ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
, ১৮ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
দ্বিতীয় পাঠ; ইস্তাম্বুলের পথে:
হিজরী ১১২২ সালে (১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে) উপনিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে মিশর, ইরাক, হিজাজ এবং ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছিল, গুপ্তচর বৃত্তি এবং প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য সংগ্রহের জন্যে, যাতে মুসলমানদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করা যায়। একই সময়ে এবং একই উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয় আরো ৯ জন উদ্যমী এবং সাহসী লোককে নিয়োগ করে। অর্থ, তথ্য এবং মানচিত্র যা আমাদের প্রয়োজন ছিল তা ছাড়াও অতিরিক্ত হিসেবে আমাদের দেয়া হয়েছিল, সরকারী আমলা, আলিম-উলামা, এবং গোত্র প্রধানদের নামের তালিকা। আমার স্মৃতি থেকে কখনই মুছে যাবে না যে, যখন আমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে বিদায় নিতে যাই, তিনি বলেছিলেন- আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তোমার সাফল্যের উপর। সুতরাং তোমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা উচিত।
আমি সমুদ্রপথে ইসলামী খিলাফতের প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুলের পথে যাত্রা শুরু করি। আমার প্রাথমিক দায়িত্ব ছাড়াও আমাকে ভালভাবে সেখানকার মুসলমানদের স্থানীয় তুর্কী ভাষা খুব ভালভাবে শিখতে হয়েছিল। ইতিমধ্যে আমি লন্ডনে বেশ পরিমাণ তুর্কী ভাষা, কুরআনের ভাষা আরবী এবং ইরানিয়ানদের ভাষা ফার্সী শিখে ফেলেছিলাম। যদিও কোন ভাষা শেখা আর স্থানীয় লোকজনদের মত করে কথা বলা, এদু’য়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। কয়েক বছরে ভাষাটা শিখতে পারলেও, বলাটা শিখতে হয়েছিল খুব সূক্ষ্মভাবে, যাতে লোকজন আমাকে সন্দেহ করতে না পারে।
আমি অবশ্য ভীত ছিলাম না যে তারা আমাকে সন্দেহ করবে। কারণ মুসলমানরা খুব সহনশীল, উদারমনের, পরোপকারী যা তারা তাদের নবী ও রসূল হযরত মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শিখেছে। তারা আমাদের মত সন্দেহ প্রবণ নয়।
সর্বোপরি, সে সময় গুপ্তচরকে গ্রেফতার করার মত তুরস্ক সরকারের কোন সংস্থা ছিলো না। দীর্ঘ ক্লান্তিকর সমুদ্রযাত্রা শেষে আমি ইস্তাম্বুল গিয়ে পৌঁছি। আমি আমার নাম বললাম ‘মুহম্মদ’ এবং মুসলমানদের ইবাদত গৃহ মসজিদে আসা যাওয়া শুরু করলাম। মুসলমানদের শৃঙ্খলাবোধ, পরিচ্ছন্নতা এবং আনুগত্য দেখে আমি মুগ্ধ। মুহূর্তের জন্য নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন এই নিরীহ লোকদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি? তাই করতে কি আমাদের প্রভু মাসিহ আমাদের উপদেশ দিয়েছিলেন? পর মুহূর্তেই ভাবি, একি শয়তানী চিন্তায় মগ্ন হলাম? এবং আরো ভালভাবে নিজের কর্তব্য পালন করার জন্য সিন্ধান্ত নিলাম।
ইস্তাম্বুলে ‘আহমদ আফেন্দি’ নামক একজন বুযূর্গ লোকের সাথে আমার পরিচয় হয়। রুচিশীল আচরণ, খোলামনের ব্যবহার, আধ্যাত্মিক নির্মলতা আর পরোপকারী মনোভাব ইত্যাদির বিচারে আমাদের ধর্মের (খ্রিষ্টান ধর্মের) কোন ধার্মিক ব্যক্তিকেই তার সমকক্ষ দেখিনি। হযরত মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলার জন্যে তিনি দিন রাত পরিশ্রম করতেন।
সে বুযূর্গ ব্যক্তির মতে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদিক থেকে উচ্চতম ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব। যখনই তিনি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক উচ্চারণ করতেন তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে পড়তো। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছিলাম এ কারণে যে, তিনি আমাকে প্রশ্ন করেননি আমি কে এবং কোথা থেকে এসেছি।
তিনি আমাকে ‘মুহম্মদ আফেন্দি’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন এবং স্নেহ মমতায় সমাদর করতেন। আমি একজন মেহমান, ইস্তাম্বুলে এসেছি কাজ করতে এবং খলিফার ছায়াতলে বসবাস করতে, এমনি বিবেচনায় আহমদ আফেন্দী আমাকে দেখতেন। সত্যি বলতে কি এ ছলচাতুরির মধ্যেই আমি ইস্তাম্বুলে অবস্থান করতে লাগলাম।
একদিন আমি আহমদ আফেন্দিকে বললাম ‘আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই, আমার কোন ভাই-বোনও নেই এবং পৈত্রিক সূত্রে কোন জমি-জমাও পাইনি। আমি এসেছি ইসলামের এ প্রাণকেন্দ্রে কাজ করে বেঁচে থাকার জন্য এবং কুরআন-সুন্নাহ শেখার জন্যে অর্থাৎ ইহকাল এবং পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য। আমার এ কথায় তিনি অত্যন্ত প্রফুল্ল হলেন এবং বললেন, “তিনটি কারণে তুমি শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। (তিনি যা বলেছিলেন তা হুবহু বর্ণনা করছি। )
এক. তুমি একজন মুসলমান এবং সব মুসলমান ভাই ভাই।
দুই. তুমি একজন মেহমান। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মেহমানদের প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শন করো। ”
তিন. তুমি কাজ করতে চাও; হাদীছ শরীফে আছে, যে কাজ করে, সে আল্লাহ পাকের নিকট প্রিয়।
তার কথাগুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করলো। আমি মনে মনে বললাম, খ্রিষ্টান ধর্মেও কি এমন উজ্জ্বল সত্যের সন্ধান আছে? লজ্জার বিষয় সেখানে তা নেই। ” যা আমাকে অবাক করে তা হচ্ছে, ইসলামের মত একটি মহান ধর্ম, এমন কিছু আত্মঅহংকারী লোকের হাতে পরে অবহেলিত এবং অধঃপতিত হচ্ছে, যারা জীবন সম্পর্কে অসচেতন।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)