নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
, ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৯ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০১ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের তরফ থেকে বিগত, আগত-অনাগত সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের প্রতি অশেষ সীমাহীন রহমত মুবারক এই যে, উনারা বর্তমান যামানায় দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করেছেন ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনাকে। সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র তিনিই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের হাক্বীক্বী বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সবাইকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের যে সকল হাক্বীক্বী বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন, সেখান থেকে অতি সংক্ষেপে কতিপয় বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক তুলে ধরা হলো-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের মালিক হচ্ছেন তিনি। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবূব, মুরাদ ও সমগ্র কায়িনাতের মালিক হিসেবে সমস্ত কিছু দিয়ে সৃষ্টি মুবারক করে উনার সাথে সংযুক্ত করেছেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ মুবারকে রয়েছেন অর্থাৎ হাক্বীক্বী দীদার, যিয়ারত, ছোহবত মুবারক উনাদের মধ্যে সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিলেন, এখনও আছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ থাকবেন। উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযিলতসমূহ উনাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বশরীরে পবিত্র মি’রাজ শরীফ অন্যতম। আর পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনাকে অস্বীকার ও অবজ্ঞা করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি মুত্ত্বলা’ আলাল গইব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত ইলিম মুবারক উনাদের মালিক বানিয়েছেন। তিনি কায়িনাতের সর্বত্র হাযির-নাযির। তিনি ছহিবে শাফা‘আতে কুবরা। উনার শাফা‘আত মুবারক ব্যতিত কেউ নাজাত লাভ করতে পারবে না। তিনি ‘নূরে মুজাসসাম’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র তাহতাদ্দুলু’ অর্থাৎ পবিত্র বাম পাজর মুবারক উনার নীচ দিয়ে কুদরতীভাবে জমিনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেছেন। অতঃপর সেখান থেকে এক কাতরা নূর মুবারক নিয়ে সারা কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন। তবে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার জাতী নূর নন। জাতী নূরে বিশ্বাস করা কুফরী। তিনি রহমাতুল্লিল আলামীন। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মুজাসসাম মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম বা শরীর মুবারক-এ) যা কিছু ছিলেন, সবকিছুই ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম মুবারক-এ কখনো মশা-মাছি বসতো না। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুশ শিফা মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছোট ইস্তেঞ্জা মুবারক) যাঁরা পান করেছেন, উনারা সর্বোচ্চ শ্রেণীর জান্নাতী। এক মুহূর্তের তরেও উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তার্বারুক মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র স্পর্শ মুবারক-এ) যা কিছু এসেছেন তা আসমান-যমীন, সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ, মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে; এমনকি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও কোটি কোটি গুণ বেশি পবিত্র, ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি সৃষ্টির কারো মতো নন। উনাকে অন্যদের মতো সম্বোধন করা বা আহ্বান করা কুফরী। উনাকে সৃষ্টির কারো সাথে তুলনা করা সুস্পষ্ট কুফরী। একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালিমা শরীফ হচ্ছেন- لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ। ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ যদি শুধু لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ বলে, তাহলেও সে ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ না বলবে। সুবহানাল্লাহ! উনাকে পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি, আত্মীয়-স্বজন, অর্থ-সম্পদ; এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি মুহব্বত করা ব্যতীত কেউ কস্মিনকালেও ঈমানদার হতে পারবে না। উনার কোনো ছায়া মুবারক ছিলেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা দায়িমীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত মুবারক পাঠ করছেন। তাই দায়িমীভাবে ২৪ ঘণ্টাই উনার সম্মানিত গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া, সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা এবং সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করা অর্থাৎ উনার সম্মানার্থে অনন্তকালব্যাপী ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্যই ফরযে আইন। তিনি ‘খ্বাতামুন নাবিয়্যীন’ বা সর্বশেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার পরে আর কেউই নবী-রসূল হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করবেন না। উনার পরে কেউ নবী দাবি করলে সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হবে। যেমন- কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি। তিনি দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত কোনো কথা মুবারক বলেননি, কোনো কাজ মুবারক করেননি এবং কোনো কিছু সমর্থন মুবারকও করেননি। উনার ব্যক্তিগত যিন্দেগী বলে কিছু নেই। উনার পুরো হায়াত মুবারকই মহাসম্মানিত নবুওয়াতী ও রিসালতী যিন্দেগী মুবরক। তিনি নিজ থেকে কিছু বলেছেন, করেছেন বা সমর্থন করেছেন এরূপ আক্বীদাহ্ পোষণ করা সুস্পষ্ট কুফরী। উনার হাটা-চলা মুবারক, নড়া-চড়া মুবারক, খাওয়া-দাওয়া মুবারক, ঘুম মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র স্বপ্ন মুবারকও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। ‘তিনি ইজতিহাদ করেছেন, উনার ইজতিহাদে ভুল হয়েছে এবং উনার বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি ছিলো। ’ এরূপ আক্বীদাহ্ পোষণ করা সুস্পষ্ট কুফরী। না‘ঊযুবিল্লাহ! তিনি হচ্ছেন শারে’ বা শরীয়ত প্রণেতা। উনাকে সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না; এমনকি রুবূবিয়াত মুবারকও প্রকাশ করতেন না। তিনি সর্বকালে সবার জন্য উসওয়াতুন হাসানাহ্। উনাকে ইত্তেবা করা ব্যতীত কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়া যাবে না। উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাদেরকে ইহানত করা কুফরী। উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং পূর্বমহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা কেউই কাফির-মুশরিক বা মানবীয় কোনো দোষে কখনোই দোষী ছিলেন না; বরং উনারা প্রত্যেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ মনোনীত মহান ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং উনাদের যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুবারক ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক পোষণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)