গাউছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহেব শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ০১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ
উনার তারিখ ও নসবনামা:
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৪৭১ হিজরী সনে তৎকালীন ইরানের পবিত্র জিলান নগরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক আওলাদে রসূল হযরত সাইয়্যিদ আবু সালেহ মুসা জঙ্গীদোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি (যেহেতু তিনি যুদ্ধপ্রিয় ছিলেন সেহেতু উনাকে জঙ্গীদোস্ত বলা হয়)। উনার সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক হযরত সাইয়্যিদাহ উম্মুল খায়ের আমাতুল জাব্বার ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা। তিনি সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মাতার দিক থেকে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বংশধর।
আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যত্ববাণী:
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরামগণ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। আওলাদে রসূল এবং আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম (যিনি হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর ছাহেব ছিলেন) তিনি উনার ‘কাশফুল গুয়ূব’ নামক কিতাবে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ১৪৮ হিজরী সনের ১১ই রজব জুমুয়ার রাত্রে আমি যথারীতি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও যিকির-আযকার করে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাই, আমি আলমে নাসুত থেকে (পৃথিবী হতে) ঊর্ধ্বারোহণ করে আলমে মালাকুত এবং আলমে মালাকুত থেকে জাবারুতে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে এক বিশাল ময়দান দেখতে পেলাম। সেই ময়দানের এক পার্শ্বে মারোয়ারীদ পাথরের একটা তাঁবু টাঙানো। সেখান থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে এসে বললেন, “হে হযরত ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে ডেকেছেন। আমি সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম। দেখলাম সমস্ত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র রূহ মুবারক সেখানে উপস্থিত আছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কাতারবন্দি হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা খুব সুন্দর আসনের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসা অবস্থায় আছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে দেখামাত্র উনার নিকট বসার জন্য ইশারা করলেন। আমি বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পার্শ্বে এসে বসলেন। ইত্যাবসরে দেখা গেল দুটি রূহ মুবারক এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান জানু মুবারক ও বাম জানু মুবারক-এ বসলেন। বসার পর সারওয়ারে কায়িনাত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন: “হে হযরত ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম! আজ থেকে তিনদিন পর আপনি আমার কাছে চলে আসবেন। আমি চাই আপনি জাবারুতের অবস্থা দর্শন করে তা আলমে নাসুতের মধ্যে লিপিবদ্ধ করে আসেন। একথা বলার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন: আপনি কি জানেন এ রূহ মুবারক দুটি কার? আমার পবিত্র ডান জানু মুবারক-এ যাঁর রূহ মুবারক দেখতে পেলেন তিনি আমার থেকে পাঁচশত বৎসর পর পৃথিবীতে আগমন করবেন। তিনি হলেন সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং আমার পবিত্র বাম জানু মুবারক-এ যে রূহটি আছে তিনি হলেন- হযরত আলী আহমদ ছাবের কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এ দুই খাছ মকবুল বান্দা দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনেক খিদমত নিবেন। তারপর পার্শ্বে বসে থাকা অবস্থায় হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে বললেন: আপনাদের পবিত্র শাহদাতী শান মুবারক প্রকাশের পর আমি আমার উম্মতের কথা ভাবি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এই দুই মাহবুব বান্দা দ্বারা আমাকে সুসংবাদ দান করেন। হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি উক্ত স্বপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং সকালে উঠে ‘কাশফুল গুয়ূব’ কিতাবে তা লিপিবদ্ধ করলাম। এই ‘কাশফুল গুয়ূব’ কিতাব তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বেই লিখেছিলেন এবং সত্যিই তিনি তিনদিন পরেই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)
সম্মানিত মাক্বাম মুবারক:
একবার এক লোক সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলো, হুযূর! আপনি কি মুজাদ্দিদে যামান? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হলো, আপনি কি সুলত্বানুল আরিফীন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার বলা হলো, আপনি কি কুতুবুল আলম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার বলা হলো আপনি কি গাউছুল আ’যম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে নিশ্চুপ হয়ে গেল। তিনি বললেন, তোমার কি আর কোনো লক্বব জানা নেই? লোকটি বললো: জ্বি-না, আমার আর কিছু জানা নেই। তখন তিনি বললেন- আমার মাক্বাম বা মর্যাদা তারও উপরে, তারও উপরে, তারও উপরে। সুবহানাল্লাহ!
মোটকথা হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর একজন মানুষের পক্ষে যতো মাক্বাম অর্জন করা সম্ভব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তা দিয়েছেন। এটা সত্যিই উনার জন্য এক বিশেষ মর্যাদা মুবারক। (বলা হয়ে থাকে মহান আল্লাহ পাক উনার এমন ওলী কমই অতিবাহিত হয়েছেন, যাঁরা সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহানী তাওয়াজ্জুহ বা নিছবত হাছিল করেননি) সুবহানাল্লাহ!
গায়েবী নেদা:
গাউছূল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন অল্প ছিল তখন একবার তিনি পবিত্র আরাফা উনার দিবসে গরু নিয়ে নিজের জমি চাষ করতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় সেই গরুটি উনার দিকে ফিরে বললো, হে হযরত আব্দুল ক্বাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি! এই কাজের জন্য আপনাকে সৃষ্টি করা হয়নি এবং এই কাজের জন্য আপনাকে আদেশ করা হয়নি।
এই ঘটনায় তিনি চিন্তিত হয়ে বাড়িতে ফিরে গেলেন। এতদিন পর্যন্ত স্থানীয় মক্তবে যা কিছু শিখেছিলেন তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু শিক্ষার জন্য তিনি বাগদাদ যেতে মনস্থ করলেন। (তিনি মাতৃরেহেম শরীফ থেকে অধিকাংশ মতে আঠার পারার হাফিয হয়েই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর অতি শৈশবেই পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয করেন)। সুবহানাল্লাহ!
