আল ইহসান ডেস্ক:

প্রতিদিনের ন্যায় পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ উনার সম্মানে বিশেষ মাহফিল মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। বাদ ইশা মহান মুর্শিদে আযম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি কূল-কায়িনাতের সকলের উদ্দেশ্যে নছীহত মুবারক পেশ করেন।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সবারই কমপক্ষে এক ঘন্টা যিকির করতে হবে। বেশী করতে পারলে আরো ভালো। রুহ ছাড়া জিসিমের তো কোন দাম নাই। রুহটা থাকলে জিসিমটাকে মানুষ কদর করে। জিসিম থেকে রুহটা বের হয়ে গেলে জিসিমকে তাড়াতাড়ি দাফন করে দিতে হবে। রুহানী কুওওয়াত আর ঈমানী কুওওয়াত ছাড়া কোন কাজ হবে না। সিলসিলাগুলো এভাবেই গায়েব হয়ে গেছে। পরবর্তী যারা আসছে তাদের মধ্যে যিকির ফিকির না থাকার কারনেই সিলসিলাগুলো গায়েব হয়ে গেছে।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এ সমস্ত এলাকা বিশেষ করে উপমহাদেশে আউলিয়া কিরাম উনারাই দ্বীন ইসলাম আবাদ করেছেন। প্রথমে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদগণ এখানে আবাদ করেছেন। এরপর সবসময় আউলিয়ায়ে কিরাম এখানে এসেছেন। বাংলাদেশে হাজার হাজার নয় বরং লক্ষ লক্ষ মাজার শরীফ রয়েছে। এগুলোর অনেকগুলো চিহ্নিত নাই। অনেকগুলো থাকলেও যারা দেখাশুনা করে খাদেম তাদেরও বিষয়টির খবর নাই। পুরো পাক ভারত উপমহাদেশেই অসংখ্য মাজার শরীফ রয়েছে। হযরত খাজা সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে প্রবলভাবে ইসলাম আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তারও আগে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আসছেন, উনাদের পরবর্তীতে তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীনগণ উনারাও আসছেন। সপ্তম হিজরীতে হযরত আবু কাবশা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার নেতৃত্বে চীনেও ইসলাম আবাদ করা হয়েছে।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এখনতো প্রায় সব সিলসিলাই গায়েব। এদের কেউ ওহাবী হয়ে গেছে কেউ খারেজী হয়ে গেছে। এদের কারো মধ্যে ইলমে তাসাউফ হাসিলের যিকির আযকার কিছুই নেই। তারা বাপ দাদার দোহাই দিয়ে গদ্দিনশীন নাম দিয়ে তারা নামে মাত্র টিকে আছে। যিকির করার বিষয়ে এরা একদম গাফিল। যারা বদ মাজহাবের রয়েছে তারা জাহিরী ইলমের দিকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেরা বড় আলেম সাজে। আসলে তারা গন্ডমুর্খ। ইলমে তাসাউফ যে হাসিল করা ফরজ এটাইতো কেউ জানে না। অথচ ইলমে তাসাউফ হাসিল না করলে ইখলাস হাসিল হয় না আর ইখলাস হাসিল না হলে কোন ইবাদত বন্দেগীই কবুল করা হয় না। ইবলিশ শয়তান তো এটাই চেয়েছে। এজন্য যিকির আযকার করে অন্তরের গালিজ বের করে দিলে না দিলে কখনোই হক্ব মত পথে থাকা যাবেনা। কোন নেক কাজই করা যাবে না।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, শয়তান সবসময়ই ধোঁকা দেয়। আর শয়তানের ধোঁকাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। মানুষের নফসও সবসময় ধোঁকা দিবে বিভ্রান্ত করবে এটাই স্বাভাবিক। নফস ধোঁকা দিয়ে নেক কাজ হতে ফিরিয়ে রাখে। যিকির ফিকির হতে গাফিল রাখে। মানুষের জান বাঁচানোর জন্য যতটুকু লাগে ততটুকু কামাই করাই ফরজ। অথচ ইলমে তাসাউফ হাসিলের জন্য যতটুকু ফরজ আদায় করা দরকার ততটুকু তো আদায় করা হয় না। সারা দুনিয়ার মানুষকে জিজ্ঞেস করা হলে- কতটুকু ইলমে তাসাউফ হাসিল করা ফরজ, একজনও সেটা বলতে পারবে না। আসলে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত সুলতানুল আযকারের প্রথম স্তর পর্যন্ত যিকির জারী করা প্রত্যেকের জন্য ফরজে আইন। তখন শয়তান আর থাকতে পারবে না এবং ওয়াসওয়াসাও দিতে পারবে না।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আগের আউলিয়া কিরাম অনেক যিকির আযকার করেছেন। অনেক রিয়াজত মুশাক্কাত করেছেন। তখন নফস থেকে শুরু করতেন আর এখন কলবের থেকে শুরু করা হয়। তারপরও মানুষ কলবও জারী করতে পারে না এমনকি পাছ আনফাসও জারী করতে পারে না। আসলে নিয়ত শুদ্ধ আর বড় থাকলে তখন বেশী বেশী জিকির করা হয়। কলবের দুইটা দরজা, একটা উপরের দিকে আরেকটা সিনার দিকে। সিনা যত প্রসারিত হবে রুহের দরজার মাকাম তত বৃদ্ধি হবে আর ততই উপরের দিকে উঠা যাবে। নিয়ত ছোট হলে সে কোনদিন বড় ওলীআল্লাহ হতে পারেনা। অনেক বড় নিয়ত করে কোশেশ করতে থাকলে একসময় একটা পর্যায়ে পৌঁছা যাবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ধারণা অনুযায়ী। উনার প্রতি যার যেমন ধারণা থাকবে সে তেমনই পাবে। প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হবার নিয়তেই সবাইকে ওলীআল্লাহ হবার কোশেশ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির ছাড়া অতিরিক্ত কথা বললে অন্তরটা কঠিন হয়ে যায়। অন্তরটা তখন পাথর শক্ত হয়ে যায়। তরতীবমতো যিকির আযকার করলে, ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করলে দিলটা নরম হয়। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে রুজু থাকা সহজ হবে।