মালিকাতুল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র জীবনী মুবারক
, ৪ঠা জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
বংশীয় পবিত্রতা মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ
অর্থ: (আমার হাবীব মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও ছিল সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ! (ও পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
‘তাফসীরে কবীর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছেন,
فَالْاٰيَةُ دَالَّـةٌ عَلـٰى اَنَّ جَمِيعَ ابَاءِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانُوْا مُسْلِمِيْنَ.
অর্থ: এই আয়াত শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই সর্বোত্তম মুসলমান ছিলেন, সর্বশ্রেষ্ঠ ঈমানদার ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ ১৩/৩২)
আরো উল্লেখ রয়েছে যে,
اِنَّهٗ كَانَ يَنْقُلُ نُوْرَهُ مِنْ سَاجِدٍ إِلَى سَاجِدٍ.
অর্থ: নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ ১৩/৩২, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ শরীফ ১/১০৪, শরহুয যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব ১/৩২৬, তারীখুল খমীস ১/২৩৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَمْ اَزَلْ اُنْقَلُ مِنْ اَصْلَابِ الطَّاهِرِيْنَ اِلى اَرْحَامِ الطَّاهِرَاتِ.
অর্থ: আমি সবসময় পূতঃপবিত্র পুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে পূত-পবিত্রা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হয়েছি। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই ন আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম ভাগে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উভয় ভাগকে তিন প্রকারে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম প্রকারে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর প্রত্যেক প্রকারকে গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম গোত্র মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর গোত্রকে আহাল (পরিবার) মুবারক-এ বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম আহাল (পরিবার) মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ কারণেই ন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘হে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই ন আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। ’ সুবহানাল্লাহ! আর আমি এবং আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র। সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, শিফা শরীফ ১/৩২৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫ ইত্যাদি)
সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীনদার, ন আল্লাহ পাক উনার আখাছ্ছুল খাছ বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উনারা অনেকেই ছিলেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। আর যাঁরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ছিলেন না, উনারা ছিলেন সেই যামানায় ন আল্লাহ পাক উনার আখাছ্ছুল খাছ লক্ষ্যস্থল। উনারা প্রত্যেকেই সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
‘নিহায়াতুল ঈজাযে’ বর্ণিত রয়েছেন,
سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَفْضَلُ اِمْرَاَةٍ فِىْ قُرَيْشٍ حَسَبًا وَنَسَبًا وَجَمَالًا.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশীয় তথা কায়িনাতের সকল মহিলাদের মধ্যে মান, মর্যাদা, সম্মান, বংশ ও সৌন্দর্যগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠা। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছেন-
وَهِىَ يَوْمَئِذٍ اَفْضَلُ اِمْرَاَةٍ فِـىْ قُرَيْشٍ نَسَبًا وَمَوْضِعًا.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কুরাইশ তথা কায়িনাতের সমস্ত মহিলাদের মধ্যে মুবারক বংশগত ও অবস্থানগত তথা পিতা-মাতা উনাদের উভয়ের দিক থেকে অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সর্বশ্রেষ্ঠা। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ, দালাইলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, শরহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব, শরফুল মুস্ত¡ফা)
সুতরাং সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, মালিকাতুল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশীয় পবিত্রতা মুবারক উনার বিষয়টি যে কতো বেমেছাল তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! যা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা-কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের বুযূর্গী-সম্মান মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা সাইয়্যিদুল বাশার, জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (লিউম্মিন) সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি এবং সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ বিনতে আব্দুল উয্যা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা ছিলেন ন আল্লাহ পাক উনার আখাছ্ছুল খাছ মাহবূব এবং মাহবূবাহ। সুবহানাল্লাহ! উনারা হচ্ছেন সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! উনাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছেন উনারা হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত নানা আলাইহিস সালাম ও সম্মানিতা হযরত নানী আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম ও সম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনারা শুধু ন আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বর্ণনা করে উনার সম্মানিতা বানাত, লখতে জিগার, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা ‘না’ত শরীফ’ পাঠ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত না’ত শরীফখানা হচ্ছেন,
اِنّـِىْ لَبَاكِيَة ٌوَهْبًا فَمُعْوِلَةٌ ৃৃৃৃوَهْبُ بْنُ عَبْدِ مَنَافٍ سَيّـِدُ النَّاسِ
فَقَدْ رُزِئْتُ كَرِيْمًا غَيْرَ مُؤْتَشَبٍ ..........ضَخْمَ الدَّسِيْعَةِ حَنَّاسًا لّـِحَنَّاسِ
مَاضِىَ الْعَزِيـْمَةِ لَايـَخْشٰى غَوَائِلَهٗ .......مِنْ جَوْهَرٍ مّـِنْ قُرَيْشٍ غَيْرِ اَنْكَاسِ
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আমার হযরত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অত্যন্ত কঠিনভাবে নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করছি (কান্না মুবারক করছি)। অতঃপর আমি হয়েছি অত্যন্ত মুহব্বত মুবারক উনার সাথে বেমেছাল নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রকাশকারিণী (ক্রন্দনকারিণী)।
আমার হযরত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুন নাস তথা সমস্ত মানুষের সাইয়্যিদ। সুবহানাল্লাহ!
নিশ্চয়ই আমি বঞ্চিত হয়েছি দয়াময়, দাতা, রহমশীল, স্নেহময়, মর্যাদাবান, হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার স্নেহ, করুণা, আদর, মমতা মুবারক থেকে। যিনি ছিলেন বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফাযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারী এবং নছব মুবারক উনার দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ, সম্ভ্রান্ত ও পূতঃপবিত্র বংশ মুবারক উনার অধিকারী। উনার বংশ মুবারক-এ কস্মিনকালেও কোন প্রকার অপবিত্রতার ছোঁয়াও লাগেনি। সুবহানাল্লাহ!
তিনি ছিলেন অপরিসীম দাতা, মযলূমদের তরে সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয়দানকারী এবং যালিমদের যুলুম প্রতিহতকারী, তাদেরকে সমুচিত শিক্ষাদানকারী। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বীরত্ব মুবারক উনার অধিকারী, তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বীর, উনার সমকক্ষ আর কেউ ছিলো না। সুবহানাল্লাহ!
তিনি ছিলেন দৃঢ়তার তীক্ষè ধারালো তরবারী মুবারক। তিনি উনার বিপদ-আপদ, বিদ্বেষ, শত্রুতা, শত্রু কোন কিছুকেই কখনও কোন প্রকার পরোয়া করতেন না, ভয় করতেন না। সুবহানাল্লাহ!
আমার হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কুরাইশ উনাদের মধ্যে জাওহার তথা মণি বা রতœ তুল্য, তিনি ছিলেন সর্বময় গুণাবলী মুবারক উনাদের অধিকারী এবং সর্বপ্রকার দুর্বলতা থেকে পূতঃপবিত্র। সুবহানাল্লাহ! (আল বাদ্উ ওয়াত তারীখ ৪/১১৬)
আওলাদ লাভের জন্য দোআ মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দীর্ঘ বছর অতিবাহিত হয়। কিন্তু উনাদের কোন আওলাদ ছিলেন না। তাই উনারা আওলাদ লাভের জন্য ন আল্লাহ পাক উনার নিকট অনেক রোনাজারী-আহাজারী করেন, দোআ মুবারক করেন এবং ন আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় অনেক দান-ছদক্বাহ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উনারা ন আল্লাহ পাক উনার নিকট দোআ মুবারক করেন, “আয় বারে এলাহী! আমাদেরকে একজন আওলাদ (সন্তান) হাদিয়া মুবারক করুন। যদি আমাদের একজন আওলাদ (সন্তান) বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তাহলে শুকরিয়াস্বরূপ আমরা মক্কা শরীফ-এ যেয়ে হজ্জ মুবারক আদায় করবো। সুবহানাল্লাহ!
