নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ বর্ণিত মওযূ হাদীছ ও তার খণ্ডনমূলক জবাব (২)
, ১০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০১ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০১ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
গরানীক্ব ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনা এবং মুসলমানদের সাথে মুশরিকদের সিজদাহ্ বিষয়ে মওযূ হাদীছ ও তার খণ্ডনমূলক জবাব:
‘ক্বিছ্ছাতুল গরানীক্ব’ কী?
‘ক্বিছ্ছাতুল গরানীক্ব বা গরানীক্বের ঘটনা’ হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ একটি বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন বর্ণনা। মিথ্যাবাদীরা বলে থাকে যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দেখলেন উনাকে উনার সম্প্রদায়ের লোকজন পরিত্যাগ করছে এবং তিনি তাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন উনার নিকট বিষয়টি কষ্টকর হয়ে পড়লো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমানের বিষয়ে দয়াপরবশ হয়ে মনে মনে আকাঙ্খা মুবারক করলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যাতে এমন কিছু নাযিল হয়, যা উনার মাঝে এবং উনার সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে কাছাকাছি হবে, নিকটবর্তী হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এমতাবস্থায় একদিন কুরাইশদের অনেক লোকের এক মজলিসে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি ইচ্ছা করছিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যেন উনার নিকট এমন কিছু না আসেন, যাতে কুরাইশরা উনার থেকে দূরে চলে যায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই আকাঙ্খা মুবারক উনার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ নাযিল করেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা পাঠ করতে করতে যখন এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ পর্যন্ত পৌঁছলেন-
اَفَرَاَيْتُمُ اللّٰتَ وَالْعُزّٰى وَمَنٰوةَ الثَّالِثَةَ الْاُخْرٰى
‘তোমরা কি লাত ও উয্যা সম্পর্কে লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না? এবং ৩য় অপর একটি মানাত সম্পর্কে কি লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না?’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯-২০)
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক উনার মাঝখানে উনার ন্যায় সুমধুর সূরে শয়তান মুশরিকদের মূর্তির প্রশংসামূলক কিছু বাক্য প্রবেশ করিয়ে দেয়। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
আবার কেউ কেউ বলে, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুস সালাম মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যবান মুবারক-এ) শয়তান নিক্ষেপ করলো,
تِلْكَ الْغَرَانِيْقُ الْعُلٰى وَاِنَّ شَفَاعَتَهُنَّ لَتُرْتَجٰى
‘এগুলো (এই মূর্তিগুলো) খুব সুন্দর, খুব ছূরত পাখির মতো এবং আশা করা যায় যে এগুলো অবশ্যই (মুশরিকদের জন্য) সুপারিশ করবে।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
শয়তান এই কুফরীমূলক বাক্য এমনভাবে প্রবেশ করিয়ে দেয় যে, উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং মুশরিকরা সবাই বুঝে যে, এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই বাক্য। কোনক্রমেই কেউ তা পার্থক্য করতে সক্ষম হয়নি। না‘ঊযুবিল্লাহ! কুরাইশরা এটা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়। না‘ঊযুবিল্লাহ!
