সুন্নতী মুবারক তা’লীম
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব
, ০৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত; প্রতি হরফে রয়েছে কমপক্ষে দশ নেকী:
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের গুরুত্ব-ফযীলত অতুলনীয়। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এই সম্মানিত কিতাব মুবারক নাযিল হয়। সমস্ত আসমানী কিতাব মুবারকের সাইয়্যিদ বা প্রধান হলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ। কায়িনাতের মাঝে পবিত্র কুরআন শরীফ শরীফ-ই মহান কিতাব মুবারক, যার তিলাওয়াতে রয়েছে প্রতিটি হরফে হরফে নেকী। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ.
অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি হরফ পাঠ করলো, তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর একটি নেকী দশ নেকী সমতুল্য। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম- একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ২৯১০)
অতএব, আলিফ লাম মীম তিলাওয়াত করলে কমপক্ষে ত্রিশ নেকী লাভ হবে। লক্ষণীয় বিষয় হল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দৃষ্টান্ত স্বরূপ আলিম লাম মীম উল্লেখ করেছেন। আর এটি এমন এক শব্দ, যার অর্থ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ছাড়া কেউ জানেন না। এখান থেকে বুঝা গেল যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অর্থ না বুঝে পড়লেও রয়েছে অনেক ছওয়াব, অনেক ফায়দা। আর যদি কেউ অর্থ বুঝে বুঝে উপলব্ধির সাথে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে আরো কত ছওয়াব দিবেন, তা তো মহান আল্লাহ পাক তিনি-ই ভালো জানেন।
তিলাওয়াতের ফযীলত উত্তম থেকে উত্তম:
হযরত উকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার আমরা সুফফায় অবস্থান করছিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আচ্ছা বলুন তো, কেউ বুতহান অথবা আকীকে গিয়ে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট দু’টি উটনী নিয়ে আসবে। কারো উপর জুলুম করে নয়। কোনো অপরাধ করে নয়। কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে নয়; খুবই ন্যায়সঙ্গতভাবে। আপনাদের মধ্যে কে আছেন এমনটি চাইবেন? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরকম হলে তো আমাদের সবাই তা চাইবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মসজিদে গিয়ে ইলিম শেখা অথবা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দু’টি পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা, সেই দুই উটনী অপেক্ষা উত্তম। তিনটি পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করা তিনটি উটনী থেকে উত্তম। চারটি পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করা চারটি উটনী থেকে উত্তম। (মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৮০৩)
উল্লেখ্য, তৎকালীন আরব দেশে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট উটনী ছিল অনেক মূল্যবান সম্পদ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পার্থিব এ মূল্যবান সম্পদের তুলনা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন পরকালীন বিবেচনায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একেকটি পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করা-শেখা কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সুবহানাল্লাহ!
উত্তমভাবে তিলাওয়াতকারীগণ থাকবেন সম্মানিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে:
প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে ছহীহ-শুদ্ধভাবে, উত্তমরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَالّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقّ، لَهُ أَجْرَانِ.
অর্থ: যারা উত্তমরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত হযরত ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে। আর যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে গিয়ে আটকে আটকে যায় এবং কষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছওয়াব। (মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৭৯৮)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিকে যেভাবে তিলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিদের জন্য সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন; তেমনি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে যাদের কষ্ট হয়, মুখে আটকে আটকে যায়, তাদের জন্যও সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন। তাই যারা এখনো ছহীহ-শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শিখেনি, সাবলীলভাবে তিলাওয়াত করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি, তাদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি তাওয়াক্কুল করে বিশুদ্ধভাবে, সাবলীলভাবে তিলাওয়াতের কোশেশে মশগুল থাকবে।
তিলাওয়াতকারীদের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ শাফায়াত করবে:
যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে পবিত্র কুরআন শরীফকে নিজের সঙ্গী বানাবে কিয়ামতের দিন পবিত্র কুরআন শরীফ তাকে ভুলবেন না। কিয়ামতের সেই কঠিণ মুহূর্তে পবিত্র কুরআন শরীফ তাকে সঙ্গ দেবেন এবং তার জন্য শাফায়াত (সুপারিশ) করবেন। হযরত আবূ উমামা বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ.
অর্থ: তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করো। কেননা কিয়ামতের দিন পবিত্র কুরআন শরীফ তিনি উনার ‘ছাহিবের’ জন্য সুপারিশ করবেন। (মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৮০৪)
ছহিবে কুরআন শরীফের পরিচয় ও তিলাওয়াতের মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক:
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছাহিব কে? মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, ‘ছাহিবে কুরআন শরীফ’ বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যিনি পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে মশগুল থাকেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিদায়েত ও নির্দেশ মুবারকসমূহ গ্রহণ করেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হুকুমগুলো আমলে নেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিফয করেন। (কূতুল মুগতাযী আলা জামিইত তিরমিযী শরীফ ২/৭৩২)
অতএব আমাদেরকে ‘পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছাহিব’ বা পবিত্র কুরআন শরীফওয়ালা হওয়ার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছাহিব হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ইহতিমামের সাথে তিলাওয়াত করা।
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক হচ্ছে, মাদ-মাখরাজ, সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে তারতীলের সাথে, ধীরে ধীরে পাঠ করা। তাড়াহুড়া না করা, ইনিয়ে-বিনিয়ে পাঠ না করা। এক কথায়, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, রহমাতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি যেভাবে তিলাওয়াত মুবারক করেন, এভাবে তিলাওয়াত করাই খাছ সুন্নত মুবারক।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে খাছ সুন্নতী তারতীবে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঠান্ডা ও মিঠা পানি পান করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফল খাওয়া মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাঁটি মধুসহ সকল সুন্নতী সামগ্রী
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)