বরকতময় রগায়িব শরীফ:
সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা একজন আওলাদ লাভের জন্য ন আল্লাহ পাক উনার নিকট অনেক রোনাজারী-আহাজারী করেন, দোআ মুবারক করেন। ন আল্লাহ পাক তিনি উনাদের দোআ মুবারক কবুল করে নেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর ন আল্লাহ পাক তিনি উনার নিকট অতিপছন্দনীয় এক রজনী মুবারক উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘রগায়িব শরীফ’ উনার রজনী মুবারক হিসেবে নির্দিষ্ট করেন। অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ন আল্লাহ পাক উনার নিকট অতিপছন্দনীয় এক রজনী মুবারক-এ উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ (রেহেম শরীফ মুবারক-এ) কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! সেই রজনী মুবারক-এ ন আল্লাহ পাক তিনি সারা কায়িনাতে বেমেছাল রহমত, বরকত ও সাকীনা মুবারক বর্ষণ করেন। সুবহানাল্লাহ! জান্নাত মুবারক উনাকে অপরূপ সাজে সুসজ্জিত করেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুবারকবাদ জানানোর জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া:
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার আখাছ্ছুল খাছ মাহবূবাহ ব্যক্তিত্বা মুবারক মালিকাতুল কায়িনাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ব্যাপারে এবং উনার ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক বর্ণনা করে সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনাকে এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে অনেক সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! বিশেষ করে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ (রেহেম শরীফ মুবারক-এ) অবস্থানকালীন সময়ে ন আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে আরো আখাছ্ছুল খাছ সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন এবং তিনি যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম হবেন সেই বিষয়েও আখাছ্ছুল খাছ সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুন নাস সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার স্বপ্ন মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ (রেহেম শরীফ-এ) অবস্থান মুবারক করছিলেন, তখন একদা উনার আব্বাজান সাইয়্যিদুন নাস সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক দেখতে পান। তিনি দেখেন, একজন বুযূর্গ ব্যক্তি তিনি উনাকে লক্ষ্য করে বলছেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম! আপনি কায়িনাতের বুকে সবচেয়ে বড় ভাগ্যবান। সুবহানাল্লাহ! ভবিষ্যতে এমন একজন সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার সাথে আপনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হবে, যিনি হবেন সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী এবং সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! তিনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর হিদায়াত, মুক্তি ও প্রকৃত কামিয়াবী দানের লক্ষ্যে সকলের জন্য রহমত মুবারকস্বরূপ প্রেরিত হবেন। সুবহানাল্লাহ! আরবের লোকেরা উনাকে ‘আল আমীন’ বলে আহ্বান মুবারক করবে। সুবহানাল্লাহ! আর উনারই সম্মানিতা আম্মাজান হবেন আপনার এই আওলাদ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাই আপনার এই আওলাদ আলাইহাস সালাম তিনি বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার নাম মুবারক রাখবেন ‘হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক উনার ৭২ বছর পূর্বে সাইয়্যিদু সায়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাস উনার ৫ তারিখ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ ফজর মদীনা শরীফ উনার কুরাইশ বংশের বনু যুহরাহ গোত্রে বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার এবং উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য ন আল্লাহ পাক তিনি জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ বিশেষ সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يٰاَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مّـِنْ رَّبّـِكـُمْ وَشِفَاءٌ لِّـمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لّـِلْمُؤْمِنِيْنَ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ.
অর্থ: হে মানুষেরা! হে সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসী! অবশ্যই তোমাদের মাঝে ন আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সর্বপ্রকার ব্যাধিসমূহের সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্যদানকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ হিদায়াতদানকারী এবং খাছ করে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতবাসী সকলের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত মুবারকস্বরূপ আমার যিনি হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! হে আমার হাবীব মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলকে জানিয়ে দিন, ন আল্লাহ পাক তিনি যে, ফযল মুবারক এবং রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে। সুবহানাল্লাহ! এই ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করাটা, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাটা সবকিছু থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম; যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে। সুবহানাল্লাহ! (ও পবিত্র সূরা ইউনূস শরীফ: ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
এই ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা যেমন ফরয, তেমনিভাবে উনার আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাও ফরয তো অবশ্যই; বরং ফরয উনার উপর ফরয। সুবহানাল্লাহ! কেননা উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব ন আল্লাহ পাক তিনি নিজে খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সারা পৃথিবী, সারা কায়িনাত এবং সমস্ত জান্নাত মুবারক উনাদেরকে অপরূপ সাজে সুসজ্জিত করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সমস্ত কায়িনাতকে খুশী মুবারক প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ মুবারক দেন এবং ন আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়াী সমস্ত কায়িনাত খুশীতে মাতোওয়ারা হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়; ন আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়াী সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে খুশী মুবারক প্রকাশ করে আহলান-সাহলান জানান। সুবহানাল্লাহ!
আর সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা উনাদের একমাত্র আওলাদ আলাইহাস সালাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে বেমেছাল খুশি মুবারক প্রকাশ করেন এবং ন আল্লাহ পাক উনার বেমেছাল প্রশংসা মুবারক করেন ও শুকরিয়া মুবারক আদায় করেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের হুজরা শরীফ-এ খুশির জোয়ার বয়ে যায়। উনারা এতো বেমেছাল খুশি মুবারক প্রকাশ করেন যা সমস্ত কায়িনাতের চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
আক্বীক্বা মুবারক দেয়া এবং বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক রাখা:
সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিন ১১ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (রবীউল আউওয়াল শরীফ) ইয়াওমুল খ¦মীস শরীফ (বৃহস্পতিবার) উনার আক্বীক্বা মুবারক দেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উনার বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক রাখেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত (اٰمِنَةُ, اَمِيْنَةُ) আমিনা আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক উনার অর্থ ও তাৎপর্য মুবারক:
‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত (اٰمِنَةُ, اَمِيْنَةُ) আমিনা আলাইহাস সালাম’। এই নাম মুবারক উনার আভিধানিক অর্থ মুবারক হচ্ছেন, ঈমানদার, মু’মিনা, বিশ্বাসী, নিরাপদ, বিশ্বস্ত, আমানতদার ইত্যাদি। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইসম বা নাম মুবারক থেকেই উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! মূলত যিনি খালিক্ব মালিক রব ন আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম হিসেবে সর্বপ্রকার সর্বোত্তম গুণাবলী মুবারক হাদিয়া মুবারক করে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈমানদার হিসেবেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন এবং দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদার, মু’মিনা: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কায়িনাতের বুকে সর্বশ্রেষ্ঠা ঈমানদার, মু’মিনা। সুবহানাল্লাহ! তিনি ন আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রতি যেরূপ সর্বোত্তমভাবে ঈমান মুবারক এনেছেন, কায়িনাতের কারো পক্ষে এরূপ সর্বোত্তমভাবে ঈমান মুবারক আনা সম্ভব হয়নি এবং হবেও না। সুবহানাল্লাহ! মূলত, উনার সম্মানার্থে সমস্ত কায়িনাত ঈমান মুবারক লাভ করেছে, করছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঈমান মুবারক লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! তাই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন ‘আমিনা বা ঈমানদার, মু’মিনা’। সুবহানাল্লাহ!
আমানতদার: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ন আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ আমানত ও নিয়ামত মুবারক হিসেবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গ্রহণ মুবারক করেছেন, ধারণ মুবারক করেছেন এবং উনার খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এটা উনার একক, অনন্য খুছূছিয়াত বা বেশিষ্ট্য মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন ‘আমিনা বা সর্বশ্রেষ্ঠা আমানতদার’। সুবহানাল্লাহ!
নিরাপদ: ন আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে নিরাপদ বা মুক্ত করে, সমস্ত কায়িনাত থেকে বেনিয়ায করে উনাকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এই প্রসঙ্গে ন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْرًا.
অর্থ: হে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই ন আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (সূরা আহযাব শরীফ : ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
هُمْ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنَ السُّوْءِ وَاخْتَصَّهُمْ بِرَحْمَتِهٖ.
অর্থ: উনারা হচ্ছেন হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। ন আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা ও পাপ থেকে পূত-পবিত্র রেখেছেন এবং উনার রহমত মুবারক দ্বারা খাছ করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.
