পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল
পাওনাদারের সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান :
, ০৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আর যাকাত আদায়ের জন্যে শর্ত হচ্ছে যাকাতের মাল গরীব-মিসকীন বা দরিদ্রকে মালিক করে দেয়া। কিন্তু মালিক না করে যদি যাকাতের নিয়তে খেতে দেয়া হয়, তাতে যাকাত আদায় হবে না। কেননা তা মালিক করে দেয়া হয়নি শুধুমাত্র তা খেতে দেয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ কোন পাওনাদার যদি তার ফরয যাকাত আদায়ের সময় এই নিয়ত করে যে, আমি ওমুক ব্যক্তির নিকট ৫০ হাজার টাকা পাওনা আছি সেখান থেকে তাকে যাকাত বাবদ মাফ করে দিলাম। এতে যাকাত কস্মিনকালেও আদায় হবে না।
দেনাদারের কাছে যে টাকা বাকী বা পাওনা আছে সেই টাকা যাকাত বাবদ কেটে দিলে যাকাত আদায় হবে না। তবে যে সকল দেনাদার দরিদ্র অর্থাৎ যাকাতের হক্বদার, তার কাছে যাকাতদাতা পাওনাদার। যাকাতের মাল থেকে যেই পরিমাণ টাকা পাওনা আছে সেই পরিমাণ টাকা তাকে মালিক করে দিয়ে বলবে যে, এ টাকা তুমি পাওনা বাবদ আমাকে ফিরিয়ে দাও। যেমন- কোন মালিকে নিছাব ব্যবসায়ীর কাছে কোন খরিদদার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এখন উক্ত ব্যবসায়ী তার মালের যাকাত থেকে ১০ হাজার টাকা খরিদদারকে মালিক করে দিয়ে বলবে, আমি তোমার কাছে যেই ১০ হাজার টাকা পাওনা ছিলাম তা তুমি এ টাকা দ্বারা পরিশোধ করে দাও। এতে খরিদদারও দেনা থেকে মুক্তি পেল আর ব্যবসায়ীর যাকাতও আদায় হল এবং তার পাওনা টাকাও সে বুঝে পেল। আর দেনাদার যদি দরিদ্র না হয়, তাকে যাকাতের মালিক করে দিলে যাকাত আদায় হবেনা। এতে যাকাত দাতা ও গ্রহিতা উভয়ে গোনাহ্গার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় যাকাতদাতাকে তার সঞ্চিত টাকা থেকেই যাকাতের টাকা অন্য দরিদ্রকে মালিক করার মাধ্যমে আদায় করতে হবে। আর যে টাকা দেনাদারের কাছে পাওনা আছে সেই পাওনা টাকা বা যে মাল কর্জ হিসাবে দেয়া হয়েছে, তার যাকাত কখন ফরয হয় এবং কখন, কিভাবে আদায় করতে হবে, সে সম্পর্কে তিনটি ছুরত বর্ণিত আছে-
১. دَيْنٌ قَوٖىٌّ (দাইনে ক্বউয়ী) অর্থাৎ শক্ত বা প্রথম নম্বরের ঋণ। যা ব্যবসার মালের মূল্য খরিদদারের কাছে পাওনা রয়েছে অথবা কর্জে হাসানা যা দেনাদারের কাছে পাওনা রয়েছে ইত্যদি প্রকার ঋণকে “দাইনে ক্বউয়ী” বলে। এই “দাইনে ক্বউয়ী” যদি নিছাব পরিমাণ হয় আর তা যদি দেনাদার ও করজদারের কাছে বছরব্যাপী পড়ে থাকে, এ অবস্থায় পাওনাদারের উপর যাকাত আদায় করা তখনই ফরয হবে যখন কমপক্ষে নিছাবের পঞ্চমাংশ টাকা তার হস্তগত হবে। তখন পূর্ববর্তী বছরের অর্থাৎ যখন থেকে যাকাত ফরয হয়েছে তখন থেকে হিসাব করে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই এক পঞ্চমাংশেরই যাকাত আদায় করা পাওনাদারের উপর ফরয। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাকী টাকারও যাকাত আদায় করবে।
২. دَيْنٌ مُتَوَسَّطٌ অর্থাৎ মধ্যম বা দ্বিতীয় নম্বরের ঋণ হলো ব্যবসাবিহীন মালের বদল। যথা খোরাকীর শস্য অথবা সওয়ারীর ঘোড়া বা খিদমতের গোলাম এবং অন্য কোন বস্তু যা তার আছলী হাজতের (প্রয়োজনের) অন্তর্ভুক্ত ইত্যাদি বিক্রি করলে তার মূল্য ক্রয়কারীর নিকট বাকি আছে, যা নিছাব পরিমাণ। এই অবস্থায় যাকাত দেয়া তখনই ফরয হবে, যখন নিছাব পরিমাণ টাকা হস্তগত হবে। তখন পুর্ববর্তী বছরের অর্থাৎ যখন থেকে যাকাত ফরয হয়েছে তখন থেকেই হিসাব করে বর্তমান সময় পর্যন্ত যাকাত দিতে হবে।
৩. دَيْنٌ ضَعِيْفٌ অর্থাৎ দুর্বল বা তৃতীয় নম্বরের ঋণ। যা মাল ছাড়া অন্য কোন বস্তুর পরিবর্তে হবে, যথা- আহলিয়ার মোহর, খোলার বদল অথবা ঘর বা দোকান যা ব্যবসার নিয়তে ক্রয় করেনি, উহার কেরায়া (ভাড়া) কেরায়াদারের নিকট বাকী রয়েছে। তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় তহলে উক্ত টাকা হস্তগত হওয়ার পর থেকে বছর গণনা করতে হবে। অর্থাৎ হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ফরয হবেনা। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী, শামী, শরহে বেকায়া, কুদুরী, বাহরুর রায়েক, হেদায়া, আইনুল হেদায়া, এনায়া, ও কাজীখান ইত্যাদি)
আরেকটি বিধান হলো কোন ব্যক্তি কাউকে কোন কিছু কেনার জন্যে টাকা দিলো। টাকা গ্রহীতা যদি উক্ত বস্তু বা টাকা ফেরত দেয় উক্ত যাকাত আদায়ের নিয়ম নিম্নরূপ হবে-
উদাহরণস্বরূপ কোন ব্যক্তি টাকা গ্রহীতাকে একটি জমি ক্রয়ের জন্যে কিছু টাকা দিলো। এমতাবস্থায় বাসস্থানের উদ্দেশ্যে অথবা চাষাবাদ করার উদ্দেশ্যে যদি জমি কেনার জন্যে টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।
এখন, টাকা গ্রহীতা যদি জমি না দিয়ে টাকা ফেরত দেয়; আর সে টাকা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং বছর পূর্ণ হয় তাহলে সে টাকারও যাকাত দিতে হবে। আর যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি কেনার জন্যে টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। জমিদাতা যদি জমি না দিয়ে টাকা আটকে রাখে তবে টাকা দাতা ইচ্ছা করলে তখনও যাকাত আদায় করতে পারে অথবা যখন জমি অথবা টাকা পাওয়া যাবে তখন যত বছর এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে ততো বছরেরই যাকাত অবশ্যই আদায় করতে পারবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৩)
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (১)
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রচলিত হারাম রছম করুন বর্জন, পবিত্র দ্বীন পালনেই কামিয়াবী অর্জন
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযা শরীফ
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত সৌন্দর্য মুবারক ও শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আরব মহিলাদের নিসবতে ‘আযীম শরীফের প্রস্তাব এবং উনার বেমেছাল পবিত্রতা মুবারক
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)