ছহিবু সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ
মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র হজ্জ এবং পবিত্র উমরাহ উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, হুকুম-আহকাম সম্পর্কে
, ২৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সেটাই পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করে বলা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِّمَا بَيْنَهُمَا وَالْـحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهٗ جَزَاءٌ إِلَّا الْـجَنَّةُ
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
اَلْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِّمَا بَيْنَهُمَا
কেউ যখন উমরাহ করে। হজ্জে তো গুনাহখতা মাফ হয়েই থাকে। যখন সে শুধু উমরাহই করে, উমরাহকারীকেও এক উমরাহ থেকে আরেক উমরাহ পর্যন্ত তার যত গুনাহখতা হয় সব মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! এটা কাফফারা হয়ে যায়। সমস্ত গুনাহখতা মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! আর
وَالْـحَجُّ الْمَبْـرُوْرُ لَيْسَ لَهٗ جَزَاءٌ إِلَّا الْـجَنَّةُ
আর হজ্জে মাবরূর যখন নছীব হয়ে গেল, হজ্জে মাবরূর যে করতে পারলো তার বদলা জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছু নয়। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সে জান্নাতী হবে। মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক যিনি রব উনার এবং যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেজামন্দি সন্তুষ্টি সে লাভ করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ! এবং বিশেষ করে হজ্জ এবং উমরাহ উভয়টা মানুষের গোনাহখতাগুলো ক্ষমা করিয়ে দেয়। সেটাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَابِعُوْا بَيْنَ الْـحَجِّ وَالْعُمْرَةِ؛ فَإِنَّـهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيْرُ خَبَثَ الْـحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجِّ الْمَبْرُوْرِ ثَوَابٌ إِلَّا الْـجَنَّةَ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
تَابِعُوْا بَيْنَ الْـحَجِّ وَالْعُمْرَةِ
তোমরা হজ্জের সাথে উমরাহ করে নিও।
فَإِنَّـهُمَا
নিশ্চয়ই হজ্জ এবং উমরাহ
يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ
হজ্জ- উমরাহ মানুষের অভাব দূর করে দেয়, গুনাহখতা মাফ করিয়ে দেয়। সুবহানাল্লাহ! হজ্জ ও উমরাহ করলে একদিক থেকে তার গুনাহ খতাগুলো মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দেন আরেকদিকে তার অভাব দূর করে সচ্ছলতা দান করেন। সুবহানাল্লাহ!
كَمَا يَنْفِي الْكِيْرُ خَبَثَ الْـحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ
যেমন রেত দিয়ে লোহার জংকার দূর করে দেয়, হাপরের দ্বারা। লোহার জংকার দূর করে দেয়, স্বর্ণ এবং চান্দির ময়লা দূর করে দেয়া হয়। তদ্রুপ যারা হজ্জকারী ও উমরাকারী, এই হজ্জ এবং উমরাকারী তাদের যিন্দিগীর একদিক থেকে গুনাহখাতাগুলো ক্ষমা করিয়ে দেয়া হয় এবং আরেক দিক থেকে তাদের অভাব দূর করে দিয়ে সচ্ছলতা দান করা হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
وَلَيْسَ لِلْحَجِّ الْمَبْرُوْرِ ثَوَابٌ إِلَّا الْـجَنَّةَ
এরপর স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
وَلَيْسَ لِلْحَجِّ الْمَبْرُوْرِ ثَوَابٌ إِلَّا الْـجَنَّةَ
হজ্জে মাবরূরের বদলা জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন কিছুই নয়। সুবহানাল্লাহ! এখন যারা খালিছভাবে হজ্জ করতে পারবে, আদেশ-নির্দেশ মোতাবেক তাদের হজ্জে মাবরূর নছীব হবে, গুনাহখতা মাফ হবে, তাদের রিযিকে বরকত হবে, আমলে তাদের উন্নতি হবে, তাদের হাক্বীক্বী ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী হাছিল হবে। যাদের হজ্জে মাবরূর নছীব হয়ে থাকে। যেটা বলা হয়েছে, একটা লোক হজ্জ করতে যেয়ে থাকে। হজ্জ করলে যদি তার হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তখন দেখা যাবে সে