দেশে কয়েক বছরে ধনী-গরীব বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে পূজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় জাতীয় সম্পদ কুক্ষীগত হচ্ছে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে ধনী গরীব বৈষম্য দুরীকরণে যাকাত ব্যবস্থাই একমাত্র সমাধান।
, ০৮ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সম্পাদকীয়
দেশে ধনী-গরীবের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ধনীরা হচ্ছে আরো ধনী। আর গরীবরা হচ্ছে আরো গরীব। গরীব থেকে উত্তোরণের গতি কমে গেছে। সরকারের মধ্যে থেকেও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিষয়টি স্বীকার করেছে। আয় ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই নিষ্পেষণের ফলে খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ভাঙছে পরিবার ব্যবস্থা। বন্ধ হচ্ছে সন্তানের পড়ালেখা। বাড়ছে অপরাধ, পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা, ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা, পারিবারিক কলহে ভাঙছে সংসার।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপে দেখা গেছে, দেশের মোট ৩৮.১৬% আয় করে উপরের দিকে থাকা ১০ শতাংশ ধনী। ৬ বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৩৫.৮৪%। গরীবদের আয় বৃদ্ধির সুযোগ কমে গেছে আর বেড়েছে ধনীদের। দেশের সব মানুষের যত আয় এর মাত্র ১.০১% আয় করে ১০% মানুষ। ৬ বছর আগেও মোট আয়ের ২% এই শ্রেণির মানুষের দখলে ছিল। বিবিএস জরিপে আরো বলা হয়েছে, দেশের মোট আয়ের দুই তৃতীয়াংশের মালিক উপরের দিকে থাকা ৩০ শতাংশ মানুষ। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদেও ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় দারিদ্র্যের হার ৭০.৮%। অর্থাৎ কুড়িগ্রামে প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনের বেশি গরীব। জরিপ অনুযায়ী সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা উত্তরবঙ্গ। সবচেয়ে বেশি গরীব মানুষ থাকে রংপুর বিভাগে। দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি এমন ১০টি জেলার মধ্যে ৫টিই রংপুর বিভাগে।
অন্যদিকে, আয় বৈষম্যের পাশাপাশি দেশে জাতীয় সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রেও তীব্র বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। এক জরীপে দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ জাতীয় সম্পদ মাত্র ২ লাখ তথা এক শতাংশেরও কম লোকের দখলে রয়েছে। যে ২ লাখ লোক দেশের ৯৫ ভাগ সম্পদের মালিক তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ শত থেকে সহগ্রাধিক কোটি টাকার মালিক। অবশিষ্ট ৫ ভাগ সম্পদ রয়েছে ২৯ কোটি ৯৮ লাখ লোকের আয়ত্তে। এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে গেলেও জাতীয় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে অসাম্য বা বৈষম্য কত প্রবল!
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশ। বাংলাদেশের সরকার নিজেদের মুসলমান দাবী করে। আর স্বাধীনতাত্তোর সব সরকারই আয়বৈষম্য ও সম্পদ বন্টন বৈষম্যের প্রতিকারস্বরূপ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা বলে আসছে। কিন্তু অতীতকাল থেকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারসহ অতীত হয়ে যাওয়া কোনো সরকারই দেশের এই ধনী-গরীব বৈষম্য রূখতে পারেনি। আর রূখতে পারাটাও স্বাভাবিক নয়। কারণ, দেশের ধনী গরীব বৈষম্যের একমাত্র সমাধান হচ্ছে সম্মানিত যাকাত ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছে “নিশ্চয়ই ধনীদের সম্পদে গরীবদের হক্ব রয়েছে”। আর এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বাস্তবিক রূপ হচ্ছে পবিত্র যাকাত। পবিত্র যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে গরীবদের সম্পদ থেকে গরীবদের ন্যায্য হক্ব আদায়ের মাধ্যমে গরীবরা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠে। বর্তমান সরকার রাজস্ব ও কর আদায়ের মাধ্যমে দেশকে আর্থিকভাবে উন্নত করার কার্যক্রম গ্রহণ করে।
এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে ৪৬ লাখ করদাতা রয়েছে, যারা দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। এমন সংখ্যা চরম অবিশ্বাস্য। শুধু ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, ডিওএইচএস, নিকুঞ্জসহ অভিজাত এলাকায় ৫০ হাজারের বেশি প্লট রয়েছে। এর প্রতিটি প্লটের বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে দশ কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাড়ি বা হোল্ডিং রয়েছে। যেসব বাড়ির প্রতিটির বর্তমান বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার কম নয়।
এরদ্বারা বোঝা যাচ্ছে, কর ফাঁকি দিচ্ছে অধিকাংশ করযোগ্যরাই। সেইসাথে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। অর্থাৎ কর এবং রাজস্ব দেয়ার মধ্যেও অনিয়ম ঢুকে গিয়েছে। যার কারণে কর ও রাজস্ব আদায়ের সুফল দেশের সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। ধনী ধনীই থেকে যাচ্ছে অপরদিকে গরীব আরো অতিগরীব হচ্ছে।