অর্থ: আমরা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! ন আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদেরকে (আমাদেরকে) নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা খিদমত মুবারক, রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দুররে মানছূর ৬/৬০৬, ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)
উপরোক্ত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন ‘আমিনা বা নিরাপদ’ তথা পূত-পবিত্রা, বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ!
বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কি আশ্চার্যজনক সামনযশ্যতা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন (الامين)আল আমীন, আর উনার সম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন (امينة)‘আমীনা’। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে অল্প বয়স মুবারক থেকেই সকলের মাঝে বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে উনার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও দুনিয়াবী দৃষ্টিতে অল্প বয়স মুবারক থেকেই সকলের মাঝে বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে কিতাবে একখানা ঘটনা মুবারক উল্লেখ করা হয় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক যখন সাত বছর, তখন একদা তিনি উনার এক মুহব্বতকারিণীর বাড়িতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় তাদের বাড়ির কাছে পথিমধ্যে একটি স্বর্ণমুদ্রা দেখতে পেলেন। তিনি মুদ্রাটি তুলে নিলেন। পরক্ষণে তিনি চিন্তা করলেন, এটা কার মুদ্রা, তা হাতে নেয়া কতটুকু ঠিক হলো। যে তা হারিয়েছে নিশ্চয়ই সে তা অনুসন্ধান করছে। হয়তো সে খোঁজ করতে করতে এখানেও আসবে। তা যথা স্থানে পড়ে থাকলে দেখে সে নিজের জিনিসটি তখন পেতে পারবে। তিনি এরূপ ভেবে সে দীনারটি যেখানে পড়ে ছিলো, সেখানেই রাখতে গেলেন। কিন্তু হঠাৎ আবার উনার মনে উদয় হলো যে, জিনিসটি মূল্যবান, তাই ওখানে রেখে দিলে হয়তো তা প্রকৃত মালিকের হাতে না পড়ে অন্যের হাতেও পড়ে যেতে পারে। কারণ পথের উপরে তা পড়ে থাকলে যে দেখবে সে-ই তুলে নিবে। অতএব, তা ওখানে ফেলে রাখা ঠিক হবে না। তার চেয়ে তা নিজের নিকট রেখে অনুসন্ধান করে দেখা উত্তম যে, দীনারটি কে হারিয়েছে?
অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীনারটি হাতের মুঠোয় নিয়ে উনার মুহব্বতকারিণীর বাড়িতে গেলেন এবং তার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, তোমাদের বাড়ীতে আসার সময় আমি পথে এই দীনারটি পেয়েছি। বলতো এখন কিভাবে এর প্রকৃত মালিককে বের করে তা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি? সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক শুনে উনার মুহব্বতকারিণী বললো, আরে আপনি এ ব্যাপারে এত ব্যস্ত হয়েছেন কেন, কত জনেরই কতো জিনিস হারিয়ে যায়। হারানো জিনিস আবার ফেরত পায় নাকি? আর পথের উপরে পাওয়া জিনিস ফেরতই বা কে কবে দেয় শুনি? আপনি এই বিষয়টি নিয়ে এতো চিন্তা করছেন কেন? চলুন, আমরা দোকানে যেয়ে তা দ্বারা ভালো কিছু জিনিস কিনে খাই আর মনের মতো কতগুলি সখের জিনিস ক্রয় করি।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখলেন, উনার মুহব্বতকারিণীর মতলব মোটেই ভালো নয়। তিনি তার কথায় চরম অস্তুষ্ট হলেন এবং তাকে বললেন- না, তা কখনো হতে পারে না। দীনারটির প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করে তাকে তা অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। তিনি মনে মনে স্থির করলেন, বাড়ি যেয়ে উনার হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম উনার এবং সম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের নিকট দীনারটির কথা বলবেন এবং উনাদের দ্বারা এর মালিককে খোঁজ করে দীনারটি তার হাতে ফিরিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর বিলম্ব না করে নিজেদের বাড়ি অভিমুখে চললেন। পথে বের হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলেন, এক বৃদ্ধ লাঠি ভর দিয়ে ধীরে ধীরে এই দিকে এগিয়ে আসছে আর সে চোখের দৃষ্টি নিচু করে পথের উপরে কি যেন খুঁজতে খুঁজতে অগ্রসর হচ্ছে। বৃদ্ধের গতি-বিধি ও চোখ-মুখের অবস্থা দেখে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বুঝতে আর বাকী রইলো না যে, এই বৃদ্ধ লোকটিই দীনারটি হারিয়েছে। তিনি বৃদ্ধের নিকটবর্তী হয়ে কোমল কণ্ঠ মুবারক-এ জিজ্ঞাসা করলেন, এই পথে আপনি কি কিছু হারিয়েছেন? বৃদ্ধ লোকটি উত্তর দিলো, হ্যাঁ মা, আমার একটি স্বর্ণমুদ্রা এই রাস্তার উপরই কোনখানে যেন পড়ে গেছে। দীনারটি বড় কষ্টে আমি সঞ্চয় করেছিলাম। পর পর তিনদিন অনাহারে থাকার পর অবশেষে বাধ্য হয়ে আজ সেই সঞ্চিত মুদ্রাটি নিয়ে কিছু খাবার ক্রয় করার জন্য বাজারে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাস্তায় চলাকালে না জানি কোথায় কেমনভাবে দীনারটি পড়ে গেছে। এখন আমার ঘরে এমন আর কোনো সম্বল নেই যে, যা দ্বারা একটি দিনেরও মাত্র খোরাক যোগাড় করতে পারি। এখন নিশ্চয়ই আমাকে ঘরের সবাইকে নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।
বৃদ্ধের এই করুণ কথা শুনে এবং তার বিষণœ বদন দেখে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হৃদয় মুবারক ব্যথিত হয়ে উঠলেন। তিনি বৃদ্ধের হাত ধরে তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসলেন এবং উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে বলে তাকে সযতেœ পেট ভরে খাওয়া-দাওয়া করালেন। সুবহানাল্লাহ! বৃদ্ধ লোকটি এরূপ যতœ লাভ করে এবং তৃপ্তি সহকারে খাওয়া-দাওয়া গ্রহণ করে দীনারের কথা একরূপ ভুলেই গিয়েছিলো। তাছাড়া কোনো কিছু হারিয়ে গেলে তা আর পুনরায় পাওয়া যায় না, এইরূপ ধারণা করে বৃদ্ধ বিদায় হওয়ার জন্য তৈরি হলো এবং বিদায় গ্রহণকালে তার প্রতি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এরূপ সর্বোত্তম ব্যবহারের কারণে কৃজ্ঞতা প্রকাশ করলো এবং তার ভাষায় উনার জন্য দোয়া করলো। অতঃপর বৃদ্ধ লোকটি উঠে পা বাড়াবে ঠিক এমন সময় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি আপনাকে যেজন্য এখানে ডেকে এনেছি তা তো বলা হয়নি। ‘দেখুন তো’ এই দীনারটি আপনার কিনা? এই কথা বলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীনারটি তার হাতে দিলেন। বৃদ্ধ লোকটি দীনারটি হাতে নিয়ে অত্যন্ত খুশি হয়ে বললো, হ্যাঁ, মা, এই দীনারটিই হারিয়ে গিয়েছিলো। এই তো বহুদিন ঘরে রাখার ফলে তার কোণায় যেই দাগটি পড়েছিলো, তা দেখা যাচ্ছে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, বেশ, তাহলে এবার আপনার দীনারটি আপনি নিয়ে যান। দীনারটি আমি পথে পেয়ে প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দেবার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। এই মুহূর্তে আমি মালিকের হাতে দীনারটি তুলে দিতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি। সুবহানাল্লাহ!