হজ্জ থেকে ফিরে আসার পরে যেহেতু তার গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়, রিযিক বরকত দেয়া হয় এসে তার আমলগুলি আস্তে আস্তে উন্নতি লাভ করে। অর্থাৎ সে আস্তে আস্তে আরো বেশি পরহেযগার, মুত্তাক্বী, আল্লাহওয়ালা, আল্লাহওয়ালী হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! আর দেখা যাবে, যারা হজ্জ করে আসার পরে আমলে উন্নতি হচ্ছে না, সে নেক কাজ করতে পারছে না বরং সে বদ আমলে আরো মশগুল হয়ে যাচ্ছে। হারাম কুফরীতে মশগুল হচ্ছে তাহলে বুঝা যাবে, তার হজ্জে মাবরূর নছীব হয়নি বরং হজ্জটা তার লা’নতের কারণ হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই হজ্জ কবুল হলো অথবা হলো না যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা ফায়সালা করবেন । নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সে বিষয়গুলি বণ্টন করে থাকেন। দুনিয়াবী দৃষ্টিতে হজ্জ কবুল হলো অথবা হলো না সেটা বুঝার জন্য সহজ হচ্ছে, যে হজ্জ করে আসলো পুরুষ হোক মহিলা হোক তার আমলে কোন উন্নতি হয়েছে অর্থাৎ সে কি মুত্তাক্বী হচ্ছে, পরহেযগার হচ্ছে, তাক্বওয়া অর্জন করছে যদি সেটা হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে, তার হজ্জ কবুল হয়েছে। আর যদি বিপরীত হয় মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন তাহলে বুঝতে হবে তার হজ্জ কবুল হয়নি। সে লা’নতগ্রস্ত হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! বিষয়টা সুক্ষ্ম বিষয়। এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে বলে দিয়েছেন। কি বলেছেন?
فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْـحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلاَ فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْـحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى وَاتَّقُوْنِ يَاۤ أُولِي الْأَلْبَابِ
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْـحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْـحَجِّ
যাদের হজ্জ ফরয হবে তারা যেন হজ্জ করতে যেয়ে অশ্লিল-অশালীন, বেপর্দা- বেহায়ামূলক কোন কাজ না করে, নাফরমানীমূলক কোন কাজ না করে। এবং ঝগড়াঝাটি না করে।
فَلاَ رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ
অশালীন ও নাফরমানীমূলক কাজ যেন না করে।
وَلاَ جِدَالَ فِي الْـحَجِّ
এবং হজ্জে মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়া-ঝাটি, ফিতনা-ফাসাদ যেন সে না করে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
তোমরা যে আমল করে থাকো সে বিষয় মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন।
وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى
তোমরা পাথেয় অবলম্বন করো, উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاتَّقُوْنِ يَاۤ أُولِي الْأَلْبَابِ
হে জ্ঞানী ব্যক্তিরা! তোমরা যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। উনাকে ভয় করে মুহব্বত করে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নির্দেশ মুবারক পালন করে তোমরা খালিছভাবে তাক্বওয়া অবলম্বন করো, এটা হচ্ছে উত্তম পাথেয়। এটা হচ্ছে উত্তম পাথেয় মনে রাখতে হবে।
এখন হজ্জ করতে গেল সে অশ্লিল-অশালীন কাজ যদি করে, নাফরমানীমূলক কাজ করে এবং ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি, কাটা-কাটি করে তার হজ্জে মাবরূর নছীব হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, তিনিতো জানেন বান্দা কি করে থাকে। কাজেই সে শরীয়তের খিলাফ কাজ করবে আর সে হজ্জে মাবরূরের আশা করবে সেটা হতে পারে না। সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى وَاتَّقُوْنِ يَا أُوْلِي الْأَلْبَابِ
তোমরা পাথেয় অবলম্বন করো, উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। হে জ্ঞানী ব্যক্তিরা! যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। তোমাদের জন্য কামিয়াবী রয়েছে। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)