মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার বেমেছাল গুরুত্ব ও ফযীলত মুবারক (৩)
, ১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে লিবাস বা পোশাকের বর্ণনাও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন লিবাস বা পোশাক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا
অর্থ: “হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য লিবাস বা পোশাক নাযিল করেছি।”(পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬)
আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ইহুদী-নাছারা অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের লিবাস বা পোশাক থেকে বেঁচে থাকো।”
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলমানদের জন্য আলাদা বা নির্দিষ্ট পোশাক রয়েছে।
মূলতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে লিবাস বা পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন, তা মুসলমান পুরুষদের জন্য এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যে পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন, তা মহিলাদের জন্য। আর সেগুলোই হচ্ছে ইসলামী পোশাক বা সুন্নতী পোশাক মুবারক। আর সেই সুন্নতী পোশাক মুবারক উনার মধ্যে ক্বামীছ হচ্ছে অন্যতম। অর্থাৎ গুটলীযুক্ত, গোল, কোণাবন্ধ, নিছফুস সাক্ব ক্বামীছ বা কোর্তাই খাছ সুন্নতী পোশাক মুবারক। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় পোশাক মুবারক হচ্ছে ক্বামীছ বা কোর্তা।
ক্বামীছ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- কোর্তা, জামা ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় ক্বামীছ বা কোর্তা হলো, যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয়, যা নিছফুস সাক্ব। অর্থাৎ হাঁটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত প্রলম্বিত। গোল যা কোণাফাঁড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে। যেমন, ‘আবূ দাউদ শরীফ’ উনার বিশ্ববিখ্যাত শরাহ ‘আইনুল মা’বূদ’ উনার ‘কিতাবুল লিবাস’ অর্থাৎ ‘ক্বামীছ বা কোর্তার আলোচনা’ পর্বে উল্লেখ রয়েছে, “নূরে মুজসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্বামীছ বা কোর্তা সবচেয়ে পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলো- ক্বামীছ দ্বারা ইযার বা লুঙ্গি ও রিদ্বা বা চাদর অপেক্ষা সতরকে পরিপূর্ণভাবে ঢাকা যায়। অথচ ক্বামীছ অল্প খরচে হয়, দেহের জন্য হালকা এবং এটা পরিধানে অধিক বিনয়-ন¤্রতা প্রকাশ পায়।” (‘জামউল ওয়াসায়িল’ কিতাবেও অনুরূপ বর্ণনা উল্লেখ আছে।)
ক্বামীছের গেরেবান আটকানোর গুটলী বা বোতাম কাপড়ের তৈরি হওয়াই খাছ সুন্নত। যাকে আরবীতে বলা হয় যিররুন। এর বহুবচন আযরারুন ও যুরূরুন। যার অর্থ হলো- গুটলী, কাপড়ের তৈরি গুটলী ইত্যাদি। যেমন এ প্রসঙ্গে লুগাত বা অভিধানে উল্লেখ আছে যে, যিররুন হলো “কোর্তার গেরেবান বন্ধ করার জন্য কাপড় অথবা সুতার নির্মিত গোল গুটলী।”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্বামীছ অধিক পছন্দনীয় ছিল। ক্বামীছ হাঁটুর নিচ ও টাখনুর উপর পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়া চাই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই ক্বামীছ বা কোর্তা পরিধান করতেন উনার অনুসরণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও সেই পোশাক পরিধান করতেন, তা কোণাফাঁড়া ছিল না। তাই গোল, নিছফুস সাক্ব ক্বামীছ বা কোর্তাই খাছ সুন্নতী কোর্তা। কোণাফাঁড়া কোর্তা যতই লম্বা হোক না কেন, তাতে কখনোই সুন্নত আদায় হবে না।”
ক্বামীছ বা কোর্তার ন্যায় মুসলমান পুরুষদের অন্যান্য পোশাক যেমন- ইযার বা লুঙ্গি, ইমামাহ বা পাগড়ী, টুপি, রুমাল এবং মুসলমান মহিলাদের পোশাক যেমন- সেলোয়ার, ক্বামীছ, ওড়না, বোরকা ইত্যাদির বর্ণনাও কিতাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তাই প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদেরকে উল্লেখিত সেই ইসলামী পোশাক ও সুন্নতী পোশাকই পরিধান করতে হবে। বিধর্মীদের পোশাক- শার্ট, প্যান্ট, টাই, কোট ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সম্মানিত সুন্নতী পোশাক পরিধান করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঠান্ডা ও মিঠা পানি পান করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফল খাওয়া মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাঁটি মধুসহ সকল সুন্নতী সামগ্রী
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)