আনন্দের আতিশয্যে বৃদ্ধের নেত্রযুগল হতে আনন্দের তপ্ত আঁশু দু’ গাল বেয়ে ঝরে পড়লো। সে বললো, মা আপনি দীর্ঘজীবী হোন! এতটুকু বয়স মুবারক-এ সততার যে প্রমাণ আপনি দিলেন, তাতে আশ্চর্য না হয়ে পারছি না। মা আপনার জন্য দোআ করি, ইতহাসে আপনি বাক্বা লাভ করুন, যে জীবন ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে যেন আপনার নাম মুবারক স্মরণ করে এবং আপনার এ আদর্শ মুবারক উনার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। এই কথা বলে বৃদ্ধ লোকটি বিদায় নিলো। সুবহানাল্লাহ!
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য শুধু ওই লোকটিই দোয়া করলো না; বরং উনার হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম তিনি এবং সম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা উনাদের এই অল্প বয়স্কা সম্মানিতা আওলাদ আলাইহাস সালাম উনার এমন সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক ও সততা মুবারক উনাদের বহি:প্রকাশ মুবারক দেখে অভিভূত হয়ে পড়লেন এবং গর্বে ও আনন্দে স্বীয় সম্মানিতা আওলাদ আলাইহাস সালাম উনার জন্য দু’হাত মুবারক তুলে ন আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ দোয়া মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ!
কুনিয়াত মুবারক:
উম্মু মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু কুছাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
লক্বব মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন অসীম, ঠিক তেমনিভাবে উনার লক্বব মুবারক উনাদের সংখ্যাও অসীম। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে ন আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ন আল্লাহ পাক উনার পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম হওয়ার কারণে উনার লক্বব মুবারক উনাদের সংখ্যাও অসংখ্য-অসীম। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু ন আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সমস্ত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! ঠিক একইভাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম হওয়ার করণে উনার লক্বব মুবারক উনাদের সংখ্যাও অসংখ্য-অসীম। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু ন আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত লক্বব মুবারক রয়েছেন, সমস্ত লক্বব মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!
উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, মালিকু আহলি বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, হাবীবাতুল্লাহ, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত ইত্যাদি। এছাড়াও অসংখ্য-অসীম লক্বব মুবারক উনাদের মালিকাহ হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
ইলম মুবারক:
মূলত, ন আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইলমে গইব মুবারকসহ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার ইলম মুবারক উনার কোনো কুল-কিনারা নেই। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ سَعِيدِ ۨ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم اتَّقُوا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ.
অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মু’মিন তথা ওলীআল্লাহ উনার ফিরাসাত তথা অন্তরদৃষ্টি মুবারক উনাকে ভয় করো। কেননা তিনি ন আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক দ্বারা দেখে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আল মু’জামুল কাবীর ৭/১০৯, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৩/৩১২, আহকামুশ শরীয়াহ ৩/২৯৩, মুসনাদুশ শামিয়্যীন ৩/১৮৩)
মূলত, ওলীআল্লাহগণ উনারা নূর মুবারক উনার মাধ্যমেই সমস্ত কায়িনাত, জান্নাত-জাহান্নাম, সাত আসমান, সাত যমীন সমস্ত কিছু দেখতে পান। সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুই উনাদের দৃষ্টি মুবারক উনার অন্তরালে থাকে না। আর উনারা এই নূর মুবারক তথা ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক লাভ করে থাকেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে যিনি যত বেশি নূর মুবারক তথা ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক গ্রহণ করতে পারেন, উনার ইলম মুবারক উনার গভীরতা তত বেশি ও ব্যাপক হয়। সুবহানাল্লাহ! যদি বিষয়টি এরূপ হয়, তাহলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে ধারণ মুবারক করেছেন, তাহলে উনার ইলম মুবারক উনার বিষয়টি কত ব্যাপক হবে, সেটা মাখলূকাতের চিন্তা-কল্পনার সীমাহীন ঊর্ধ্বে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, তিনি ইলমে গইব মুবারকসহ যত প্রকার ইলম মুবারক রয়েছেন সমস্ত প্রকার ইলম মুবারক উনাদের মালিকাহ তথা ছাহিবাতু জামি‘য়িল ইলম, মালিকাতু জামি‘য়িল ইলম। সুবহানাল্লাহ! ন আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই দায়িমীভাবে উনার কাছে সুস্পষ্ট। সুবহানাল্লাহ! কায়িনাতের কোনো কিছুই উনার নিকট অস্পষ্ট নেই, অজানা নেই। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করাটাও চরম আদবের খিলাফ ও সুস্পষ্ট কুফরী। নাঊযুবিল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বরকতময় বিছলী শান মুবারক প্রকাশ করার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ যে বেমেছাল না‘ত শরীফ ইরশাদ মুবারক করেছেন (পাঠ করেছেন) সেই বেমেছাল না‘ত শরীফখানা ফিকির করলেই উনার ইলম মুবারক উনার ব্যাপকতার বিষয়টা সুস্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
প্রকৃপক্ষে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থেই ওলীআল্লাহগণ উনারা এবং কুল কায়িনাতের সকলেই ইলম মুবারকসহ সমস্ত প্রকার নিয়ামত মুবারক লাভ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নিকট সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে নূর মুবারক, ইলিম, পবিত্রতা, দয়া-দান, ইহসান মুবারক ও তাওফীক্ব ভিক্ষা চাচ্ছি। তিনি আমাদেরকে খছভাবে কবূল করুন। আমীন!
বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক ও শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক ও শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক সম্পর্কে ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম! আমি আশা করি, আপনি আমার পক্ষ থেকে এমন একজন সম্মানিতা মেয়ে উনার কাছে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার বিষয়ে প্রস্তাব মুবারক দিবেন, যিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠা, সর্বোত্তম চরিত্র মুবারক উনার অধিকারিণী, অতি উত্তম জিসম মুবারক উনার অধিকারিণী, সুদর্শনা, ন্যায়পরায়ণী, উজ্জ্বল দীপ্তিময়ী, সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণতার অধিকারিণী, বেমেছাল মান-সম্মান-ইজ্জত মুবারক উনার অধিকারিণী, সর্বশ্রেষ্ঠা ও সুউচ্চ বংশীয়া। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার স্নেহের আওলাদ আলাইহিস সালাম! আপনার জন্য মুহব্বত মুবারক ও সম্মান-ইজ্জত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি কুরাইশ বংশ উনার ও আরবের সকল গোত্রের সমস্ত কুমারী মেয়ে উনাদের ব্যাপারে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সংবাদ নিলেন। কিন্তু তিনি একমাত্র সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ব্যতীত অন্য কাউকে উপরোক্ত সমস্ত গুণাবলী মুবারক উনাদের অধিকারিণী পেলেন না। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম! আপনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনাকে দেখুন। তারপর তিনি পুনরায় দেখতে গেলেন এবং উনার দিকে তাকালেন। তখন তিনি উনাকে এমতাবস্থায় দেখলেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেন মুক্তা সাদৃশ্য তারকার ন্যায় নূর মুবারক বিচ্ছুরণ করছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
‘আল বারাহীনুল ক্বিত্ব‘ইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে,
وهو اراد ايضا تزويج حَضْرَتْ عبد الله عليه السلام فكان يتفحص امراة تكون بشرف النسب والحسب والعفة ممتازة فى الدرجة القصوى فوجد حَضْرَتْ امنة عليها السلام ابنت حَضْرَتْ وهب عليه السلام متصفة بهذه الاوصاف.
অর্থ: আর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও তখন উনার আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ করানোর জন্য এমন একজন সম্মানিতা মেয়ে অনুসন্ধান করছিলেন, যিনি হবেন সর্বোচ্চ বংশীয়া এবং সম্মান-ইজ্জত মুবারক, পবিত্রতা মুবারক ও চারিত্রিক নিষ্কুলষতার দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই সকল গুণের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণে গুণান্বিতা পেলেন। সুবহানাল্লাহ!