অত:পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক করতে করতে পুরো সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক করেন এবং সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ উনার শেষে সম্মানিত সিজদাহ্ মুবারক করেন। তখন উনার সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারাও সিজদাহ্ করলেন এবং মুশরিকদের মধ্য থেকে যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ উনার মধ্যে ছিলো তারা সকলেই সিজদাহ্ করলো। ঐ সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং মুশরিকরা যারা ছিলো কেউই সিজদাহ্ করা থেকে বিরত থাকেনি। একমাত্র ওলীদ ইবনে মুগীরা এবং আবূ উহাইহাহ্ সাঈদ ইবনে আছ তারা দুইজন সিজদাহ্ করলো না। তারা যমীন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে সেটাতে সিজদাহ্ করলো। কারণ তারা দু’জনেই ছিলো অতিবৃদ্ধ, তাই তারা সিজদাহ্ করতে সক্ষম ছিলো না। কুরাইশরা বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের দেব-দেবীদের (প্রশংসামূলক) আলোচনা যা শুনেছে, সে জন্য খুশি প্রকাশ করে বলাবলি করছিলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দেব-দেবীদের (প্রশংসামূলক) সর্বোত্তম আলোচনা করেছেন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দুঃখ ভারাক্রান্ত হলেন, তখন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! একি করলেন আপনি? না‘ঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমি যা নিয়ে আসিনি, আপনি মানুষদের নিকট তা তিলাওয়াত মুবারক করেছেন। আর আপনি যা বলেছেন আমি তো আপনাকে তা বলিনি।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত চিন্তিত হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হলেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি وَمَآ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
কেউ কেউ আরো অনেক খারাপভাবে এই ঘটনা বর্ণনা করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উপরোক্ত বর্ণনাগুলোসহ অনুরূপ আরো যত বর্ণনা রয়েছে, প্রত্যেকটি বণর্নাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এ ধরণের কোন ঘটনাই সংঘটিত হয়নি। কখনও মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে সিজদাহ্ করেনি। শয়তান কখনও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক উনার সাথে তার কথা মিলায়নি। এরূপ চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরী ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। এগুলো সব বানানো কিচ্ছা-কাহিনী। এগুলো একটাও গ্রহণ করা যাবে না। এগুলো বিশ্বাস করা কাট্টা কুফরী হবে। বর্ণনাকারীরা ইসরাঈলী বর্ণনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এগুলো বর্ণনা করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এরূপ কুফরী আক্বীদাহ্ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন।” সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
নি¤েœ এই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন র্ণনাসমূহের দলীলভিত্তিক খ-নমূলক জবাব তুলে ধরা হলো-
দলীলভিত্তিক খ-নমূলক জবাব:
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আল্লামা হযরত ইমাম মুহম্মদ ইবনে আবী বকর ইবনে উমর ইবনে আবী বকর ইবনে মুহম্মদ আল মাখযূমী আল কুরাইশী বদরুদ্দীন আদ দামামীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৮২৭ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
(قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ) {اِذَا تَمَنّٰى اَلْقَى الشَّيْطٰنُ فِىْۤ اُمْنِيَّتِهٖ} [الحج ৫২] اِذَا حَدَّثَ اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِىْ حَدِيْثِهٖ فَيُبْطِلُ اللهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ وَيُحْكِمُ اللهُ اٰيَاتِهٖ) يَعْنِىْ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا تَلَا شَيْئًا مِّنَ الْاٰيَاتِ الْمُنَزَّلَةِ عَلَيْهِ مِنْ رَّبِّهٖ فَقَدْ يُوَقِّعُ الشَّيْطَانُ فِىْ مَسَامِعِ اَهْلِ الشِّرْكِ مَا يُوَافِقُ اٰرَاءَهُمُ الْبَاطِلَةَ فَيَتَوَهَّمُوْنَ اَنَّهٗ مِمَّا تَلَاهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُبَرَّاٌ عَنْ ذٰلِكَ وَمُنَزَّهٌ عَنْهُ لَا يَخْلِطُ حَقًّا بِبَاطِلٍ
