ইতিহাস
ফিলিস্তিনে সংঘাতের মূল কারণ: ইহুদীদের নিশানাতে ভূমি নাকি আল আকসা শরীফ?
অভিমত:
, ২৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আমরা যেমনটা জানি, ফিলিস্তিনকে যে সমস্ত ইহুদী দখল করে রেখেছে তারা কেউ ফিলিস্তিনের আদিবাসী নয়। তারা এসেছে ইউরোপ, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।
পৃথিবীজুড়ে যখনই কোন একটি জাতিসত্তার মানুষ পৃথক রাষ্ট্র চায় তখন তারা তাদের অবস্থানরত দেশের একটি অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন দেশ হিসেবে কায়েম করতে চায়। কিন্তু ইউরোপের ইহুদীদের ক্ষেত্রে আমরা এই বিষয়টা লক্ষ্য করতে পারি না। তাহলে কেন এই ইহুদীরা হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত একটি দেশকে নিজের দেশ হিসেবে দাবি করে বসলো?
কারণটা জানার জন্য আমাদের ইহুদী ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে, কারণ তারা এই ধর্মের দোহাই দিয়েই ফিলিস্তিন দখল করে রেখেছে। হিব্রু বাইবেল অথবা তানাখ যেটাকে বিকৃত তাওরাত শরীফ বলা হয়, সেই বই পড়লে আমরা বিভিন্ন সময় একটি শব্দের সন্ধান পাব শব্দটা হল জায়ন (তরড়হ)। হ্যাঁ এই শব্দ থেকেই জায়নবাদ (তরড়হরংস) এর উৎপত্তি। তানাখ বিশেষজ্ঞদের মতে জায়ন বলতে একই সাথে জেরুজালেম এবং গোটা ফিলিস্তিনকেই বোঝানো হয়েছে। ঠিক যেভাবে ইসলামিক পরিভাষায় বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ বলতে ক্ষেত্র বিশেষে আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স, আল কুদস শহর এবং আশেপাশের দেশ বা অঞ্চলকে বোঝানো হয়।
তানাখে জেরুজালেম শহরকে জায়ন বলার পিছনে ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। মূলত জায়ন শহরের তিন মাথায় তিনটি পাহাড় রয়েছে। ইতিহাসবিদগণ বিভিন্ন সময় এই তিন পাহাড়কেই মাউন্ট জায়ন অথবা জায়ন পাহাড় নামে ডেকেছে। কিন্তু ইহুদী তানাহ্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, যে পাহাড়ের উপরে আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স অবস্থিত সেই পাহাড়টাই হচ্ছে আসল মাউন্ট জায়ন।
তাহলে পাঠক বুঝতেই পারছেন যে, ইহুদী ধর্ম মতে আল আকসা মসজিদ, জেরুজালেম শহর এবং ফিলিস্তিন দেশ সবই এক সুতায় গাঁথা।
তাহলে এখন আমরা ইহুদীদের এই ভূমিতে আগমণের কারণে ফিরে আসি। ইহুদীদের দাবি অনুযায়ী, তানাহক-এ সৃষ্টিকর্তা এই জায়ন অঞ্চলটি ওদের ভূমি হিসেবে ওয়াদা করেছেন। তাই তারা হাজার হাজার মাইল দূর থেকে ফিলিস্তিন নামক এই দেশকে দখল করার জন্য চলে এসেছে।
এখন আমাদের জানতে হবে যে, তারা এই অঞ্চলটাকে দখল করে কি করতে চায়? তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? এই পরিকল্পনার কথাও তাদের ধর্মীয় বইগুলোতে বলা আছে।
এই পরিকল্পনা বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে, যে ভূমির উপরে আল আকসা মসজিদ অবস্থিত সেই ভূমি ইহুদী ধর্মে তাৎপর্যটা আসলে কেমন। শহরায়নের কারণে বুঝা না গেলেও আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত, সেই পাহাড়টাকে তারা মাউন্ট জায়ন অথবা টেম্পেল মাউন্ট বলে থাকে। টেম্পেল মাউন্ট বলার পিছনে আসল কারণটা হচ্ছে যে, এই পাহাড়ের উপরেই নবী হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ইহুদী ধর্ম মতে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। সেই মসজিদটাকে ইহুদীরা তাদের ভাষায় টেম্পল বলে এবং এই টেম্পলে তারা এক খোদার উপাসনা করে থাকে। কিন্তু ব্যাবিলনের সাথে যুদ্ধে এক পর্যায়ে সেই টেম্পলটি ভাঙ্গা পড়ে। সেই প্রথম টেম্পেলের পশ্চিম পাশে শুধু একটি দেওয়াল অবশিষ্ট রয়েছে এখন, আপনারা দেখে থাকবেন যে, যেই দেয়ালটাতে ইহুদীরা মাথা ঠেকায় সেই দেওয়ালটাই হচ্ছে ওই প্রথম টেম্পেলের পশ্চিম দেয়াল।
