সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা:
, ১১ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক হচ্ছেন ‘শিয়ারুল ইসলাম’ অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একখানা বিশেষ শি‘আর বা নিদর্শন মুবারক এবং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের পক্ষ থেকে সম্মানিত মুসলমান উনাদের একমাত্র শাসন ব্যবস্থা। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক ব্যতীত কস্মিনকালেও দুনিয়ার যমীনে হাক্বীক্বীভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, সম্মানিত ইসলামী আইন-কানুন জারী হতে পারে না। দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে হাক্বীক্বীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত আদেশ-নির্দেশ মুবারক, হুকুম-আহকামসমূহ, আইন-কানুনসমূহ জারী করতে হলে ‘সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক’ উনার কোনো বিকল্প নেই। যতদিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, ততদিন সম্মানিত মুসলমান উনারা পৃথিবীর বুকে স্বাধীনভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন করতে পেরেছিলেন। কাফির-মুশরিকরা সম্মানিত মুসলমান উনাদের উপর কোনো প্রকার যুলুম-নির্যাতন করার সুযোগ পায়নি, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে নিয়ে কোনো প্রকার চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার সুযোগ পায়নি। তখন জগৎবাসী দুনিয়ার যমীনে থেকেই সম্মানিত জান্নাতী অমীয় সুখ-শান্তি লাভ করেছিলেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিলেন সমগ্র কায়িনাতে। সমগ্র কায়িনাতের বুকে ছিলো সম্মানিত মুসলমান উনাদের একক আধিপত্য। সম্মানিত মুসলমান উনাদের নাম মুবারক শুনলে কাফির-মুশরিকদের অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠতো। কাফির-মুশরিকরা সম্মানিত মুসলমান উনাদের গোলামে পরিণত হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু যখনই সম্মানিত মুসলমান উনারা সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার থেকে দূরে সরে গেছে, তখনই মুসলমানদের অধঃপতন শুরু হয়েছে। আর সেই অধঃপতন আজ কঠিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আজকে মুসলমান উনারা পৃর্থিবীর বুকে স্বাধীনভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন করতে পারছেন না। দিকে দিকে কাফির-মুশরিকদের হাতে মার খাচ্ছেন। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে সম্মানিত মুসলমান উনাদের উপর যুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে না। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই চলছে সম্মানিত মুসলমান উনাদের উপর অবর্ণনীয় যুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার। শহীদ করা হচ্ছে কোটি কোটি মুসলমান উনাদেরকে। ইয্যত-সম্ভ্রম নষ্ট করা হচ্ছে কোটি কোটি মুসলমান মা-বোন উনাদের। না‘উযুবিল্লাহ!
এই বিষয়টি আজ সুস্পষ্ট। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় তিনশ’ কোটিরও বেশী মুসলমান। প্রত্যেকের ঘরে ঘরে রয়েছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ। তারপরেও মুসলমানরা আজ অশ্লীল-অশালীন, হারাম-নাজায়িয ও কুফরী-শিরকীমূলক কার্যকলাপের মহাসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা আজ জাহিলিয়াতের সর্বশেষ সীমায় উপনীত হয়েছেÑ আপন বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে, ভাই-বোন অবৈধ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান স্বয়ং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনাদের ভিতর হারাম সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। (না‘ঊযুবিল্লাহ!) কিন্তু এর কোনো অবসান ঘটছে না; বরং দিন দিন তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৃপক্ষে এর অবসানের জন্য আবশ্যক একজন সম্মানিত খলীফা আলাইহিস সালাম উনার। সেটাই ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন,
لَا يُصْلِحُ النَّاسَ اِلَّا اَمِيْرٌ
অর্থ: “মানুষ কখনোই একজন সম্মানিত খলীফা ব্যতীত পরিশুদ্ধ হতে পারে না, হাক্বীক্বী কল্যাণ লাভ করতে পারে না। ” (শু‘আবুল ঈমান ১০/১৫, কানযুল উম্মাল ৫/৭৫১)
‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ্’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছেন,
اِتَّفَقَ الْاَئِمَّةُ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالـٰى عَلـٰى اَنَّ الْاِمَامَةَ فَرْضٌ وَّاَنَّهٗ لَا بُدَّ لِلْمُسْلِمِيْنَ مِنْ اِمَامٍ يُّـقِيْمُ شَعَائِـرَ الـدِّيْنِ وَيُنْصِفُ الْـمَظْـلُوْمِيْنَ مِنَ الظَّالِـمِيْنَ
অর্থ: “সমস্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত পোষণ করেছেন যে, নিশ্চয়ই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক হচ্ছেন- সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য একটি ফরয অর্থাৎ অপরিহার্য বিষয়। আর নিশ্চয়ই সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য একজন সম্মানিত খলীফা থাকা আবশ্যক যিনি সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার হুকুমসমূহ প্রতিষ্ঠা করবেন, যালিমদের বিরুদ্ধে মযলূমদের পক্ষে ইনছাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। ” সুবহানাল্লাহ! (আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ্ ৫/৩৬৬)
‘শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
وَالْـمُسْلِمُوْنَ لَا بُدَّ لَـهُمْ مِّنْ اِمَامٍ يَّقُوْمُ بِتَنْفِيْذِ اَحْكَامِهِمْ وَاِقَامَةِ حُدُوْدِهِمْ وَسَدِّ ثُغُوْرِهِمْ وَتَـجْهِيْزِ جُيُوْشِهِمْ وَاَخْذِ صَدَقَاتِـهِمْ وَقَهْرِ الْـمُتَغَـلِّـبَةِ وَالْـمُتَلَصِّصَةِ وَقُطَّاعِ الطَّرِيْقِ وَاِقَامَةِ الْـجُمَعِ وَالْاَعْيَادِ وَقَطْعِ الْـمُنَازَعَاتِ الْوَاقِعَةِ بَيْنَ الْعِبَادِ وَقَبُوْلِ الشَّهَادَاتِ الْقَائِمَةِ عَلَى الْـحُقُوْقِ وَتَزْوِيْجِ الصِّغَارِ وَالصَّغَائِرِ الَّذِيْنَ لَا اَوْلِيَاءَ لَـهُمْ وَقِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَنَـحْوِ ذٰلِكَ مِنَ الْاُمُوْرِ الَّتِـىْ لَايَتَوَلَّاهَا اٰحَادُ الْاُمَّةِ
অর্থ: “সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য একজন সম্মানিত খলীফা অপরিহার্য। তিনি তাদের মধ্যে সম্মানিত শরীয়ত উনার আহকামসমূহ জারী করবেন, হুদূদ অর্থাৎ দ-আইন বাস্তবায়ন করবেন, সীমান্ত হিফাযতের ব্যবস্থা করবেন, সেনা অভিযান প্রেরণ করবেন, ছদক্বা উসুল করবেন, যালিম ও চোর-ডাকাত দমন করবেন, পবিত্র জুমু‘আহ্ ও ঈদের নামায ক্বায়িম করবেন, মানুষের বিবাদ ফায়ছালা করবেন এবং বিভিন্ন হক্ব-হুকুকের উপর সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন, অভিভাবকহীন না বালেগ ছেলে-মেয়েদের বিবাহ-শাদী দিবেন এবং গনীমতের মাল বণ্টন করবেন। এরূপভাবে সেসব কাজ করবেন যা সম্মানিত ইমাম অর্থাৎ সম্মানিত খলীফা ব্যতীত উম্মতের অন্য কোনো ব্যক্তি সমাধা করতে সক্ষম নয়। ” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী ১৩৮ নং পৃৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একজন সম্মানিত খলীফা এবং সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনাদের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সুতরাং, সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার জন্য কোশেশ করা এবং বর্তমান যামানার যিনি খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক-এ) জমায়েত হওয়া।
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত খলীফা উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরয
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত খলীফা উনার নিকট আনুগত্যতার বাইআত গ্রহণ করা ফরয
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই দায়িমীভাবে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ পালন করতেই থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (১৬)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত খলীফা উনার শর্তাবলী
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আজ আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে সিব্তু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুল উমাম আল খ¦মিস আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস মুবারক
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার উৎস:
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)