মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَاَيْتُ حَضْرَتْ امام الاول كرم الله وجهه عَلِيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ مَا هٰذَا فَقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَاِنْى اَنْ اُضَحِّى عَنْهُ فَانَا اُضَحِّى عَنْهُ.

অর্থ: “হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দু’টি দুম্বা কুরবানী মুবরাক করতে দেখলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? (দু’টি কেন?) জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করে গিয়েছেন যে, আমি যেন উনার পক্ষ হতে পবিত্র কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ থেকে (একটি) পবিত্র কুরবানী করছি। ” (আবূ দাঊদ শরীফ ২য় খ- ২৯ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খ- ১৮০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১২৮ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ হতে এটা স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী করার জন্য ওছিয়ত মুবারক করেছেন।

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, সাধারণ একজন উম্মত যদি তার সন্তানদেরকে ওছিয়ত করেন তাহলে সন্তানের জন্য তা মান্য করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায়। সন্তান যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সে ওছিয়ত পূর্ণ না করে তাহলে সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।

একজন পিতার ওছিয়ত পালন না করলে সন্তান যদি গুনাহগার হয় তাহলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওছিয়ত মুবারক পালন না করলে তা কত ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই যিনি হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসমআনিত রসূল, যিনি সমস্ত বাবারও বাবা! মহান আল্লাহ পাক উনার পরে যিনি মহাসম্মানিত মর্যাদা বা মাক্বাম মুবারক উনার অধিকারী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহাসম্মানিত ওছিয়ত মুবারক করেছেন, উক্ত ওছিয়ত মুবারক পালনের গুরুত্ব কত বেশি এবং তা পালন না করলে উম্মতের কত কঠিন ও বড় গুনাহ হবে তা উম্মত মাত্রই সকলকে উপলব্ধি করে ফরয হিসেবে উনার সম্মানিত নাম মুবারকে পবিত্র কুরবানী করতে হবে। কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْـهَوٰى. اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُوحٰى.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা মুবারক বলেন না, কোন কাজ মুবারক করেন না। ” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩-৪)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত মহাসম্মানিত ওছিয়ত মুবারক মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই।

এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয়- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ওছিয়ত মুবারক করলেন। আর ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন-

ক. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

খ. তিনি হযরত খুলাফায়ে রশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

গ. তিনি আশারায়ে মুবাশশরা উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. তিনি সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

ঙ. তিনি ইমামুল আউয়াল মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একসাথে অনেক কিছু।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উনি হচ্ছেন ‘বাবুল ইলম’। (দাইলামী শরীফ : ১০৮)

حَضْرَتْ امام الاول كرم الله وجهه عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنِّـىْ وَاَنَا مِنْ حَضْرَتْ امام الاول كرم الله وجهه عَلَيْهِ السَّلَامُ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আমার থেকে এবং আমি উনার থেকে। ” সুবহানাল্লাহ! (আল ফিরদাউস শরীফ, ১:৪৩৮)



মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ زَيْدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِىٌّ مَوْلَاهُ.

অর্থ: “হযরত যায়েদ বিন আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি যাঁর মাওলা, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনিও উনার মাওলা। ”

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে মহাসম্মানিত ওছিয়ত মুবারক করা হলো ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে। মহাসম্মানিত ওছিয়ত মুবারক যারা পালন করবেন উনারা কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!



-আহমদ হুসাইন