিয়ে দুর্গের দ্বাররক্ষীর সাথে কৌশল করে দুর্গের ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করবো। অতঃপর তিনি দুর্গের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছলেন এবং কাপড় দিয়ে নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি ইস্তিঞ্জা করতে বসেছেন। ইতোমধ্যে দুর্গের সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দ্বাররক্ষী উনাকেও দুর্গের একজন মনে করে ডাক দিয়ে বললেন- হে আল্লাহর বান্দা! ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাড়াতাড়ি করুন। এখনই দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তখনি আমি দ্রুত ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে থাকলাম। দ্বাররক্ষী দরজা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিলো এবং দেয়ালে গ্রথিত একটি পেরেকের সাথে চাবি লটকিয়ে রাখলো। দারোয়ান ঘুমিয়ে পড়লে আমি উঠে চাবি নিয়ে দরজা খুললাম।
এদিকে কাট্টা কাফির আবু রাফে’ প্রতি রাতের ন্যায় আসর জমিয়ে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা, নৃত্য-তামাশা, মদ্যপানে বিভোর ছিল। তার মজমা শেষ হলে লোকজন চলে গেল। অতঃপর আমি সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে আবু রাফে’র কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় আমি একটি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর থেকে তা আবার বন্ধ করে দিচ্ছিলাম যাতে আবু রাফে’র চেলারা আমার আগমন বুঝতে পারলেও তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত যাতে আমার নিকট পৌঁছতে না পারে। এভাবে ধীরে ধীরে আমি তার নিকট পৌঁছলাম। তখন সে বাতি নিভিয়ে তার পরিবারের মাঝে শুয়ে ছিল। অন্ধকারের কারণে সে ঠিক কোন দিকে শুয়ে ছিল তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল। এমতাবস্থায় তার অবস্থান নির্ণয় করার জন্য আমি ডাক দিলাম, আবু রাফে’। সে জবাব দিলো, কে ডাকছো? তখন আমি তার আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারী দ্বারা প্রচ- জোরে আঘাত করলাম। সে চিৎকার করে উঠলো, বুঝা গেলো আঘাত জায়গা মত লাগেনি। আমি তখন দ্রুত ঘরের বাইরে চলে আসলাম এবং ক্ষণিক পরেই ফের প্রবেশ করে কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে আওয়াজ দিলাম, আবু রাফে’ চিৎকার দিলে কেন? সে তখন আমাকে নিজের লোক মনে করে বলে উঠলো, তোমার মা’র সর্বনাশ হোক, একটু আগেই কে যেন এসে আমাকে তরবারী দ্বারা আঘাত করলো। তার এসব কথাবার্তায় তার অবস্থান সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়ে গেলাম। অতঃপর তখনি তাকে আরো প্রচ- গতিতে তরবারী দ্বারা আঘাত করলাম এবং এক পর্যায়ে তরবারীর মাথা তার পেটের ভিতর প্রবেশ করিয়ে পিঠ পার করে দিলাম। তার দফারফা শেষ করে আমি একটি একটি করে দরজা খুলে নিচে নামতে শুরু করলাম এমনকি সিঁড়ির শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌঁছলাম। এসময় মনে করলাম সিঁড়ির সমস্ত ধাপগুলিই অতিক্রম করেছি অথচ তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিলো। তাই নিচে পা রাখতেই আমি পড়ে গেলাম এবং পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল। আমার মাথার পাগড়ী দিয়ে আমি তৎক্ষণাৎ পা বেঁধে ফেললাম এবং সেখান থেকে আবার একটু দূরে গিয়ে দরজা সোজা বসে রইলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ রাতে কাট্টা কাফির আবু রাফে’র মৃত্যুর খবর না শুনে যাবো না। ভোর রাতে মোরগ ডাকার সময় মৃত্যু ঘোষণাকারী এক ব্যক্তি দুর্গের প্রাচীরের উপর উঠে ঘোষণা দিল- হিজাযের ব্যবসায়ী ইয়াহুদী আবু রাফে’ মারা গেছে। এটা শুনে আমি দ্রুত উঠে আমার সঙ্গী সাথীদের নিকট চলে গেলাম। উনাদের নিকট গিয়ে বললাম, জলদি চলুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আবু রাফে’কে হত্যা করেছেন। তারপর আমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে আবু রাফে’র চিরস্থায়ী দফারফার বিস্তারিত বর্ণনা করলাম। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পায়ের অবস্থা অবলোকন করে আমাকে পা ছড়িয়ে দিতে বললেন। আমি পা ছড়িয়ে দিলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাহ (হস্ত) মুবারক দ্বারা সেটা স্পর্শ করলেন। সাথে সাথেই আমার পা এমন সুস্থ হয়ে গেলো যেন তাতে কোন দিনই কোন আঘাত লাগেনি। (সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)