মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বাই‘আতে আক্বাবাহ্ শরীফ এবং উনার শর্ত মুবারকসমূহ (৭)
, ২২ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
بَايَعْنَاهُ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي النَّشَاطِ وَالْكَسَلِ وَعَلَى النَّفَقَةِ فِي الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَعَلَى الْأَمْرِ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيِ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأَنْ نَقُولَ فِي اللَّهِ لَا تَأْخُذُنَا فِي اللَّهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ وَعَلَى أَنْ نَنْصُرَهُ إِذَا قَدِمَ عَلَيْنَا يَثْرِبَ فَنَمْنَعَهُ مَا نَمْنَعُ مِنْهُ أَنْفُسَنَا وَأَزْوَاجَنَا وَأَهْلَنَا وَلَنَا الْجَنَّةُ وَمَنْ وَفَّى وَفَّى اللَّهُ لَهُ الْجَنَّةَ بِمَا بَايَعَ عَلَيْهِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ نَكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَى نَفْسِهِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আমরা এই শর্তে বাইয়াত গ্রহণ করেছি যে, (১) ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক সবসময় আমার উনার প্রত্যেকটি আদেশ-নিষেধ অবশ্যই শুনবেন এবং অবশ্যই মানবেন, (২) স্বচ্ছল হই বা অস্বচ্ছল হই, উনি যেখানে খরচ করতে বলেন, আমরা অবশ্যই সেখানে ধন-সম্পদ খরচ করবো, (৩) মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য প্রত্যেক সৎকাজে আদেশ করবো এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবো। মহান আল্লাহ পাক উনার (এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের) রেযামন্দি-সন্তুষ্টি হাছিলে লক্ষ্যে এ কাজগুলি করতে গিয়ে কোনো নিন্দাকারীর নিন্দাকে আমরা পরওয়া করবো না। (৪) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখবেন, আমরা আমাদের নিজেদেরকে এবং আমাদের আহলিয়া ও সন্তানদেরকে যেভাবে হিফাযত করি করি, তার চেয়েও উত্তমভাবে উনাকে (এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে) সম্মানিত নিরাপত্তা মুবারক দিবো, উনাদের সম্মানিত গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবো। এর বিনিময়ে আমাদের জন্য জান্নাত রয়েছেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যাঁরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সম্মানিত জান্নাত মুবারক দানের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক দান করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, নিশ্চয়ই তারা তাদের নফসের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মুসনাদে শাশী ৩/১৭৩)
সেটাই যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি জান্নাতের বিনময়ে মু’মিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
সুতরাং বাইয়াত হওয়া মানে বিক্রি হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ নিজের জান-মাল সমস্ত কিছু বিক্রি করে দেয়া জান্নাতের বিনময়ে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহব্বত-মারিফত, নিসবত-কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে। সুবহানাল্লাহ! সে বিষয়টিই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বাই‘আতে আক্বাবাহ্ শরীফ উনার মধ্যে। সুবহানাল্লাহ! এখানে যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছে, সংক্ষেপে সেগুলো হলো-
১. ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক সবসময় প্রত্যেকটি আদেশ-নিষেধ অবশ্যই শুনতে হবে এবং অবশ্যই মানতে হবে।
২. স্বচ্ছল বা অস্বচ্ছল সর্বাস্থায় যেখানে খরচ করতে বলা হবে, অবশ্যই সেখানে ধন-সম্পদ খরচ করতে হবে।
৩. রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে প্রত্যেক সৎকাজে আদেশ করতে হবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করতে হবে।
৪. পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতি, সমস্ত মানুষ, অর্থ-সম্পদ এবং নিজের জীবনের চেয়ে বেশি মুহব্বত করতে হবে এবং সমস্ত কিছু কুরবান করে দিয়ে হলেও যথাযথ গোলামীর আনজাম মুবারক দিতে হবে।
৫. নিজেদেরকে এবং নিজেদের আহলিয়া ও সন্তানদেরকে যেভাবে হিফাযত করা হয়, তার চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ উত্তমভাবে সম্মানিত নিরাপত্তা মুবারক দিতে হবে, সম্মানিত গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতে হবে।
৬. যথাযথ গোলামীর আনজাম দিতে গিয়ে সারা পৃথিবীও যদি বিরুদ্ধে চলে যায় এবং নিজের জান-মাল, আল-আওলাদ এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও যদি কুরবান হয়ে যায়, তারপরে এক চুল পরিমাণ পিছু টান দেয়া যাবে না। এবং
৭. এ সমস্ত কাজ মুবারকগুলো করতে যেয়ে কোনো নিন্দাকারীর নিন্দাকে কখনও পরওয়া করা যাবে না।
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “এই শর্ত-শারায়েতগুলো ক্বিয়ামত পর্যন্ত চলবে। কেননা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
اَلشَّيْخُ لِقَوْمِهٖ كَالنَّبِـىِّ فِـىْ اُمَّتِهٖ
অর্থ: “উম্মত মাঝে হযরত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেমন, মুরীদ মাঝে শায়েখ আলাইহিস সালাম তিনি তেমন।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ, জামিউল জাওয়ামি’, আল জামিউছ ছগীর ইত্যাদি)
কাজেই, একজন মুরীদের জন্য উপরোক্ত শর্তগুলো মেনে চলা ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ! যারা মুরীদ হবে তাদেরকে অবশ্যই বীনা চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বালে উপরোক্ত শর্তগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। তবেই তারা হাক্বীক্বী ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক লাভ করতে পারবে, হাক্বীক্বী ইছলাহ হাছিল করতে পারবে এবং হাক্বীক্বী মুহব্বত-মারিফত, নিসবত-কুরবত ও রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে পারবে, ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ! অন্যথায় কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।”
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি আমাদেরকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে উপরোক্ত শর্তগুলো যথাযথভাবে মেনে উনার হাক্বীক্বী গোলামী করার মাধ্যম দিয়ে হাক্বীক্বী মুহব্বত-মারিফত, নিসবত-কুরবত ও রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার, ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ্ আলাইহিস সালাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৮)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (২০)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৭)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৯)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)