মহিলাদের নিয়ে ছফর করার শরয়ী ফায়সালা কি?
, ১৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৫ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১০ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে নিয়ে এবং মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে নিয়ে ছফর করতেন। যেমন যুদ্ধ-জিহাদে গিয়েছেন, হজ্জ ও উমরাহ করেছেন ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফের” ইফকের ঘটনার পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে, “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ছফরের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মাঝে লটারি করতেন। এতে যাঁর নাম মুবারক আসতো উনাকেই তিনি সাথে নিয়ে ছফরে বের হতেন। এমনি এক জিহাদে তিনি আমাদের মাঝে লটারি করলেন এতে আমার নাম মুবারক উঠলো। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমিই ছফরে গেলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিলো। এ কারণে আমাকে হাওদাসহ ছাওয়ারীতে উঠানো ও নামানো হতো। এরূপভাবে আমরা চলতে লাগলাম। অবশেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন এ জিহাদ থেকে অবসর হলেন তখন তিনি বাড়ির দিকে ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। ”
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আহলিয়া বা মহিলাদেরকে নিয়ে ছফর করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। আরো প্রমাণিত হয় যে, আহলিয়া বা মহিলাদেরকে নিয়ে রাতের বেলা ছফর করাই খাছ সুন্নত ও পর্দার ক্ষেত্রে বিশেষ ফায়দাজনক।
“বুখারী শরীফের” কিতাবুল হজ্জ বাবু তাওয়াফিন নিসা মার্য়া রিজাল অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, “(হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) হযরত আমর ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন হযরত আবূ আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছান হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, আমার কাছে খবর দেন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি। (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) যখন হযরত ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেন, তখন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আপনি কি করে নিষেধ করছেন? অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযওয়াজে মুতহ্হারাত অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা পুরুষ ছাহাবীগণের সাথে তাওয়াফ করেছেন। আমি (ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনাকে (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে) প্রশ্ন করলাম, তা কি পর্দার পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পরে, না পূর্বে? তিনি বললেন, হাঁ, আমার জীবনের কসম, আমি পর্দার পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল বা অবতীর্ণ হওয়ার পরের কথাই বলছি। আমি জানতে চাইলাম, পুরুষগণ মহিলাগণের সাথে মিশে কিভাবে তাওয়াফ করতেন? (উত্তরে বললেন) বরং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম তিনি পুরুষগণের পাশ কাটিয়ে তাওয়াফ করতেন। উনাদের মাঝে মিশে যেতেন না। একদা জনৈকা মহিলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, চলুন, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! তাওয়াফ করে আসি। তিনি জবাব দিলেন, “তোমার মন চাইলে তুমি যাও” নিজে যেতে অস্বীকার করলেন। উনারা রাতের বেলা পর্দা করে বের হয়ে (সম্পূর্ণ না মিশে) পুরুষগণের পাশাপাশি থেকে তাওয়াফ করতেন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বাইতুল্লাহ শরীফের অভ্যন্তরেও প্রবেশ করতে চাইলে সকল পুরুষ বের করে না দেয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন।
হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উবাইদ ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে গেলাম। তিনি তখন ‘ছবীর’ পর্বতে অবস্থান করছিলেন। ...” (ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্কিরমানী, তাইসীরুল ক্বারী)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা যে বিষয়গুলো সাব্যস্ত হয়েছে তা হলো-
১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত হযরত আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে নিয়ে ছফর করেছেন।
২. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছফরে পুরুষ ছাহাবীগণ থাকতেন।
৩. হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদের সাথে মহিলা ছাহাবীও ছিলেন।
তবে উনারা সবক্ষেত্রেই খাছ শরয়ী পর্দা রক্ষা করতেন। যা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। স্মর্তব্য যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহিলাসহ পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে কারবালা পর্যন্ত ছফর করেছেন একথা তো সকলের মাঝেই মশহুর। সুতরাং দ্বীনি কাজে হোক কিংবা অন্য কোন জরুরতে হোক পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরকে নিয়ে ছফর করা জায়িয তো অবশ্যই খাছ সুন্নতও বটে। তবে অবশ্যই প্রতি ক্ষেত্রে খাছ শরয়ী পর্দা রক্ষা করতে হবে। (দলীল: মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৫২তম সংখ্যা)
-উম্মু রাফীফ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৭)
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের ইজ্জত-সম্মান, পর্দা রক্ষা করার বিষয়ে সুখবর! সুখবর! সুখবর!
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
রাস্তায় চলাচলের সময় নারীদের পর্দা পালনে করণীয়
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মসজিদে গিয়ে নারীদের জামায়াতে নামায আদায় নাজায়িয:
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পোশাক, কথা-বার্তা, আকার-আকৃতিতে পুরুষের সাদৃশ্যতা অবলম্বনকারী মহিলারা অভিশপ্ত
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য (১৪)
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের নাগরিকরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতির আওতাভুক্ত অথচ বাংলাদেশের মুসলমানগণ ছবিযুক্ত, ত্রুটিপূর্ণ হারাম পদ্ধতির শিকার
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৩)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৫)
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
অন্যের ঘরে প্রবেশে অনুমতি নেয়ার তারতীব
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করা নাজায়িজ
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীর মৌলিক অধিকার ‘পর্দা পালনের অধিকার’ কেড়ে নেয়া হচ্ছে কেন?
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)