রাজাকার সাঈদির রাজাকারনামা (১)
, ১৫ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ০২ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ২০ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) বিশেষ প্রতিবেদন
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ও সাজাপ্রাপ্ত জামাতের নায়েবে আমীর মালানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্যা রাজাকার।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও বইপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- পিরোজপুরে রাজাকারের তালিকায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম রয়েছে। এছাড়া পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন স্থানে ৪৭টি বধ্যভূমি ও গণকবর, ৩৪০০ মহিলার সম্ভ্রমহরণ, ২৫০০ নরকঙ্কাল, ও ৬৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
কয়েকটি ওয়েবসাইট ও বইপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বরিশাল শহর, ঝালকাঠি, রাজাপুর, কাউখালী, স্বরূপকাঠি, কাঁঠালিয়া, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এবং বাবুগঞ্জে ৬০ ভাগ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বধ্যভূমি ও গণকবর ৪৭টি, ৩ হাজার ৪শ’ জন মহিলা সম্ভ্রম হারিয়েছে, ২ হাজার ৫শ’ নরকঙ্কাল পাওয়া গেছে এবং ৬৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা তদন্তকালে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন বই-পত্র, পেপার-পত্রিকা, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ডা. এমএ হাসান আহ্বায়ক ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, ট্রুথ কমিশন, জেনোসাইড ইন বাংলাদেশে প্রকাশিত ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকায় পিরোজপুরের পাকী বাহিনীর সহযোগী বাহিনী, রাজাকার, আল-বাদর এবং আল-শামস বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। রাজাকার বাহিনীর পিরোজপুর জেলার তালিকায় রাজাকার হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম রয়েছে।
দ্রব্যমূল্য নযি়ন্ত্রণে যসেব পদক্ষপে নযি়ছেলিনে সুলতান আলাউদ্দনি খলিজি
ভারতবর্ষের ইতিহাসের শক্তিশালী নাম সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি। যাঁকে ভারতবর্ষেও অন্যতম শক্তিশালী শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি যুদ্ধ বিজেতা ও প্রশাসক হিসেবে সুলতানি আমলে অসাধারণ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক সংস্কারের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে তিনি ছিলেন মধ্যযুগের ভারতের প্রথম মুসলিম শাসক, যিনি ১. জমি জরিপ করেছিলেন, ২. জায়গির দান বা ভূমিদান প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন, ৩. সমন্বিত রাজস্ব ধার্য করেছিলেন এবং ৪. বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রবর্তন করেছিলেন।
সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির অর্থনৈতিক সংস্কার তাঁর শাসনব্যবস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আলাউদ্দিন খিলজি মোঙ্গল আক্রমণ মোকাবেলা ও রাজ্য জয়ের জন্য একটি বিশাল সেনাবাহিনী প্রতিপালন করতেন। সুলতান একজন অশ্বারোহী সৈনিকের বার্ষিক বেতন ২৩৪ টাকা নির্ধারণ করেন এবং কোনো সেনার একটি অতিরিক্ত ঘোড়া থাকলে তাকে বছরে আরো ৭৮ টাকা বেশি দেওয়া হতো। সুলতান আরো বুঝতে পারেন, এত বড় সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার হ্রাস করার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নির্ধারণ অথবা সেনাদের বেতন বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ সামরিক বাহিনীর স্বার্থেই সুলতান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ চালু করেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়তে থাকলে সেনারা নির্ধারিত বেতনে কাজ করতে পারবে না। এই উদ্দেশ্যে সুলতান নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির বাজারদর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধিমালা মোতাবেক নির্দিষ্ট করে দেন মান এবং চাহিদার ভিত্তিতে।
যুদ্ধকালীন দ্রব্যাদির অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শস্যের বাজার প্রায়ই চড়া থাকত। আলাউদ্দিন খিলজি এই অসুবিধা দূরীকরণে দিল্লি ও এর আশপাশে রাজকীয় শস্যভা-ার নির্মাণ করে সেখানে খাদ্যশস্য মজুদ করতেন, যাতে অভাবের সময় কম মূল্যে ওই খাদ্যশস্য বাজারে ছাড়া যায়। সুলতানের আদেশমতো খাদ্যশস্য কেন্দ্রীয় শস্যাগারে জমা করা হতো। বিভিন্ন এলাকা থেকে শস্য আমদানি করার জন্য ব্যবসায়ীদের অগ্রিম টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যশস্য, কাপড়চোপড়, ঘোড়া এবং অন্যান্য গৃহপালিত পশু বাজারদর নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতাভুক্ত হয়। এই আইন যথাযথভাবে পালনের জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং আইন ভঙ্গকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই ব্যবস্থা সঠিকরূপে পালিত হচ্ছে কি না, তা তদারক করার জন্য সুলতান একটি বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োগ করেন। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি সব ব্যবসায়ীকে তালিকাভুক্ত করেন। মূল্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে কার্যকর করা ও বাজার তদারকির জন্য সুলতান আলাউদ্দিন দিওয়ান-ই রিয়াসাত ও শাহানা-ই মান্ডি উপাধিধারী দুজন পদস্থ কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। তাঁদের অধীন নিযুক্ত নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীও বাজার পরিদর্শন করত। এ সংক্রান্ত কঠোর আইন প্রণয়নের ফলে পণ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসে। একটি প্রথম শ্রেণির ঘোড়া ১০০ হতে ১২০ টাকায়, একটি দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোড়া ৮০ থেকে ৯০ টাকায় এবং তৃতীয় শ্রেণির ঘোড়া ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। একটি দুগ্ধবতী গাভি তিন-চার টাকায় পাওয়া যেত এবং অনুরূপভাবে সব ব্যবহার্য জিনিসের দামও কম ছিল।
এ ছাড়া ভোক্তাদের স্বল্প মূল্যে সঠিক মাপে পণ্য ক্রয় নিশ্চিত করতে সঠিক ওজন দেওয়ার প্রতি কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে দোকানিরা ওজনে কম দিত না। সুলতান নিজেও মাঝে মাঝে বাজার তদারক করতেন।
সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ এবং শাসন সংস্কার অত্যন্ত সফল হয়। তিনি সুদক্ষ সেনাবাহিনীর সাহায্যে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করেন ও দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনসাধারণ উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে। দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হওয়ার এবং প্রচুর জিনিসপত্র বাজারে আমদানি হওয়ার ফলে জনসাধারণের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভারতীয় পানি আগ্রাসন, ফারাক্কা ও তিস্তা ব্যারেজ : বাংলাদেশের মরণ ফাঁদ (২)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৫)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৪)
০৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৩)
০৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৩)
০৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (২)
০৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (১)
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৬)
০১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৫)
৩১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৪)
৩০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৩)
২৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-২)
২৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)