‘নিহায়াতুল ঈজাযে’ বর্ণিত রয়েছে,
سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَفْضَلُ امْرَأَةٍ فِىْ قُرَيْشٍ حَسَبًا وَّنَسَبًا وَّجَمَالًا.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশীয় তথা কায়িনাতের সকল মহিলা উনাদের মধ্যে মান, মর্যাদা, সম্মান, বংশ ও সৌন্দর্যগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠা। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
وَهِىَ يَوْمَئِذٍ اَفْضَلُ امْرَأَةٍ فِىْ قُرَيْشٍ نَسَبًا وَّمَوْضِعًا.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কুরাইশ তথা কায়িনাতের সমস্ত মহিলা উনাদের মধ্যে মুবারক বংশগত ও অবস্থানগত তথা হযরত পিতা আলাইহিস সালাম উনার এবং সম্মানিতা হযরত মাতা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের দিক থেকে অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সর্বদিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠা, সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ, দালাইলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, শরহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব, শরফুল মুস্ত¡ফা)
মূলত, ন আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম হিসেবে, সর্বপ্রকার সর্বোত্তম ছিফত তথা গুণাবলী মুবারক, খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক ও শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাদিয়া মুবারক করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে তিনি ছিলেন যাহিরী-বাতিনী সৌন্দর্য মুবারক, সুমহান চরিত্র মুবারক ও শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার দিক থেকে কায়িনাতের বুকে অদ্বিতীয়া। উনার কোনো মেছাল নেই। উনার মেছাল তিনি নিজেই। সুবহানাল্লাহ! যা ভাষায় প্রকাশ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ!
বিভিন্ন দিক থেকে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব মুবারক এবং অস্বীকৃতি মুবারক জ্ঞাপন:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وَقَدْ كَانَ خَطَبَهَا اَشْرَافُ قُرَيْشٍ وَّكَانَتْ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ تأبى ذلك.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুরাইশ বংশের অভিজাত ব্যক্তিবর্গ ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলো; কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন। সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস শরীফ ১/৮২)
এমনকি কথিত শক্তিধর রোম-পারস্য শাসকদের পক্ষ থেকেও উনার নিকট প্রস্তাবনা এসেছে। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার স্বপ্ন মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি এক রাতে এক বিশেষ স্বপ্ন মুবারক দেখেন। এক বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে বলছেন, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম! স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব ন আল্লাহ পাক তিনি আপনার সম্মানিতা আওলাদ (মেয়ে) আলাইহাস সালাম উনার তত্ত্বাবধান ও নিরাপত্তা মুবারক উনার ভার গ্রহণ করেছেন। আপনি উনাকে এমন এক সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বংশ মুবারক উনার অধিকারী সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার নিকট সমর্পণ করুন, যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাকে কুরবানী মুবারক করার জন্য উনার আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি মানত মুবারক করেছেন এবং ন আল্লাহ পাক তিনিও উনার কুরবানী মুবারক ক্ববূল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মু’জিযা শরীফ দর্শন:
‘আল বারাহীনুল ক্বিত্ব‘ইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিস্টানরা (তাদের আসমানী কিতাবসমূহে বর্ণিত) বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে জানতো যে, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করছেন। অর্থাৎ ‘ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই তারা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে কঠিন শত্রুতা শুরু করে দিলো। উনাকে শহীদ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনাকে শহীদ করার জন্য সর্বদা তাদের পক্ষ থেকে মক্কা শরীফ উনার আশে-পাশে অনেক গুপ্তচর আসা-যাওয়া করতে থাকলো। এই সকল গুপ্তচরেরা বিভিন্ন অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখে তথা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মু’জিযা শরীফ দেখে ব্যর্থ, ভীত-সন্ত্রস্ত, লাঞ্ছিত, লজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় ফিরে যেত। সুবহানাল্লাহ!
একদা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একা শিকার করার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এটা জেনে শাম দেশের দিক হতে শত্রুদের একটি বিরাট দল উনাকে শহীদ করার জন্য তরবারী নিয়ে এগিয়ে আসলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার হযরত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনিও ঘটনাক্রমে সেই নির্জন ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। (হঠাৎ করে) তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী একদল আশ্বারোহী সৈন্য দেখতে পেলেন। উনারা ইহজগতের কোনো মানুষের সাদৃশ্য ছিলেন না। (উনারা ছিলেন ন আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য নিয়োজিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ!) উনারা অদৃশ্য থেকে এসে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শত্রুবাহিনীকে পরিপূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, শাম দেশের পাদ্রীরা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে জানতো। কেননা তাদের আসমানী কিতাবসমূহে লিখা ছিলো যে, যখন হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার জুব্বা মুবারক থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে রক্ত মুবারক ঝরতে থাকবে, তখন বুঝতে হবে যে অবশ্যই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বড় হলেন, তখন তারা উনাকে শহীদ করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন ন আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করে উনাদের মাধ্যমে তাদেরকে হত্যা করলেন, নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি পাহাড়ের উপর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এই কারামাত মুবারক দেখলেন। সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস ২/৭৫)
‘তারীখুল খমীস শরীফ’ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, একদা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি শিকারের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন শাম দেশের ইহুদী পাদ্রীদের মধ্য থেকে ৯০ জন পাদ্রী বিষাক্ত তরবারী নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে গুপ্তহত্যা এবং শহীদ করার উদ্দেশ্যে উনার দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনিও শিকারের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। তিনি বলেন, অতঃপর যখন আমি দেখলাম যে, পাদ্রীরা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে পুরোপুরিভাবে ঘেরাও করে ফেলেছে। অথচ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একা। তখন আমি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম। উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমি ওই সকল পাদ্রীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই উনাকে সাহায্য করবো, উনার খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবো। সুবহানাল্লাহ! তখন আমি ধূসর রঙ্গের ঘোড়ার উপর কিছু লোক দেখতে লাগলাম, উনারা দুনিয়ার অন্য কোনো লোকের সাথে সাদৃশ্য রাখেন না। উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পক্ষ হয়ে পাদ্রীদের উপর আক্রমণ করে তাদেরকে পরাজিত করলেন, তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ১/৮৩)
যুহরাহ গোত্রে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বাভাস:
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি একবার এক শীতের সফরে ইয়ামানে যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমার সাথে একজন ইহুদী পাদ্রীর সাক্ষাৎ হয়। তখন আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি আমাকে বলেন, আপনি কে? আমি বললাম, আমি কুরাইশ বংশীয় একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কুরাইশ বংশ উনার কোন পরিবার থেকে? আমি বললাম, আমি বনূ হাশিম হতে। অতঃপর তিনি বলেন, আপনার অনুমতি মুবারক পেলে আমি আপনার জিসম মুবারক (শরীর মুবারক) উনার কিছু অংশ দেখতে চাই। আমি বললাম, হ্যাঁ, দেখতে পারেন, যদি তা আওরাত (সতর) না হয়। তারপর তিনি প্রথমে আমার এক নাক মুবারক উনার ছিদ্র মুবারক দেখলেন, অতঃপর অপর নাক মুবারক উনার ছিদ্র মুবারক দেখলেন। তারপর তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার একহাত মুবারক-এ মুলকিয়াত তথা শাসন ক্ষমতা এবং অপর হাত মুবারক-এ নবুওওয়াত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আমি তা বনূ যুহরাহ গোত্রে দেখতে পাচ্ছি। এ কেমন করে হলো? আমি বললাম, তা আমি জানি না। অর্থাৎ আমি উক্ত পাদ্রীর জবান থেকে বিষয়টি শুনতে চাইলাম। লোকটি বললো, আপনার কি ‘শাগাহ’ আছে? আমি বললাম, ‘শাগাহ’ কী? লোকটি বললো, মানে যাওজুমতুম মুর্কারমাহ তথা স্ত্রী। আমি বললাম, বর্তমানে নেই। অর্থাৎ এখানে আমার সাথে নেই। লোকটি বললো, তাহলে ফিরে গিয়ে যুহরাহ গোত্রে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ করে নিবেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি দেশে ফিরে এলেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালা বিনতে উহাইব ইবনে আবদে মানাফ ইবনে যুহ্রাহ আলাইহাস সালাম উনাকে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ করলেন। আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ করেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ করার পর কুরাইশগণ বলাবলি করতে শুরু করেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার উপর কামিয়াবী হাছিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী ১/১০৬, আল মু’জামুল কাবীর, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ২/১৯০, মুস্তাদরকে হাকিম, আবূ নাঈম ১/১৮৬, খছায়িছুল কুবরা, আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ইমতা‘উল আসমা’ ৪/৩৬)
‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব মুবারক:
‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, অতঃপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বড় হলেন, তারা (শাম দেশের পাদ্রীরা) উনাকে শহীদ করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন ন আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করে উনাদের মাধ্যমে তাদেরকে হত্যা করলেন, দনিশ্চিহ্ন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান সাইয়্যিদুন নাস সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি পাহাড়ের উপর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এই মু’জিযা শরীফ দেখলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি বাড়িতে যেয়ে উনার সম্মানিতা ‘যাওযাতুম মুকাররামাহ’ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত র্বারাহ বিনতে আব্দুল উয্যা আলাইহাস সালাম উনাকে এই কারামাত মুবারক সম্পর্কে অবহিত করলেন। তারপর তিনি বললেন, আপনি কি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ দিবেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার এই কারামাত মুবারক দেখে তিনি এবং উনার সম্মানিতা যাওজাতুম মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ আলাইহাস সালাম উনারা দু’জনে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট গেলেন। উনার নাম মুবারক ছিলেন, ‘শায়বাতুল হামদ’ (এটা উনার বিশেষ লক্বব মুবারক। তবে উনার মূল নাম মুবারক ছিলেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম’। ) অতঃপর উনারা উভয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার ব্যাপারে প্রস্তাব মুবারক দিলেন। তারপর তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করলেন। সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস ২/৭৫)
আর আল্লামা হযরত কারামাত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বারাহীনুল ক্বিত্ব‘ইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন, সাইয়্যিদুন নাস সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি এই ঘটনা মুবারক অবলোকন করার পর সেখান থেকে বাড়ি ফিরে গেলেন এবং তিনি উনার সম্মানিতা যাওজাতুম মুকাররমাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট (সমস্ত ঘটনা মুবারক খুলে বলার পর বললেন,) সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আমার সম্মানিতা বানাত (মেয়ে) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ দিতে পারলে অতি উত্তম হতো। অতঃপর তিনি উনার কিছু মুহব্বতের লোক উনাদের মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার নিকট ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার এই প্রস্তাব মুবারক পাঠালেন। আর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও তখন উনার আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ করানোর জন্য এমন একজন সম্মানিতা মেয়ে অনুসন্ধান করছিলেন, যিনি হবেন সর্বোচ্চ বংশীয়া এবং সম্মান-ইজ্জত, পবিত্রতা ও চারিত্রিক নিষ্কুলষতার দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ! তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই সকল গুণে গুণান্বিতা পেলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই তিনি (উক্ত প্রস্তাবে রাজি হয়ে) সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করলেন। সুবহানাল্লাহ!
‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, হযরত হাসান বিন আহমদ বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ন আল্লাহ পাক তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক উনাকে উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অন্তর মুবারক-এ ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ করার আগ্রহ মুবারক সৃষ্টি করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! ফলে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম! আমি আশা করি, আপনি আমার পক্ষ থেকে এমন একজন সম্মানিতা মেয়ে উনার কাছে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার বিষয়ে প্রস্তাব মুবারক দিবেন, যিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠা, সর্বোত্তম চরিত্র মুবারক উনার অধিকারিণী, অতি উত্তম জিসম মুবারক উনার অধিকারিণী, সুদর্শনা, ন্যায়পরায়ণা, উজ্জ্বল দীপ্তিময়ী, সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণতার অধিকারিণী, বেমেছাল মান-সম্মান-ইজ্জত মুবারক উনার অধিকারিণী, সর্বশ্রেষ্ঠা ও সুউচ্চ বংশীয়া। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার স্নেহের পুত্র আলাইহিস সালাম! আপনার জন্য মুহব্বত মুবারক ও সম্মান-ইজ্জত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি কুরাইশ বংশ উনার ও আরবের সকল গোত্রের সমস্ত কুমারী মেয়ে উনাদের ব্যাপারে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সংবাদ নিলেন। কিন্তু তিনি একমাত্র সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ব্যতীত অন্য কাউকে উপরোক্ত সমস্ত গুণাবলী মুবারক উনাদের অধিকারিণী পেলেন না। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম, আপনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনাকে দেখুন। তারপর তিনি পুনরায় দেখতে গেলেন এবং উনার দিকে তাকালেন। তখন তিনি উনাকে এমতাবস্থায় দেখলেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেন মুক্তা সাদৃশ্য তারকার ন্যায় নূর মুবারক বিচ্ছুরণ করছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উভয়ের মধ্যে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠান মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ পরিপূর্ণরূপে সুন্নতী কায়দায় হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! নির্দিষ্ট সময়ে উনাকে মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ নিয়ে আসা হয়। কা’বা শরীফ উনার পাশেই সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফ। সেখানেই ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার মজলিস মুবারক অনুষ্ঠিত হন। ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার অনুষ্ঠানে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলের উপস্থিতে সুন্নতী তারতীব মুবারক অনুযায়ী প্রথমে ন আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা ও ছানা-ছিফত মুবারক করেন। তারপর সকলের উদ্দেশ্যে নছীহত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, সেই ন আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি, উনার প্রশংসা মুবারক করছি যিনি আমাদেরকে অফুরন্ত নিয়ামত মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন, আমাদেরকে দয়া-ইহসান মুবারক করেছেন এবং আমাদের হৃদয়ে উনার শুকরিয়া, প্রশংসা, ছানা-ছিফত মুবারক করার উপলব্ধি দিয়েছেন এবং তা করার তাওফীক মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমাদেরকে শহর মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী বানিয়েছেন। তিনি অন্যান্য গোত্রের উপর আমাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন এবং দুর্যোগ ও দুরবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সেই ন আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করছি যিনি আমাদের জন্য ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ বৈধ করেছেন এবং অবৈধ সংসর্গ নিষিদ্ধ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে অনুষ্ঠান মুবারক সূচনা করে তিনি বলেন, এখন আপনাদের অবগতির জন্য পেশ করছি যে, আমাদের আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আপনাদের সম্মানিতা আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হতে চান এবং আপনাদের সম্মতি হলে এই ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ নিষ্পন্ন করতে চান। আপনারা কি এ প্রস্তাবে রাজি রয়েছেন?
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান খাজা সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরা এই প্রস্তাব মুবারক গ্রহণ করলাম। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনিও ন আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা ও ছানা-ছিফত মুবারক করার পর সকলের উদ্দেশ্যে কিছু নছীহত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, সেই ন আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি, উনার প্রশংসা মুবারক করছি যিনি আমাদেরকে দ্বীনে হানীফ উনার উপর প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন, উনার শুকরিয়া, প্রশংসা, ছানা-ছিফত মুবারক করার তাওফীক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমাদেরকে কুরাইশ গোত্র উনার বিশেষ শাখা যুহরাহ গোত্র উনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং শহর মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী বানিয়েছেন। তিনি অন্যান্য গোত্রের উপর আমাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন এবং মানুষের খিদমত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সেই ন আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করছি যিনি আমাদের জন্য ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ বৈধ করেছেন এবং অবৈধ সংসর্গ নিষিদ্ধ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এভাবে সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সংক্ষিপ্ত নছীহত মুবারক শেষ করেন। এতে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর তিনি হাসিমুখে সায় দিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সকলে এই পবিত্র কাজের সাক্ষী থাকলেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ন আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করেন এবং দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন। সুবহানাল্লাহ!
এইভাবে সুন্নতী তরতীব মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুসম্পন্ন হন। সুবহানাল্লাহ!
যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হন, তখন উনার বয়স মুবারক ছিলেন ১৮ বছর ৩ মাস ২৫ দিন। আর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ২৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন তথা পূর্ণ ২৫ বছর। সুবহানাল্লাহ!