অথচ এই সবের বিপরীতে যদি দেশে যাকাত ব্যবস্থা কায়েম করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে, ধনীদের মধ্যে কর-ফাঁকি ইত্যাদির প্রবণতা থাকবে না। কারণ বর্তমানে সরকারি ট্যাক্স কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। যার কারণে ধনীরা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। কিন্তু সম্মানিত যাকাত বছরে একবার দিতে হয় এবং তার যাকাতযোগ্য সম্পদের মাত্র আড়াই ভাগ। এতে করে দেখা যাবে ধনীরা যাকাত দিতে প্রবলভাবে উৎসাহিত হবে এবং কর-রাজস্বের চাইতেও অনেক বেশি অর্থ গরীবের হক্ব হিসেবে সংগ্রহ করা যাবে।
যাকাত ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের গবেষণায়, বাংলাদেশে যাকাতযোগ্য অর্থের পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকা। আর এতে আড়াই শতাংশ হারে হিসেব করলে যাকাত আসে ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর ফসলি জমির মালিক এক হাজার কোটি, মহিলাদের গচ্ছিত স্বর্ণ অলংকারে ১০০ কোটি, ব্যাংকিং খাতে ১ হাজার ২৪০ কোটি, শিল্প কারখানা থেকে এক হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায় করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটিপতি রয়েছে। যাদের থেকেও বিপুল পরিমাণ যাকাত আদায় সম্ভব।
তবে দৈনিক আল ইহসান শরীফের অনুসন্ধানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির হিসেবে বর্তমানে পবিত্র যাকাতযোগ্য অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ কোটি টাকা। আড়াই শতাংশহারে এ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের বার্ষিক মোট উন্নয়ন কর্মসূচীর ১০০ শতাংশের বেশী। অর্থাৎ পবিত্র যাকাত আদায়ের মাধ্যমেই দেশের ধনী-গরীব বৈষম্য দুর করে সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা সম্ভব। কাজেই সরকারের উচিত আয়করভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিহার করে সম্মানিত যাকাত ব্যবস্থা সারাদেশে পূর্নাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা এবং এই বিপুল পরিমাণ যাকাত সম্পদ হক্ব জায়গায় প্রদান করা।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
শিল্প-কলকারখানায় এক্ষুনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ইনশাআল্লাহ!
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
৮২ ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢাকা- তপ্তনগরী ‘ঢাকার’ উত্তাপ কমাতে হলে ঢাকার সুযোগ-সুবিধা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। যথাযথ বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দ্রব্যমূল্যের আগুনে ঝলসে যাচ্ছে মানুষ। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে জনসাধারণ।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প শুধুমাত্র ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ দিয়েই পূরণ হবে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে রফতানির সম্ভাবনাও সৌর-সম্ভাবনাকে বিকশিত করলে বাংলাদেশ হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসমৃদ্ধ দেশ।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম, মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার মহিমান্বিত, মহাপবিত্র ১২ তারিখ উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত পবিত্র ১২ই রবীউছ ছানী শরীফ আজ। সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার শান মান মুবারক অনুভব করা, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক জানা, দয়া-ইহসান মুবারক উপলব্ধি করা সর্বোপরি নেক ছায়াতলে উপনীত হওয়া বর্তমান যামানায় সবার জন্য ফরয।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বন্যা পরবর্তী পূণর্বাসন বন্যায় দুর্ভোগের চেয়েও কঠিন বন্যা দুর্গতদের এ কঠিন লড়াইয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আসন্ন অর্থনৈতিক মহা বিপর্যয় ঠেকাতে গার্মেন্টস অস্থিরতা এক্ষনই বন্ধ করতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
খাবারে ঢুকছে প্লাস্টিক কণা, বিপর্যয়ের মুখে জনস্বাস্থ্য। স্থায়ী বিকলাঙ্গতা ও স্বাস্থ্যহানির শঙ্কায় দেশের জনগণ। বিষয়টি ভয়াবহ- সত্বর গুরুত্বের সাথে নজর দিন।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবারে ঢুকছে প্লাস্টিক কণা, বিপর্যয়ের মুখে জনস্বাস্থ্য। স্থায়ী বিকলাঙ্গতা ও স্বাস্থ্যহানির শঙ্কায় দেশের জনগণ। বিষয়টি ভয়াবহ- সত্বর গুরুত্বের সাথে নজর দিন।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবারে ঢুকছে প্লাস্টিক কণা, বিপর্যয়ের মুখে জনস্বাস্থ্য। স্থায়ী বিকলাঙ্গতা ও স্বাস্থ্যহানির শঙ্কায় দেশের জনগণ। বিষয়টি ভয়াবহ- সত্বর গুরুত্বের সাথে নজর দিন।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বাংলাদেশে মিডিয়াগুলো ইহুদীদের অদৃশ্য ইশারায় দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। বাংলাদেশের মুসলমানদের উচিত- দেশের সব মিডিয়া বর্জন করে আলাদাভাবে সম্মানিত ইসলামী মিডিয়া গঠন করা।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়লেও সুবিধার বাইরে ৭১ ভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দারিদ্রের যাঁতাকল থেকে জনগণকে বের করে না আনলে দেশ ধীরে ধীরে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)