দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩১)
পবিত্র ঈমান রক্ষায় সাইয়্যিদুনা হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবর্ণনীয় যুলুম-নির্যাতন শিকার
, ০৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পূর্ব প্রকাশিতের পর
লৌহবর্ম পরিধান করিয়ে নির্যাতন:
যালিম সিবা’ গোত্র প্রধানদের পক্ষ থেকে নির্দেশ ও দায়িত্ব পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে তার দলবল নিয়ে হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর নানানভাবে নির্যাতন শুরু করে। তারা উনাকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বালুময় উত্তপ্ত উপত্যকায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে উনার শরীর মুবারক থেকে পোশাক খুলে ফেলে লৌহ বর্ম পরিধান করিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখে। উপর থেকে সূর্যতাপ নীচ থেকে যমীনের উত্তাপ ও শরীরে পরানো লৌহ বর্মের তাপ এই ত্রিমুখী তাপে হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রাণ মুবারক প্রায় যায় যায়। প্রচ- তৃষ্ণায় ছটফট করলেও উনাকে পানি দেওয়া হত না। যদি পানি চাইতেন তাহলে এরা বলতো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? এই অমানবিক কঠিন নির্যাতনের শিকার তৃষ্ণার্ত অবস্থায়ও তিনি জবাব দেন-
هُوَ عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَنَا بِدِيْنِ الْهُدٰى وَالْحَقِّ لِيُخْرِجَنَا مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ.
‘তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব হাবীব ও মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য সত্য ও সঠিক দ্বীনসহ তিনি প্রেরিত হয়েছেন। ’ সুবহানাল্লাহ!
এই জবাব শুনে কাফিররা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পুনরায় নির্যাতন শুরু করে। অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করে, ‘লাত ও উযযা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?’ হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্পষ্ট ভাষায় জবাব দেন-
صَنَمَانِ أَصَمَّانِ أَبْكَمَانِ لَا يَضُرَّانِ وَلَا يَنْفَعَانِ
‘তারা বোবা-বধির দু’টি মূর্তি, যাদের পক্ষে কারো ক্ষতি বা কল্যাণ করার কোন ক্ষমতা নেই। ’ অতঃপর আবার শুরু হয় যুলুম-নির্যাতন। এভাবেই চলতে থাকে। (ছুওয়ারুম মিন হায়াতিছ ছাহাবা, ৪১৪-৪১৫ পৃষ্ঠা)
জ্বলন্ত লোহার উপর চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে নির্যাতন:
কাপড়হীন শরীর মুবারকে লৌহ বর্ম পরিধান করিয়ে নির্যাতনের পরেও উনার কথায় কোনো পরিবর্তন হলো না। গোত্র প্রধানরা হতাশ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। আরো কঠিন নির্যাতনের সিদ্ধান্ত নিলো। তারা লোহা আগুনে গরম করে, অন্য বর্ণনা মতে পাথর গরম করে তার উপরে হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে বুকে পাথর চাপা দিতো। উনার পিঠ মুবারকের গোশত ও চর্বি গলে সেই আগুন নিভে যেতো।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একবার সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট উপস্থিত হলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে নিজের আসন মুবারকে বসালেন এবং বললেন, এই আসন মুবারকে বসার জন্য একজন ব্যক্তি ব্যতীত যমীনের আর কেউ আপনার চেয়ে বেশি হক্বদার নন। হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞেস করলেন-
وَمَنْ هُوَ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ؟
হে আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! কে সেই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব? সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এটা শুনে হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমিই উনার চেয়ে অধিক হক্বদার। হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাহায্যকারী ছিলো।
وَلَمْ يَكُنْ لِيْ أَحَدٌ لَقَدْ رَأَيْتَنِيْ يَوْمًا وَقَدْ أَوْقَدُوْا لِيْ نَارًا ثُمَّ سَلَقُوْنِيْ فِيْهَا ثُمَّ وَضَعَ رَجُلٌ رِجْلَهٗ عَلٰى صَدْرِيْ فَمَا اِتَّقَيْتُ الْأَرْضَ إِلَّا بِظَهْرِىْ ثُمَّ كَشَفَ حَضْرَتْ خَبَّابٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ ظَهْرِهِ فَإِذَا هُوَ قَدْ بَرِصَ.
‘কিন্তু আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিলেন না। আপনি দেখেছেন একদিন তারা আমার জন্য আগুন জালিয়েছিলো। এরপর আমাকে সেখানে নিক্ষেপ করে। অতঃপর এক নরপিশাচ তার পা আমার বুকের উপর রাখে। আমি শুধু আমার পিঠ দ্বারা যমীনের উপর আত্মরক্ষা করতাম। তারপর হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিঠ মুবারক খুলে দেখান। যা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে কুষ্ঠরোগে পরিণত হয়েছিলো। ’ (ইমতাউল আসমা ৯/১০৮)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)