পরবর্তীতে এক ইহুদী রাজা সেই টেম্পেল মাউন্ট এর উপর আরেকটি দ্বিতীয় টেম্পল নির্মাণ করে, কিন্তু সেই দ্বিতীয় টেম্পলটাও রোমান সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে ভাঙ্গা পড়ে। অতঃপর সেখানে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের আমলে এই অঞ্চলটি খেলাফতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখনই সেই পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং একই সাথে সেই মসজিদ কমপ্লেক্সে বর্তমানে ছয়টা পৃথক মসজিদ অবস্থিত। এই মসজিদগুলোকেই আমরা একসাথে আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স হিসেবে জানি।
ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী এই টেম্পল মাউন্টটাই হচ্ছে ওদের প্রধান ক্বিবলা, ওদের ধর্ম অনুসারে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম বলে গেছেন যে, মহান আল্লাহ পাক একজন আখেরী নবী এবং রসূল প্রেরণ করবেন এবং উনি ইহুদীদেরকে নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন যাতে ওরা সবাই উনার উম্মত হয়ে যায়। বর্তমানে যারা ইহুদী ধর্ম পালন করে তারা সেই আখেরী নবীর জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা এটাও বিশ্বাস করে যে আখেরী নবী এসে সেই টেম্পেল মাউন্ট এর উপরে ওদের জন্য নতুন করে ক্বিবলা নির্মাণ করে দিবে।
বর্তমান সময়ে দখলদার ইহুদীদের মধ্যে প্রধানত দুইটা ভিন্ন মত দেখা যায়। একটি মত অনুযায়ী, যেহেতু আখেরী নবী আসছেন সেহেতু তাদেরকে আগেভাগেই টেম্পেল মাউন্ট এ অবস্থিত মসজিদগুলোকে ধ্বংস করে অর্থাৎ শহীদ করে তার উপরে তৃতীয় টেম্পল নির্মাণ করে ফেলা উচিত। তাদের বিপরীত ইহুদীরা সেখানে তৃতীয় টেম্পল নির্মাণের বিরুদ্ধে থাকলেও মসজিদ শহীদ করার ব্যাপারে তারা সবাই একমত। এর জন্যই প্রায়ই দেখা যায় যে আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে ইহুদীরা হামলা করছে এবং সেটার দখল তারা ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে।
কিন্তু এই বিভ্রান্ত ইহুদীরা বিশ্বাস করতে চায় না যে, যেই আখেরী নবীর জন্য তারা অপেক্ষা করছে উনি হচ্ছেন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তিনি ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে আগমণ করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ থেকে ক্বিবলা ঘুরিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে স্থানান্তর করেছেন। এবং উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারক (হাত মুবারক) ধরে যে সকল বনী ইসরাইলিদের হিদায়েত লাভ করার কথা ছিল তারা হিদায়েত প্রাপ্ত হয়েছেন।
অতঃপর আমরা জানতে পারলাম যে এতদিন আমাদের সামনে যে সকল বয়ান হাজির করা হয়েছিল যে, পৃথিবীজুড়ে ইহুদীরা নির্যাতিত তাই তাদের জন্য ফিলিস্তিনে একটা পৃথক ভূমি দরকার যেখানে তারা নিরাপদে থাকতে পারবে। সেটা আসলে সত্য নয় ফিলিস্তিন দখল করার তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মীয়। তারা তাদের বিভ্রান্ত এবং বিকৃত ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এবং এই উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে যখন তারা আল-আকসা মসজিদকে শহীদ করতে পারবে।
-মুহম্মদ ইনজামামুল রাব্বি
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)