সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩৫)
, ০৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০২ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
মা’রুফ তার লিখিত বইয়ের ১০ পৃষ্ঠায় সে লিখেছে যে,
এছাড়া পূর্বেই উল্লেখ করেছি এ হাদীছটি বিভিন্ন বর্ণনার দোষে দুষ্ট। নাঊযুবিল্লাহ!
জাওয়াব: তার উল্লেখিত কথাটি কাফিরদেরকে হার মানিয়েছে। কেননা একটি হাদীছ শরীফ সম্পর্কে কোন কাফিররাও এভাবে মন্তব্য করতে সাহস পায় নাই যে, হাদীছটি বিভিন্ন বর্ণনার দোষে দুষ্ট। নাঊযুবিল্লাহ! সে কোন শ্রেণীর মুরতাদ তা পাঠকগণ ভেবে দেখুন। অথচ উক্ত হাদীছ শরীফটিকে সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ ছহীহ বলে মেনে নিয়েছেন।
উক্ত বইয়ের ১০ পৃষ্ঠায় সে আরো লিখেছে যে, এছাড়া এ হাদীছটি মাওকূফ অর্থাৎ ছাহাবী পর্যন্ত সীমিত। এ ধরনের মাওকূফ হাদীছ দিয়ে মারফূ হাদীছের ব্যাপকতাকে নাকচ করা যায় না। মারফূ হাদীছ অর্থ সে সব হাদীছ, যা রাসূলে পাক থেকে প্রকাশ পেয়েছে।
জাওয়াব: মা’রুফের দাবি; এছাড়া এ হাদীছটি মাওকূফ অর্থাৎ ছাহাবী পর্যন্ত সীমিত। উক্ত মন্তব্যটির দ্বারা তার চরম জিহালতী প্রকাশ পেয়েছে। সে চরম একটা জাহিল। কেননা, হাদীছে মারফূ কাকে বলে? সেটাই সে জানে না।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ক্বওল শরীফ هٰكَذَا اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এই বাক্য মুবারক দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, উক্ত হাদীছ শরীফটি মাওকূফ নয় বরং মারফূ’।
হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আশ-শাওকানী আল ইয়ামানী আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ১২৫০ হিজরী) তিনি বলেন-
وَاعْلَمْ أَنَّ الْحُجَّةَ إنَّمَا هِيَ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ رِوَايَةِ ابْنِ عَبَّاسٍ لَا فِي اجْتِهَادِهِ الَّذِي فَهِمَ عَنْهُ النَّاسُ وَالْمُشَارُ إلَيْهِ بِقَوْلِهٖ:
অর্থ: জেনে রাখো, নিশ্চয়ই হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফটি হাদীছে মারফূ এবং গ্রহণযোগ্য দলীল। এটা উনার কোন ইজতিহাদী দলীল নয়, যা কিছু লোক মনে করেছে এবং উনার বর্ণনাকে ঐ দিকে ইঙ্গিত করতে চায়। (নাইলুল আওতার ৪/২৩০)
উক্ত বইয়ের ১১ পৃষ্ঠায় সে লিখেছে যে, আর এ হাদীছ তো কোন নির্দিষ্ট দিকের অধিবাসীকে সীমাবদ্ধ বা খাছ করে না বরং এটা মুসলমান মাত্রই যে কোন লোককেই সম্বোধন করে।
জবাব; এইরূপ কথা সে উক্ত কিতাবের ১০ পৃষ্ঠায়ও বলেছে যে, আগেই বলা হয়েছে- صوموا لرئيته الخ হাদীছটি আম ও মারফূ।
আসলে তার মুর্খতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে কারণ صوموا لرئيته الخ হাদীছ শরীফটি কোন ক্রমেই হাদীছে কুরাইব উনার মোকাবেলায় দাঁড় করানোর সুযোগ নাই।
কেননা, صوموا لرئيته الخ উক্ত হাদীছ শরীফটি দূরবর্তী ও নিকটবর্তী এই দুই ধরনের শহরের ক্ষেত্রে আম বা শর্তহীন। আর হাদীছে কুরাইবটি শুধুমাত্র দূরবর্তী অঞ্চলের জন্য খাছ। যা আমরা ইতিপূর্বে অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছি।
সুতরাং صوموا لرئيته الخ হাদীছ শরীফটিকে হাদীছে কুরাইব উনার মোকাবেলায় দাঁড় করানোটা তার রীতিমত অজ্ঞতার শামিল।
তাছাড়াও صوموا لرئيته الخ এ ধরনের আম বাক্য দ্বারা কখনো সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা পালন করা বুঝানো হয়নি। তাও আমরা ইতিপূর্বে অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছি। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)