বাংলাদেশে মুরগির বাজারও কি এবার কারসাজির খপ্পরে?
, ০৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আজকের পত্রিকা
ডিমের পর এবার মুরগির বাচ্চা নিয়েও ব্যবসায়িক কারসাজির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। খামারিদের অভিযোগ কোম্পানিগুলো এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম ধাপে ধাপে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে অচিরেই দেশের ব্রয়লার মুরগি আর ডিমের দাম আবারও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলো আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কথা বললেও একে কোম্পানিগুলোর পরিকল্পিত সিন্ডিকেট কারসাজি বলে দাবি করছেন খামারিরা।
প্যারাগন হ্যাচারি লিমিটেডের পক্ষ থেকে প্রান্তিক খামারিদের পাঠানো ক্ষুদে-বার্তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২০শে আগস্ট প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার বিক্রয়মূল্য ছিল গ্রেড ভেদে ২৭ থেকে ৩৫ টাকা।
লেয়ার বাচ্চার দাম ধরা হয়েছিল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। কক বাচ্চার দাম ছিল ১৩ থেকে ১৪ টাকা।প্যারাগন কালার ও সোনালি মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৪৫ ও ২৩ টাকায়।
অথচ ১৮ই সেপ্টেম্বর প্যারাগনের এক দিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চার বিক্রয়মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ থেকে ৫২ টাকায়। লেয়ার বাচ্চা ও কক বাচ্চা বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৬৬ ও ২২ টাকা এবং কালার মুরগির বাচ্চার দাম ধরা হয়েছে ৫৬ টাকা।
মুরগির বাচ্চার দাম বাড়লেও খামার পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম আগের মতোই আছে। এতে লাভ তো দূরের কথা বরং লোকসানের আশঙ্কায় আছেন প্রান্তিক খামারিরা।
নরসিংদীর খামারি অলি উল্লাহ বলেন, “গত মাসে মুরগির বাচ্চার কিনেছি ৩৬ টাকায়। তখন বাজারে রেডি ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা। এখন বাচ্চার দাম ৫২ টাকা হয়ে গিয়েছে। বাড়তি দাম দিয়ে বাচ্চা কিনলেও বাজারে মুরগির দাম আগের মতোই। এভাবে লাভ করার তো অবস্থা নাই। খামারই চালাতে পারবো না।”
সাধারণত একটি ব্রয়লার বাচ্চা মুরগির পরিণত হতে বা দেড় কেজির মতো ওজনে আসতে ৩০ থেকে ৩২ দিনের মতো সময় লাগে। তাতে মুরগির বাচ্চা, ফিডসহ যাবতীয় খরচ মিলিয়ে ১৫৫ টাকা ছাড়িয়ে যায় বলে খামারিরা জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে এই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দিনে সাড়ে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার।
তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৪ লাখ ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা এবং দুই লাখ লেয়ার বাচ্চা উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে হয় মোট ২৬ লাখ।
“সে হিসাবে একটি বাচ্চায় যদি গড়ে ২৫ টাকার বেশি নিলে দেখা যাচ্ছে, কর্পোরেট গ্রুপগুলো সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে” তিনি জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশের বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্রিডার্স এসোসিয়েশন।
প্যারাগন কোম্পানির বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা এস এম হেলালুদ্দিন রাজু জানান, ব্রিডার্স এসোসিয়েশন বাজার পরিস্থিতি, বাজারে মুরগির বাচ্চার চাহিদা আর যোগান, উৎপাদন খরচ সবকিছু বিবেচনা করে বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু গত বছর থেকে চলতি বছরের শুরুতে চাহিদা অনেক কমে যাওয়ায় মুরগির বাচ্চার দামে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
রাজু বলেন, “গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজারে মুরগির বাচ্চার চাহিদা না থাকায় এই ব্রিডার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছিল। একটা বাচ্চা উৎপাদনে খরচ আছে ৩৫ টাকা।”
“কিন্তু বাজারে চাহিদা না থাকায় ৭ থেকে ১৫ টাকায় বাচ্চা দিতে হয়েছে। তখন কোম্পানিকে প্রতিটা বাচ্চা বাবদ ২০ থেকে ২৮ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আমরা এবার সেই লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি”, তিনি বলেন।
এই কৃষি বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী, নির্ধারিত হারের থেকে বেশি লাভে এসব পণ্য বিক্রি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হবে। এজন্য উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ১৫ শতাংশ ও খুচরায় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
কৃষি উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বা সরকার-নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে কৃষি বিপণন আইনে।
দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে দ্বিগুণ।
বিধিমালায় উৎপাদকের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লাভ করার কথা থাকলেও মুরগির বাচ্চার ক্ষেত্রে কর্পোরেট গ্রুপগুলো প্রায় একশ শতাংশ লাভ করছে বলে অভিযোগ করেছেন খামারিরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সুমন হাওলাদার বলেন, “একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের সর্বোচ্চ খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু তারা দাম রাখছে প্রায় দ্বিগুণ। শতভাগ লাভ। যে লাভের কিছু অংশ প্রান্তিক খামারির করার কথা ছিল, সেই মুনাফা কোম্পানিগুলো আগেই তুলে নিচ্ছে।”
এ নিয়ে হাওলাদার বলেন, “সরকার শুধু খুচরা বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যা তো উৎপাদন পর্যায়ে, সেখানে তো সরকার কিছু করছে না।”
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সঞ্চয় বাড়ছে কোটিপতিদের
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কৃষি মার্কেটে আগুন : পুকুর ধ্বংসের ভয়ংকর ফল
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বড়রা লুট করলেও কৃষকরা ফেরত দিচ্ছেন
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘১৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করে এখন কিনছি ৪০ টাকায়’
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আমাদের সম্মানিত ছোট চাচা হুজুর কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আজ ১১-৩০মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না-লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
১০ আগস্ট, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)