সময়টি ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৮ মাস ১২ দিন পূর্বে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ১লা তারিখ লাইলাতুল জুমু‘য়াহ শরীফ বা‘দ মাগরিব। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ اِنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خَرَجْتُ مِنْ نِكَاحٍ وَّلَـمْ اَخْرُجْ مِنْ سِفَاحٍ مّـِنْ لَّدُنْ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلـٰى اَنْ وَّلَدَنِـىْ اَبِـىْ وَاُمِّىْ لَـمْ يُصِبْنِـىْ مِنْ سِفَاحِ الْـجَاهِلِيَّةِ شَىْءٌ مَّا وَلَدَنِـىْ اِلَّا نِكَاحٌ كَنِكَاحِ الْاِسْلَامِ.
অর্থ: আমি সর্বোত্তম বিশুদ্ধ ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার মাধ্যমে বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি; কস্মিনকালেও এর ব্যতিক্রমটি ঘটেনি। সুবহানাল্লাহ! আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আমার হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম উনার এবং সম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের পর্যন্ত আমি যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত মুবারক ও ব্যক্তিত্বা মুবারক উনাদের মাঝে অবস্থান মুবারক করেছি, উনারা প্রত্যেকেই উনাদের বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সর্বোত্তম বিশুদ্ধ ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার মাধ্যমে। যাতে জাহিলী যুগের কোনো অপকর্ম কস্মিনকালেও স্পর্শ করেনি। আমি দ্বীন ইসলাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার ন্যায় ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার মাধ্যমে বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি। সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিত ত্ববারনী ৫/৮০, আল বাদরুল মুনীর ৭/৬৩৭, আল মাত্বালিবুল আলীয়াহ ১৭/১৯৮, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/১৪৯, আল জামিউছ ছগীর ১/৩৬৪, আল ফাতহুল কাবীর ২/৮২, দায়লামী শরীফ ২/১৯০, জামিউল আহাদীছ ৯/৪৯৮, আল খছাইছুল কুবরা ১/৬৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৬৮, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিআবী নাঈম ১/১৯, সুবুলুলহুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৭)
এই সমস্ত দলীল-আদিল্লাহ উনাদের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম উনার এবং সম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুন্নতী তরতীব মুবারক অনুযায়ী হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত এই তরতীব মুবারক অনুযায়ী বিবাহ অনুষ্ঠান করা সকলের জন্য সুন্নত মুবারক হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। অর্থাৎ উনারা সকলকে সুন্নত মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মোহরানা মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার মোহরানা মুবারক ছিলো নগদ এক উকিয়া স্বর্ণ ও এক উকিয়া রৌপ্য। সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,
فانقدوها اوقية من فضة واوقية من ذهب
অর্থ: ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার সম্মানার্থে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নগদ এক আউকিয়া স্বর্ণ ও এক আউকিয়া রৌপ্য মুবারক মোহর হিসেবে প্রদান করা হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবর ‘আলাল ‘আলাম)
ওলীমা মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন সমস্ত কুরাইশ সম্প্রদায় উনাদের সাইয়্যিদ। তিনি তো জিন-ইনসানকে খাওয়াতেনই; শুধু তাই নয়, এমনকি বন্যপশু-পাখীদেরকেও খাদ্য খাওয়াতেন। সুবহানাল্লাহ! তাই তিনি সকলের মাঝে ‘মুত্ব‘ইমুল ইন্সি ওয়াল ওয়াহ্শি ওয়াত ত্বইর’ তথা মানুষ, বন্য পশু ও পাখীদেরকে খাদ্যদানকারী এই লক্বব মুবারক-এ পরিচিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! যদি তাই হয়, তাহলে তিনি উনার সবচেয়ে প্রিয় আওলাদ, লখতে জিগার সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার ওলীমা মুবারক-এ কত বিশাল বড় অনুষ্ঠান মুবারক করেছেন, কতো বেমেছালভাবে আয়োজন মুবারক করেছেন এবং জিন-ইনসান ও পশু-পাখীকে কি পরিমাণ মেহমানদারী মুবারক করেছেন, খাদ্য মুবারক খায়িছেন, তা সকলের চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! তবে কিতাবের এক বর্ণনায় দেখা যায় যে, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ওলীমা মুবারক উপলক্ষে একশত উট, একশত গরু, একশত বকরী জবাই করে প্রচুর পরিমাণে খাবার প্রস্তুত করেছেন এবং মক্কা শরীফ ও তৎসংলগ্ন এলাকার সবাইকে দাওয়াত করে মেহমানদারী মুবারক করেছেন। এই মেহমানদারী মুবারক চারদিন পর্যন্ত চলেছেন। সুবহানাল্লাহ!
লাইলাতুল বিনা’ শরীফ এবং রগাইব শরীফ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ফুল সজ্জিত হুজরা শরীফ-এ নিয়ে যাওয়া হলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ ছোহবত মুবারক তথা সাক্ষাৎ মুবারক-এ গেলেন এবং নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে কুদরতীভাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবাহনাল্লাহ! সেই বরকতময় রাতখানা ছিলেন রজবুল হারাম শরীফ উনার ১লা তারিখ এবং জুমুয়াহ শরীফ উনার রাত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বারাহীনুল ক্বিত্ব‘ইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন, এই রাতে ন আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার জগতে এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের জগতে বলে দেয়া হয়েছিলো যে, উনারা যেন পবিত্র নূর মুবারক দ্বারা সমস্ত সৃষ্টিজগতকে নূরানী করেন, আলোকিত করেন। সুবহানাল্লাহ! আকাশ-যমীন, সারা কায়িনাতের সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা খুশিতে বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন। সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত ফেরদাউস উনার দরজা মুবারক খুলে দেয়ার জন্য বেহেশত উনার রক্ষণাবেক্ষণকারী হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে হুকুম করা হলো। সমগ্র কায়িনাতকে বিভিন্ন প্রকার খুশবু দ্বারা খুশবূময় করে রাখার আদেশ মুবারক আসলো। আকাশের সকল স্তরে এবং যমীনের সকল স্তরে, পৃথিবীর সকল ঘরে ঘরে খোশখবরি দেয়া হয়েছিলো যে, নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই রাত মুবারক-এ ক্বুদরতীভাবে উনার হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ!
‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক এনেছেন এই বিষয়ে একটি দলীল হচ্ছে, কুরাঈশ গোত্র উনার সকল গৃহপালিত পশুগুলো সেই (লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ উনার) রাত্রি মুবারক-এ পরস্পরে কথা বলেছে। সুবহানাল্লাহ! তারা বলেছে, (আজ রাতে) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! কা’বা শরীফ উনার রব ন আল্লাহ পাক উনার কসম! তিনি দুনিয়াবাসী সকলের ইমাম এবং তাদের জন্য আলোকবর্তিকা বা হিদায়াতদানকারী। সুবহানাল্লাহ! আরব ও আজম তথা সারা পৃথিবীর সকল শাসকদের সিংহাসনগুলো উল্টে পড়েছিলো। সুবহানাল্লাহ! ইবলীস লা’নাতুল্লাহি আলাইহি (তার উপর ন আল্লাহ পাক উনার লা‘নত সার্বক্ষণিক বর্ষিত হচ্ছে। ) পলায়ন করে আবূ কুবাইস পাহাড়ে এসে আর্তচিৎকার ও কঠিন রোনাজারী করতেছিলো। এ আর্ত চিৎকার শুনে সর্বদিক থেকে সমস্ত শয়তানগুলো তার নিকট এসে একত্রিত হয়েছিলো। (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম)
‘শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, ন আল্লাহ পাক তিনি জান্নাত উনার রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশ মুবারক প্রদান করলেন, সুরক্ষিত নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে জান্নাত মুবারক উনার সকল দরজা মুবারকগুলো উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য। অতঃপর নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুদরতীভাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। ফলে সেই দিন পৃথিবীর সমস্ত মূর্তিগুলো উল্টে পড়েছিলো এবং ন আল্লাহ পাক উনার দুশমন ইবলীসের আসন ৪০ দিন পর্যন্ত উল্টে পড়েছিলো। তখন ইবলীস দগ্ধীভূত অতি কুৎসিত কালো কদাকার রং ধারণ করে কঠিন লাঞ্ছিত অবস্থায় পলায়নকারীরূপে আবূ কুবাইস পাহাড়ে এসেছিলো। তারপর সে অত্যন্ত কঠিনভাবে চিৎকার ও রোনাজারী করছিলো। ফলে সর্বদিক থেকে সমস্ত শয়তান তার নিকট এসে জমা হয়ে বলেছিলো, হে (শয়তান) সম্প্রদায়ের নেতা! কোন্ জিনিস তোমাকে আঘাত করেছে, তোমাকে কষ্ট দিয়েছে? তখন ইবলীস বললো, তোদের জন্য আফসোস! এই সম্মানিতা মহিলা আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ১/৩৪৭)
সাইয়্যিদুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ মুবারক:
হাদীছ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত ‘আব্দুর রায্যাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি মুহম্মদ ইবনে মুনকাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ন আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি মুবারক করেছেন, সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, খালিক্ব মালিক রব ন আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আপনার যিনি নবী-রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনার মধ্যে সমস্ত কল্যাণ ও ভালাই মুবারক সৃষ্টি করেছেন। উনার পরে ন আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন, সমস্ত মাখলূক্বাত সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যখন ন আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন, তখন তিনি সেই নূর মুবারক উনাকে উনার সম্মুখে মাক্বামে কুরব মুবারক তথা নৈকট্য মুবারক উনার স্তর মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান মুবারক করান। সুবহানাল্লাহ! তারপর উক্ত নূর মুবারক উনাকে চার ভাগে ভাগ করেন। অতঃপর এক ভাগ দিয়ে ‘আরশ মুবারক, অপর ভাগ দিয়ে কুর্সী মুবারক এবং আরেক ভাগ দিয়ে আরশ মুবারক বহনকারী এবং কুর্সী মুবারক উনার গুপ্ত রহস্য মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি চতুর্থভাগ নূর মুবারক উনাকে মাক্বামে হুব্ব তথা মুহব্বত মুবারক উনার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান মুবারক করান। সুবহানাল্লাহ! তারপর উক্ত চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে চারভাগে ভাগ করেন। অতঃপর একভাগ দিয়ে ক্বলম মুবারক, অপরভাগ দিয়ে সম্মনিত লাওহ মুবারক এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে জান্নাত মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে মাক্বামে খওফ মুবারক উনার মধ্যে ১২ হাজার বছর রাখেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনাকে চারভাগে ভাগ করেন। তারপর এক ভাগ দিয়ে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে, অপরভাগ দিয়ে সূর্য এবং তৃতীয়ভাগ দিয়ে চাঁদ এবং তারকারাজি সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি আবার চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে মাক্বামে রযা’ তথা প্রত্যাশা উনার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান মুবারক করান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উক্ত নূর মুবারক উনাকে চারভাগে ভাগ করেন। একভাগ দিয়ে আক্বল মুবারক, অপরভাগ দিয়ে ইলম মুবারক এবং আরেকভাগ দিয়ে হিকমত মুবারক, পবিত্রতা মুবারক এবং তাওফীক্ব মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর চতুর্থভাগ নূর মুবারক উনাকে মাক্বামে হায়া তথা লজ্জাশীলতা উনার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান মুবারক করান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর ন আল্লাহ পাক তিনি উক্ত নূর মুবারক উনার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! ন আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দৃষ্টি মুবারক উনার কারণে উক্ত নূর মুবারক থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে নূর মুবারক বের হতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে উক্ত নূর মুবারক উনার থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নূর মুবারক উনার ফোঁটা বা বিন্দু মুবারক বের হলেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর ন আল্লাহ পাক তিনি উক্ত প্রত্যেক নূর মুবারক উনার ফোঁটা থেকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রূহ মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের রূহ মুবারক শ্বাস মুবারক গ্রহণ করেন। তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্বাস মুবারক থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, সৌভাগ্যশীল, শহীদ এবং আনুগত্যশীল আসবেন উনাদের প্রত্যেকের রূহ মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) সুতরাং আরশ মুবারক এবং কুরসী মুবারক আমার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! নৈকট্যপ্রাপ্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র আত্মার অধিকারীগণ উনারা এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলে আমার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! জান্নাত এবং উনার মধ্যে অবস্থিত সমস্ত নিয়ামত মুবারক আমার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সূর্য-চন্দ্র ও তারকারাজি আমার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! আক্বল বা বিবেক মুবারক এবং তাওফীক্ব বা সামর্থ্য মুবারক আমার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রূহ মুবারক আমার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! এবং সকল শহীদ, সৌভাগ্যশীল ও ছালিহীন তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা আমার নূর মুবারক উনারই ফসল মুবারক তথা উনারাও নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ!
তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি ১২ হাজার হিজাব মুবারক সৃষ্টি করেন। অতঃপর ন আল্লাহ পাক তিনি আমার নূর মুবারক উনাকে- হিজাবে আযমত উনার চতুর্থ হিজাব মুবারক-এ কায়িম করেন, অতঃপর নূর মুবারক উনাকে প্রত্যেক হিজাব মুবারক উনার মধ্যে ১ হাজার বছর করে রাখেন। সুবহানাল্লহ! আর তা হচ্ছে, উবূদিয়্যাহ (বন্দেগী মুবারক), সাকীনা (প্রশান্তি মুবারক), ছবর (ধৈর্য মুবারক), ছিদক্ব (সততা মুবারক) এবং ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস মুবারক) উনাদের মাক্বাম মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর ন আল্লাহ পাক তিনি সেই নূর মুবারক উনাকে প্রত্যেক হিজাব তথা পর্দা মুবারক উনার মধ্যে এক হাজার বছর করে নিমজ্জিত মুবারক করে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি যখন হিজাব তথা পর্দা মুবারক উনার ভিতর থেকে সেই নূর মুবারক উনাকে বের করে পৃথিবীতে আরোহণ মুবারক করালেন, উক্ত নূর মুবারক উনার আলো মুবারক-এ পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম এবং উভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে গেলো যেমন অন্ধকার রাতে বাতি আলোকিত করে থাকে। সুবহানাল্লহ! তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি মাটি থেকে আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর ন আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কপাল মুবারক উনার মাঝে সেই নূর মুবারক উনাকে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর সেই নূর মুবারক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে হযরত শীস আলাইহিস সালাম উনার মাঝে স্থানান্তরিত হলো। সুবহানাল্লাহ! আর এই স্থানান্তর মুবারক পূত-পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের থেকে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার মাঝে, সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের থেকে পূত-পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের মাঝে চলতে থাকলো। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে ন আল্লাহ পাক তিনি এই নূর মুবারক আমার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার মাঝে পৌঁছিয়ে দেন এবং উনার থেকে আমার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা বিনতে ওহাব আলাইহাস সালাম উনার রেহেম মুবারক-এ স্থানান্তরিত করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর ন আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে আমাকে দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করেন তথা আমার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর ন আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ভূষিত করেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন এবং অতি উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব মুবারক তথা সমস্ত মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের ক্বায়িদ হিসেবে। সুবহানাল্লাহ! এই হচ্ছে আপনার নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি মুবারক উনার সূচনা বা উৎস- হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব: হাদীছ শরীফ: ১৮, আল জুযউল মাফক্বূদ মিনাল জুযয়িল আউওয়াল মিনাল মুছান্নিছ লিহাফিযিল কাবীর আবী বকর আব্দুর রাজ্জাক্ব আছ ছন‘আনী ৬৩ পৃ. হাদীছ শরীফ নং ১৮)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মালিকাতুল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র জীবনী মুবারক
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সীরত মুবারক
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সীরত মুবারক
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সীরত মুবারক
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (৩)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (২)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত সীরত মুবারক (১)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার জীবনী মুবারক
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদী বা হিদায়াতদানকারী (২)
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদী বা হিদায়াতদানকারী (১)
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)