পবিত্র ১২ ই শরীফ নিয়ে সাধারণ মানুষের উপলব্ধি এবং আমাদের করণীয়
, ২১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম, আচ্ছা আপনার বাবাকে কি কখনো নাম ধরে ডেকেছেন? ভদ্রলোক বললেন, আপনার হয়েছে কি বলেনতো, এক প্রশ্ন থেকে অন্য প্রশ্নে যাচ্ছেন। কিছুই বুঝতে পারছিনা। নিজের বাবাকে কি কখনো নাম ধরে কাউকে ডাকতে দেখেছেন? আমি বললাম, ঠিক ধরেছেন। তাহলে প্রশ্ন যখন অনেক করছি আরও একটা প্রশ্ন।
আপনি আপনার সন্তানের জন্মদিন কবে শেষ পালন করেছেন? হেসে বললেন আপনার আজ হয়েছে কি বলেন তো? যাই হোক বলছি , এইতো বড় ছেলের জন্মদিন গেলো গত মাসে, ওর ক্লাসের সব বন্ধুরা এসেছিলো। আর ওর মা আমাদের আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করেছিলো।
আমি ভদ্রলোকের কাছে জানতে চাইলাম, আপনি আপনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনার সন্তান, আপনার বাবা উনাদের মধ্যে কাকে বেশী মুহব্বত করেন বা মুহব্বত করা উচিত বলে মনে করেন। ভদ্রলোক গম্ভীর হয়ে বললেন, দেখুন এটা ঈমানের দাবী, সকল কিছুর চেয়ে নিজের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশী মুহব্বত করা। ইসলামের ইতিহাস পড়লেই পাওয়া যায় হযরত সাহাবা আজমাইনগণ নিজের জীবনের চেয়ে বেশী মুহব্বত করেছেন আমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনাকে পেয়ে খুশী প্রকাশ করতেন।
আমি বললাম, তাহলে শুনুন আপনি যদি আপনার বাবার নাম ধরে না ডাকতে পারেন তাহলে কি করে আমাদের যিনি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক ধরে আপনি ডাকলেন? আপনার বলা উচিত ছিল " নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম"।
আপনি আপনার ছেলের জন্মদিন পালন করলেন বেশ ঘটা করে অথচ আপনার, আমার, আমাদের রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেদিন পৃথিবীর বুকে এলেন আমাদের রহমত, বরকত দেবার জন্যে, সে দিবসকে কেন আমরা ভুলে যাই। আর সে দিনের জন্য আমাদের খরচ করার প্রস্তুতি কোথায়? আপনি পবিত্র ১২ ই রবীউল আউয়াল শরীফ তারিখও ভুলে গেলেন?
ভদ্রলোক আমার হাত ধরে নিয়ে পাশের একটি হোটেলে বসালেন, বলতে শুরু করলেন " দেখুন আপনি সঠিক, আমার দ্বিমত করার সাহস নেই। কিন্তু কেন আমাদের এ অবস্থা তার অনেক কারণ রয়েছে। আমরা তো তাই করছি যা আমাদের মাঝে কালচার হিসেবে, সামাজিকতা হিসেবে চালু রয়েছে। আমি শুধু জুমুয়াবারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এলাকার মসজিদে পড়ি। অন্য সময় অফিসে নামাজ পড়া হয়। জুমুয়ার খুৎবাতেও এ নিয়ে তেমন কোন আলোচনা ইমাম সাহেব করেন না। সরকারের তরফ থেকেও নেই উল্লেখযোগ্য কোন অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়, হিন্দুদের পুজা অনুষ্ঠানে গিয়েও বক্তব্য রাখা হচ্ছে , জাতির পিতার ছবি রাখার জন্য, ১৫ ই আগস্টের অনুষ্ঠান পালনের জন্য, নেতা নেত্রীদের জন্মদিন পালনের জন্য যেভাবে উদ্যোগ নেয়া হয় সে রকম উদ্যোগ যেহেতু নেই তাই আমাদের স্মৃতির মধ্যেও বিষয়টি নেই। এ ছাড়া, ঘরে যখন টিভি চলে তখন ভারতের সংস্কৃতি আমাদের গ্রাস করছে, ইসলাম উনার শিক্ষায় কোথায়? আর সে কারণেই আমাদের অধিকাংশের অনুভূতি আজ এরকম।
আমি বললাম ঠিক আছে, কিন্তু আপনার জবাব তো আপনাকেই দিতে হবে। সরকার অনেক কিছুই বলছে, করছে, কিন্তু তারও আগে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা, উনাকে পেয়ে খুশী প্রকাশ করার কথা বলেছেন সে ক্ষেত্রে কি আপনি দায়িত্ব এড়াতে পারবেন? তিনি বললেন, আমাদের তো পবিত্র কুরআন শরীফ উনার শিক্ষাই জীবনে অনুপস্থিত।
