মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের বেমেছাল ফযীলত মুবারক (১৭)
, ২৮শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২২ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ মাত্র এক দিরহাম খরচ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ফক্বীর-মিসকীনদেরকে এক পাহাড় পরিমাণ লাল স্বর্ণ দান করার সমপরিমাণ ফযীলত মুবারক লাভ:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
وقال بعض الصالحين كان شيخي له عادة كل عام يقرأ قصة المولد الشريف ويحتفل فيه احتفالاً عظيمًا فجاءت سنة إحدى وستين وثلاثمائة وألف بلغ فيها شنبل الحنطة سبعين ليرة سورية، وحصل فيها كرب عظيم لبعض الناس فلما جاء وقت إقامة حفلة المولد الشريف صار شيخي يستعد لها، فقال بعض الناس ليت الشيخ هذه الدراهم الذي يريد أن ينفقها على قراءة المولد الشريف ينفقها على الفقراء والمساكين كان أفضل، فبلغ شيخي هذه المقالة، وكنت في حالة لا يغيب رسول الله ﷺ عن عيني طرفة عين، فقال شيخي: أريد أن أسأل رسول الله ﷺ عن ذلك، فقال: يا رسول الله الإنفاق على قراءة مولدك أفضل أو على الفقراء والمساكين؟ فقال ﷺ: إنفاق كل درهم على قراءة المولد أفضل من إنفاق مائة درهم على الفقراء والمساكين.
অর্থ: “একজন বুযূর্গ ব্যক্তি তিনি বলেন, আমার সম্মানিত শায়খ উনার আদদ বা অভ্যাস মুবারক ছিলো, তিনি প্রতি বছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন অর্থাৎ ১২ই রবীউল আউওয়ার শরীফ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনা মুবারক পাঠ করতেন এবং সেদিন তিনি (প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করে) অনেক বিশাল বড় মাহফিল মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! যখন ১৩৬১ হিজরী শরীফ আসলো, তখন গমের দাম এমন হয় যে, এক শুম্বুল গমের মূল্য সুরিয়ান ৭০ লীরায় পৌঁছে অর্থাৎ তখন কঠিন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ঐ বছর কিছু মানুষ কঠিন দুঃখ-কষ্টে আপতিত হয়। তারপর যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাওলিদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক পালনের সময় আসলেন, তখন আমার সম্মানিত শায়খ তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাহফিল মুবারক উনার ইন্তেজাম করার জন্য উদ্যত হন। তখন (বাতিল ফিরক্বা, বদ মাযহাব ও বদ আক্বীদার) কিছু লোক বললো, ‘হায়! সম্মানিত শায়খ তিনি যেই দিরহামগুলি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাওলিদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের জন্য খরচ করার ইচ্ছা করেছেন, সেগুলো যদি ফকীর-ফুকারা, গরীব-মিসকীন, অসহায়দের জন্য খরচ করতেন, তাহলে কতই না উত্তম হতো! না‘ঊযুবিল্লাহ! এই কথাগুলো সম্মানিত শায়খ উনার নিকট পৌঁছলো। আমি এমন একটা অবস্থায় ছিলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চোখের পলকের তরেও আমার দৃষ্টির বাইরে থাকতেন না অর্থাৎ আমি সবসময় উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিয়ারত মুবারক-এ থাকতাম। সুবহানাল্লাহ! (আর আমার সম্মানিত শায়খ তিনি তো সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিয়ারত মুবারক-এ থাকতেনই, সেটা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ খরচ করার বিষয়ে বাতিল ফিরক্বা, বদ মাযহাব ও বদ আক্বীদার লোকদের এ সমস্ত এলোমেলো কথা শুনে,) আমার সম্মানিত শায়খ তিনি বললেন, ‘আমি ঐ বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করাতে চাচ্ছি। তারপর তিনি বললেন,
يا رسول الله صلى الله عليه وسلم الإنفاق على قراءة مولدك أفضل أو على الفقراء والمساكين؟ فقال ﷺ: إنفاق كل درهم على قراءة المولد أفضل من إنفاق مائة درهم على الفقراء والمساكين
‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাওলিদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার জন্য খরচ করা উত্তম, না কি ফকীর-ফুকারা, গরীব-মিসকীন, অসহায়দের জন্য খরচ করা উত্তম?’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাওলিদ শরীফ পাঠের জন্য অর্থাৎ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার সম্মানার্থে খরচ করা প্রত্যেক দিরহামের ফযীলত, ফকীর-ফুকারা, গরীব-মিসকীন, অসহায়দের জন্য ১০০ দিরহাম খরচ করার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ অর্থাৎ কোটি কোটি গুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ, শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (আশ্ শারফুল আমজাদ ২৫৫ পৃ.)
সেটাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْلَةُ اثْنَـىْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَهٗ شَفِيْعًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ اِكْرَامًا فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ اَحْـمَرَ فِـى الْيَتَامٰى فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে, মেহমানদারী করার মাধ্যমে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ) রাত্র মুবারক (ও দিবস মুবারক) উনাকে সম্মান করবেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন অর্থাৎ দায়িমীভাবে সবসময় উনার জন্য সুপারিশ করবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সম্মানার্থে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে অত্যান্ত মুহব্বতে আদবের সাথে এক দিরহাম (চার আনা রূপা অথবা সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ অর্থাৎ প্রায় ৪০০ টাকা) খরচ করবেন, ঐ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ইয়াতীমদেরকে এক পাহাড় পরিমাণ লাল স্বর্ণ দান করার ফযীলত মুবারক লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবু ফাদ্বায়েলে মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ নং পৃষ্ঠা, রিসালাতু মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ নং পৃষ্ঠা)
এখানে এক পাহাড় লাল স্বর্ণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের পরিমাণটা বলা হয়নি যে, এটা কত বড়। এটা আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত হতে পারে, ১ দুনিয়া, ১০ দুনিয়া, ২০ দুনিয়ার সমান হতে পারে অথবা তার চেয়েও কোটি কোটি গুণ বড় হতে পারে। এটা মানুষের চিন্তা-কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার কতো বেমেছাল ফযীলত মুবারক এটা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। সুবহানাল্লাহ!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীকুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (২০)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৭)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৯)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আলোচনায় বা লেখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসমে যাত বা নাম মুবারক বারবার বলা ও লেখা সম্পূর্ণ আদবের খিলাফ (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)