ইলম অর্জন:
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাগদাদ শরীফ পৌঁছেই তৎকালীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মাদরাসা নিযামিয়াতে ভর্তি হন। দুনিয়ার বিশিষ্ট উলামায়ে কিরামগণ উনারা এই মাদরাসায় তালিম দান করতেন। এই শ্রেষ্ঠ উলামায়ে কিরামগণ উনাদের নিকটেই সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বাহ, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস, তর্কবিদ্যা, ইলমে কালাম, ইলমে উরূজ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয়ে খোদা প্রদত্ত তীক্ষè মেধাশক্তি বলে মাত্র ৯ বৎসরের মধ্যেই ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি বাগদাদে শুধু কিতাবী ইলমই অর্জন করেননি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তৎকালীন বাগদাদ শরীফ উনার শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত মুবারকও ইখতিয়ার করেন। অর্থাৎ খাছভাবে হযরত আবূ সাঈদ মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত গ্রহণ করে, ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করত: সবক আদায় করে তাছাউফ বা কামালিয়াতের উচ্চ স্তরে পৌঁছেন। সুবহানাল্লাহ!
আল-আওলাদ:
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ক্রমান্বয়ে চারটি বিবাহ করেছিলেন। উনাকে বিবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে বিবাহ করেছেন। উনার মোট ৪৯ জন সন্তান-সন্ততি ছিলেন। উনাদের মধ্যে ২৭ জন পুত্র সন্তান এবং ২২ জন মেয়ে সন্তান ছিলেন। উনারা সকলেই অতি উঁচু দরজার ওলীআল্লাহ ছিলেন। উনাদের অনেক বড় বড় সম্মানিত উপাধি বা লক্বব মুবারক ছিল।
সুন্নত উনার অনুসরন:
হযরত গাউসুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রায় সারা বৎসরই রোযা থাকতেন। সাধারণ রুটি খেতেন। অনেক সময় খুব মূল্যবান কাপড় পরতেন। অনেক সময় অল্প দামের কাপড়ও পরতেন। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উঠা-বসা, চলা-ফিরা, কথা-বার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-সংসার ইত্যাদি প্রতিটি কাজই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করতেন। কেননা তিনি ছিলেন খাছ নায়েবে নবী-ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া।
কারামত মুবারক:
মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, ইচ্ছে করলে উনারা নিক্ষিপ্ত তীরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই আবার তা ফিরিয়ে আনতে পারেন। সুবহানাল্লাহ!
সেই কারণেই আমরা প্রত্যেক আল্লাহওয়ালা উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক-এ কমবেশি কারামত দেখতে পাই। তদ্রƒপ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনেও আমরা উনার অসংখ্য আশ্চর্য ধরনের কারামত দেখতে পাই। উনার দোয়ার বরকতে অনেক নেক সন্তান জন্মগ্রহণ করেছেন। যাঁরা নাকি পরবর্তীতে অনেক উঁচু পর্যায়ের ওলীআল্লাহ হয়েছেন। উনাদের মধ্যে হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক উল্লেখযোগ্য।
ফুরফুরা শরীফ উনার পীর ছাহেব হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একবার কিছু লোক সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দীর্ঘ ১২ বৎসর পর ডুবে যাওয়া একটি বরযাত্রী দলকে জিন্দা করার কারামতের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই কারামত বিশ্বাস করেন। কেননা ‘মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারামত সত্য। ’ তাই সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের কারামত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যের দলীল দ্বারাই প্রমাণিত।
প্রত্যেক চন্দ্রমাস, একজন আরব মেহমানের ছুরতে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট দেখা করত এবং মাসের মধ্যে ভালো-মন্দ কি ঘটনা ঘটবে তা উনাকে জানাতো। হিজরী ৫৬১ সনের রমযান মাসে এসে উনাকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে গেল। অর্থাৎ পরবর্তী রমযান মাস পর্যন্ত তিনি এই নশ্বর দুনিয়ায় থাকবেন না। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
‘বেহেজাতুল আসরার’ নামক কিতাবে হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৬১ হিজরী সনের পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস হতে কঠিনভাবে মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ হয়। ‘তাশারেখে আউলিয়া’ নামক কিতাবে হযরত শায়েখ আব্দুল ফতেহ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ সোমবার রাত্রে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গোসল করেন। গোসলান্তে ইশার নামায পড়ে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণের গুনাহখাতা মাফের জন্য ও তাদের উপর খাছ রহমতের জন্য দোয়া করলেন। এরপর গায়েব হতে আওয়াজ আসল, “হে প্রশান্ত নফ্স! আপনি প্রসন্ন ও সন্তুষ্টচিত্তে নিজ প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। আপনি আমার নেককার বান্দার মধ্যে শামিল হয়ে যান এবং বেহেশতে প্রবেশ করেন। ” এরপর তিনি পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে তাআজ্জাজা (অর্থ বিজয়ী হওয়া) উচ্চারণ করতে লাগলেন এবং তিনি আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ বললেন। এরপর জিহ্বা তালুর সাথে লেগে গেল। এইভাবে ৫৬১ হিজরী সনের (১১১৬ ঈসায়ী) রবীউছ ছানী মাসের ১১ তারিখে মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে
রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহান দরবার শরীফ-এ প্রত্যাবর্তন করলেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)
-আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)