আমি বললাম আসলে এর এক সহজ সমাধান হচ্ছে একজন হক্ক, সঠিক ওলী আল্লাহ, অর্থাৎ একজন শায়েখ উনার কাছে যাওয়া। উনার হাতে বাইয়াত হওয়া। তা হলে আপনি এ সকল শিক্ষা সহজেই পেতে পারতেন। অর্থাৎ আপনার স্মরণে থাকতো পবিত্র ১২ই শরীফ কবে আসছে, আপনার জানা থাকতো কিভাবে আমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণের সময় যথেষ্ট আদব প্রকাশ করতে হয় এবং আপনি আপনার সন্তান আগমনের দিনের চেয়েও বেশী খুশী প্রকাশ করতে পারতেন যেদিন আমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পৃথিবীতে এসেছেন। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। ভদ্রলোক বাইয়াত হবার কথা শুনেই জিহ্বা কামড় দিলেন। বুঝলাম, সেই একই সমস্যা। আমাদের সমাজ, শিক্ষা ব্যবস্থা ওলী আল্লাহ, পীর, বাইয়াত এ বিষয় নিয়ে এমন এক গোলক ধাধা তৈরি করে রেখেছে যে সাধারণ মানুষ শুনলেই ভয় পায় এবং নানান দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।
আমি বললাম আসলে হক ওলী আল্লাহ পূর্বেও ছিলেন, আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। ধর্ম ব্যবসায়ীদের কথা ভাবলে চলবেনা। নানা ধরণের ধর্ম ব্যবসায়ী রয়েছে। এরা অবস্থান করে মসজিদের ইমাম বেশে, কেউ রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে, কেউ ভন্ড পীর সেজে। কিন্তু এদের সহজে চেনার উপায় হচ্ছে - যারা ছবি তুলবে, মহিলাদের সাথে ঊঠাবসা করবে, সম্মানিত শরীয়ত পালন করা থেকে, সুন্নত পালন থেকে দূরে থাকবে এবং বিশেষভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির মানুষ বলবে, উনাকে পেয়ে খুশী প্রকাশ করা থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলবে , ওরা নিশ্চিত ঊলামায়ে ছু অর্থাৎ ধর্ম ব্যবসায়ী। ওদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
আমার কথায় উনার মধ্যে এক ধরণের ভাবান্তর লক্ষ্য করলাম। তিনি বলতে শুরু করলেন " আসলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশী প্রকাশের বিষয়টি যে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন এর অনেক গভীরতা রয়েছে। দেখুন সাধারণভাবে কারো আগমন বা সমাজে অবদান ইত্যাদি নিয়ে যখন কোন অনুষ্ঠান করা হয় তা হোক আলোচনা অনুষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর নেপথ্যে কিন্তু থাকে খুশী। কিন্তু আমরা কার জন্য এবং কতটা শরীয়ত সম্মতভাবে খুশী প্রকাশ করছি সেটা কিন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অভাব আজ নৈতিকতা এবং আদর্শের এবং এ বিষয় নিয়ে আলোচনার। সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র নির্বিশেষে একটি বিষয়ে মতানৈক্য নেই তা হচ্ছে সকল দিক থেকে উত্তম আদর্শের এবং চরিত্রের অধিকারী ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তাহলে উনাকে যদি অনুসরণ করতে হয় তাহলে উনার আলোচনা ছাড়া কখোনো সম্ভব নয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই ইরশাদ মুবারক করেছেন " তোমাদের জন্য আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছেন সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক।" আজ যদি ঘরে ঘরে শুধু উনার আলোচনাই হত তা হলে মানুষ মুক্তির পথ খুঁজে পেত। আমি বললাম আপনি সঠিক বলেছেন তবে আপনার কথার সাথে একটু যোগ করতে চাই তা হচ্ছে যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমরা কাছে পাচ্ছিনা তাহলে সেই আদর্শ এবং উনার রেখে যাওয়া দ্বীন, আখলাক কার কাছ থেকে শিখবো? আর সে কারণেই প্রয়োজন একজন নায়েবে রসূল উনার । যিনি আমাদের হাতে কলমে শিক্ষা দেবেন সেই আদর্শ আর সে কারণেই একজন হক্কানী, রব্বানী ওলী আল্লাহ খুঁজে বাইয়াত হওয়া ফরয।
-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রূহুল হাসান
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)