সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ পালন করার গুরুত্ব-ফযীলত ও মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
, ২৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১১ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম

পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকের বেজোড় সংখ্যক রাতে পবিত্র ক্বদর শরীফ তালাশ করা খাছ সুন্নত মুবারক। মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-ফযীলতপূর্ণ দিবস মুবারক।
সকলকেই এই মহামান্বিত ‘লাইলাতুল ক্বদর’ উনার পরিপূর্ণ নি’য়ামত, রহমত-বরকত অর্জন করতে হবে। এই বরকতময় রাত্রিতে অবহেলা-অলসতা আর খোশগল্পে কাটানো কোনোক্রমেই নেককারদের কাজ হবে না।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ইখলাছের সাথে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে”। (বুখারী শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِىْ خَمْسِ لَيَالٍ اَوَّلُ لَيْلَةٍ مِّنْ رَجَبَ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ الْمُبَارَكَةِ وَلَيْلَتَا الْعِيْدَيْنِ.
অর্থ: নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দু‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে (১) পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসের প্রথম রাতে (২) পবিত্র শবে বরাতের রাতে (৩) পবিত্র শবে ক্বদরের রাতে (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাতে (৫) পবিত্র ঈদুল আদ্বহার রাতে।
পবিত্র ক্বদরের রাত্রিতে বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার, নামায-কালাম, তাছবীহ্-তাহলীল, যিকির-আযকার, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ, ও দান-ছদকা, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ, দু‘আ-মুনাজাত ইত্যাদি নেককাজের মধ্যে মশগুল থাকতে হবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উনার রাত্রিতে জাগ্রত থাকাকে পবিত্র সুন্নত মুবারক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে নিজের জিন্দেগীর সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা করার ও সর্বপ্রকার দোয়া কবুলের রাত।
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলার দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিনের প্রতি বিজোড় রাত্রিতে জাগ্রত থেকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর বা পবিত্র শবে ক্বদর তালাশ করা। রাত্রিতে জাগ্রত থেকে বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করা, ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানো এবং সকল মুসলমানের জন্য দু‘আ করা। যার মনে যতো আরজি রয়েছে তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা।
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ পালন করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
পবিত্র ইশার নামায, পবিত্র তারাবীহর নামায ও পবিত্র বিতিরের নামায আদায়ের পর পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করতঃ সংক্ষিপ্ত নছীহত করে ছওয়াব রেসানী করতঃ ইমাম ছাহিব সমবেত মুছল্লীবৃন্দকে নিয়ে দু‘আ করবেন। এতে যার যার নেক আরজু রয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত উছীলা মুবারকে খ¦ালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অত্যন্ত আযীযী-ইনকিছারীর সাথে মুনাজাত করবে। অতঃপর দু‘আ শেষে ইমাম ছাহিব মুছল্লীদেরকে পর্যায়ক্রমে যেসব ইবাদত বান্দিগী করতে হবে তা অবহিত করবেন। তা হলো-
পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার নামায পড়বে
পবিত্র ছলাতুল ক্বদর উনার নিয়তে দুই দুই রাক‘আত করে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাক‘আত সুন্নত নামায পড়বে।
পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে যেকোনো পবিত্র সূরা শরীফ মিলালেই চলবে।
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফের নামায উনার নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ.
অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ নামায পড়বে
ছলাতুত তাসবীহ উনার নামায পড়বে। যার দ্বারা যিন্দেগীর সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।
নিয়ত -
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلٰوةِ التَّسْبِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ.
অতঃপর ৪,৬ বা ৮ রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামায আদায় করা। যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক হাছিল হয়।
অতঃপর যিকির-আযকার করবে
যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা ক্বলব বা অন্তর ইছলাহ হয়।
অতঃপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে
কিছুক্ষণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর কবর যিয়ারত করবে
সম্ভব হলে কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক আদায় হয়।
অতঃপর দান-ছদক্বা করবে
গরীব-মিসকীনকে দান-ছদক্বা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা “হাবীবুল্লাহ” হওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করবে
পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মহাসম্মানিত সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়।
অতঃপর ছওয়াব রেসানী করে খালিছ তওবা করে আখিরী মুনাজাত করবে। আখিরী মুনাজাত অবশ্যই ছুবহে ছাদিক্বের পূর্বে করতে হবে। কারণ ছুবহে ছাদিক্বের পর পবিত্র ক্বদর উনার রাত থাকে না। আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিক্বের এতটুকু পূর্বে শেষ করতে হবে, যাতে করে পরের দিন রোযা রাখার জন্য সাহরী খাওয়া শেষ করতে পারে।
উল্লেখ্য, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফে খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারকে পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ পালন করা হয়ে থাকে।
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আহলু বাইতি রসূল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি এমনভাবে পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ উনার ইবাদত-বন্দেগী ধারাবাহিকভাবে সাজিয়েছেন যে, এক মুহূর্তের জন্যেও গাফেল থাকার সুযোগ নেই।
সেজন্য সকলের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হলো পবিত্র রাজারবাগ শরীফে উপস্থিত হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ পালন করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ঈদুল ফিতর সংক্রান্ত মহাসম্মানিত সুন্নতী আমল (২য় পর্ব)
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ঈদুল ফিতর সংক্রান্ত মহাসম্মানিত সুন্নতী আমল (১)
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা’
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র যাকাত-ফিতরা আদায়ের হুকুম আহকাম ও মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক (১)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মেশ্ক মিশ্রিত সুন্নতী ইসমিদ সুরমা
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা খাছ সুন্নত মুবারক (৩)
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী খাদ্য “সিরকা
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা খাছ সুন্নত মুবারক (২)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাদ্য সামগ্রী সামুদ্রিক মাছ খাওয়া সুন্নত মুবারক
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা খাছ সুন্নত মুবারক (১)
২২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)