ছাহিবুছ ছিদ্ক্ব, ছাহিবু লাওলাক্ব, ছাহিবুল আয়াত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বপ্ন মুবারক
, ১২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১১ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُولَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক স্বপ্নকে বাস্তবে প্রতিফলিত করেছেন। (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)
আলোচ্য প্রবন্ধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দেখা একটি স্বপ্ন মুবারক আলোকপাত করা হলো। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্ন মুবারক কত গুরুত্বপূর্ণ, কত তাৎপর্যপূর্ণ ও হুকুম-আহ্কাম সম্বলিত।
বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়শ: ফজর নামায আদায় করে আমাদের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করতেন, “আজ রাতে আপনাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছেন কি?” রাবী (বর্ণনাকারী) বলেন, যদি কেউ স্বপ্ন দেখতেন তাহলে তিনি তা বর্ণনা করতেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুতাবিক তা’বীর করতেন। যথারীতি একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের কেউ আজ রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছেন কি?” আমরা (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ) বললাম, দেখিনি। তিনি বললেন, ‘কিন্তু আমি দেখেছি, আজ রাতে আমার কাছে দু’জন লোক আসলেন। উনারা আমাকে এক পবিত্র স্থানে নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে। আর অপর ব্যক্তি লোহার সাঁড়াশী হাতে দাঁড়ানো। সেই ব্যক্তি সাঁড়াশী দিয়ে উক্ত বসা লোকের গালের ভিতর প্রবেশ করিয়ে গর্দান পর্যন্ত ফেঁড়ে ফেলছে। ইত্যবসরে প্রথম গালটি ভাল হয়ে যায়। আবার সে পূর্বের মত করতে থাকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম এটা কি? তারা উভয়ে বললো, সামনে চলুন। আমরা সামনে গেলাম। অতঃপর এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছলাম, যে ঘাড়ের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। আর এক ব্যক্তি একটি ভারী পাথর নিয়ে তার মাথার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথরের আঘাতে শায়িত ব্যক্তির মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করছে। যখন পাথরটি নিক্ষেপ করে পাথরটি গড়াতে গড়াতে দূরে চলে যায়। সে ব্যক্তি যখন পাথরটি পুনরায় তুলে আনতে যায়, ফিরে আসতে আসতে তার ছিন্ন মাথা ঠিক হয়ে যায়। পুনরায় সে এটা দ্বারা আঘাত করতে থাকে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বললো, সামনে চলুন। আমরা সামনে চললাম। অবশেষে একটি তন্দুরের মত গর্তের নিকট পৌঁছলাম। যার উপরের অংশ ছিলো সংকীর্ণ। নিচের অংশ ছিলো প্রশস্ত। এর তলদেশে আগুন প্রজ্বলিত ছিলো। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরে উঠে তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উঠে আসে এবং গর্ত হতে বের হওয়ার উপক্রম হয়। আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা স্তিমিত হয় তখন তারাও ভিতরে চলে যায়। এর মধ্যে রয়েছে কিছু বিবস্ত্র নারী-পুরুষ। আমি বললাম, এটা কি? তারা বললো, সামনে চলুন। আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি রক্তের নহরের নিকট এসে পৌঁছলাম। এসে দেখি নহরের মাঝে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। আর তীরে দাঁড়ানো আছে একজন। তার সামনে রয়েছে পাথরের খন্ড। নহরের লোকটি যখনই তীরে উঠতে চায় তখনই তীরে দাঁড়ানো ব্যক্তি তাকে পাথর নিক্ষেপে পূর্বের স্থানে পৌঁছিয়ে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? সঙ্গীদ্বয় বললেন, সামনে চলুন। আমরা সামনে চলতে চলতে এক সবুজ শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম। বাগানে ছিলো এক বিরাট গাছ। সে গাছের গোড়ায় বসা রয়েছেন একজন বৃদ্ধ এবং অনেক বালক। আর তার পাশে আর এক ব্যক্তিকে দেখলাম যার কাছে আগুন রয়েছে। আর তিনি তা প্রজ্বলিত করছেন। এরপর তারা আমাকে সেই বৃক্ষটির উপর চড়ালো। সেখানে বৃক্ষরাজির মাঝে এমন একটি ঘরে আমাকে নিয়ে গেল, এমন সুন্দর মনোরম ঘর আমি কখনও দেখিনি। এর মধ্যে ছিলো কতিপয় বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও বালক। এরপর উনারা আমাকে সে ঘর হতে বের করে আরো উপরে চড়ালো এবং এমন এক ঘরে প্রবেশ করালো যা প্রথমটি হতে সমধিক উত্তম ও সুন্দর। এতেও রয়েছেন কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক।
অতঃপর আমি সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, আপনারা আজ আমাকে অনেক কিছু ঘুরিয়ে দেখালেন। এখন বলুন এর রহস্য কি? উনারা বললেন, হ্যাঁ, (আমরা তা জানাবো), ঐ যে এক ব্যক্তিকে দেখেছেন লোহার সাঁড়াশী দিয়ে আরেক ব্যক্তির গাল চিরাচ্ছে, সে মিথ্যাবাদী, মিথ্যা বলতো। তার মিথ্যা রটনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত। সুতরাং তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এরূপ আচরণ করা হবে, যা আপনি দেখলেন।
আর যাকে পাথর মেরে মাথা চুর্ণ-বিচূর্ণ করতে দেখেছেন, সে ঐ ব্যক্তি, যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু সে রাতে গাফিলের মত ঘুমাতো। আর কুরআন শরীফের আদেশ-নিষেধ পালন করত না। সুতরাং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার সাথে এরূপ ব্যবহার করা হবে যা আপনি দেখলেন।
আর আগুনের তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন তারা হলো যিনাখোর।
আর রক্তের নহরে যাকে দেখেছেন, সে হলো সুদখোর।
আর ঐ বৃদ্ধ যাকে বৃক্ষের গোড়ায় বসা দেখেছেন তিনি হলেন, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম।
আর উনার চারপাশের বালকরা মানুষের সন্তানাদি।
আর যে লোকটিকে অগ্নি প্রজ্বলিত করতে দেখেছেন তিনি হলেন দোযখের রক্ষক মালেক ফেরেশ্তা।
আর যে ঘরটিতে আপনি প্রথম প্রবেশ করেছেন তা হলো সাধারণ মু’মিনদের ঘর।
পরে যে ঘরে প্রবেশ করেছেন তা শহীদদের ঘর।
আর আমি হলাম হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম
আর ইনি হলেন হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম।
উপরোক্ত বর্ণনার মাধ্যমে আমরা মিথ্যাবাদী ব্যক্তি, কুরআন শরীফ শিক্ষা করার পর তার হক্ব আদায় না করার পরিণতি, সুদখোর, যিনাখোর ব্যক্তিদের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে অবগত হলাম।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে সত্য স্বপ্ন দেখার এবং সর্বপ্রকার পাপ কাজ অর্থাৎ হারাম কাজ হতে বিরত থাকার তাওফিক দান করেন এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণ দায়িম-ক্বায়িম থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি মুবারক নছীব করেন। আমীন।
-মুহম্মদ আবূ আব্দুল্লাহ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)