অর্থ: “(আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনিاِذَا تَمَنّٰى اَلْقَى الشَّيْطٰنُ فِىْۤ اُمْنِيَّتِهٖ এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন, اِذَا حَدَّثَ اَلقَى الشَّيْطَانُ فِىْ حَدِيْثِهٖ فَيُبْطِلُ اللهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ وَيُحْكِمُ اٰيَاتِهٖ ‘যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বলেছিলেন, তখন শয়তান উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক উনার সঙ্গে নিজের কথা মিলিয়ে দেয়। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি শয়তানের সে মিলানো কথা মিটিয়ে দিয়ে উনার সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনাকে সুদৃঢ় করেন)। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে উনার উপর নাযিলকৃত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তিলাওয়াত মুবারক করেন, তখন শয়তান মুশরিক শ্রোতাদের মধ্যে তাদের বাতিল মতের কিছু কথা ঢুকিয়ে দেয়। তখন মুশরিকরা ধারণা করে যে, এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তিলাওয়াত মুবারক করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ সমস্ত বিষয় থেকে মুক্ত এবং পবিত্র। সুবহানাল্লাহ! শয়তান হক্বকে বাতিল দ্বারা বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে না।” (মাছাবীহুল জামি’ ৮/৩০৫)
‘তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী’ কিতাবের ২য় খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
قَالَ حَضْرَتْ اَلْحَافِظُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِى الْفَتْحِ وَعَلٰى تَأْوِيْلِ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ هٰذَا يُحْمَلُ مَا جَاءَ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَقَدْ اَخْرَجَهٗ حَضْرَتْ اِبْنُ اَبِىْ حَاتِمٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْرَتْ اَلطَّبَرِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْرَتْ اِبْنُ الْمُنْذِرِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مِنْ طُرُقٍ عَنْ حَضْرَتْ شُعْبَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ بِشْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْهُ قَالَ قَرَاَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ {وَالنَّجْمِ} فَلَمَّا بَلَغَ {اَفَرَاَيْتُمُ اللّٰتَ وَالْعُزّٰى وَمَنٰوةَ الثَّالِثَةَ الْاُخْرٰى} اَلْقَى الشَّيْطَانُ عَلٰى لِسَانِهٖ تِلْكَ الْغَرَانِيْقُ الْعُلٰى وَاِنَّ شَفَاعَتَهُنَّ لَتُرْتَجٰى فَقَالَ الْمُشْرِكُوْنَ مَا ذَكَرَ اٰلِهَتَنَا بِخَيْرٍ قَبْلَ الْيَوْمِ فَسَجَدَ وَسَجَدُوْا فَنَزَلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ
অর্থ: “হযরত হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘ফাতহুল বারী’ উনার মধ্যে বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ উনার ৫২ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার) ব্যাখ্যা (যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বলেন, তখন শয়তান উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক উনার সঙ্গে নিজের কথা মিলিয়ে দেয়। না‘ঊযুবিল্লাহ!) যেটা (বুখারী শরীফ-এ) এসেছে, সম্ভবত সেটা হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে এসেছে। আর এটা হযরত ইবনে আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা কতিপয় সূত্রে হযরত শু’বাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত আবূ বিশ্র রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে ‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ’ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তিলাওয়াত মুবারক করতে করতে যখন এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ পর্যন্ত পৌঁছলেন-
اَفَرَاَيْتُمُ اللّٰتَ وَالْعُزّٰى وَمَنٰوةَ الثَّالِثَةَ الْاُخْرٰى
‘তোমরা কি লাত ও উয্যা সম্পর্কে লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না? এবং ৩য় অপর একটি মানাত সম্পর্কে কি লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না?’ তখন শয়তান উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুস সালাম মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যবান মুবারক-এ) নিক্ষেপ করলো,
تِلْكَ الْغَرَانِيْقُ الْعُلٰى وَاِنَّ شَفَاعَتَهُنَّ لَتُرْتَجٰى
‘এগুলো (এই মূর্তিগুলো) খুব সুন্দর, খুব ছূরত পাখির মতো এবং আশা করা যায় যে, এগুলো অবশ্যই (মুশরিকদের জন্য) সুপারিশ করবে।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন মুশরিকররা বললো- ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আজকের পূর্বে কখনো আমাদের দেব-দেবীদের সম্পর্কে উত্তম কিছু আলোচনা করেন নি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সিজদাহ্ মুবারক করলেন এবং তারাও সিজদাহ্ করলো। তখন এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হন।” (তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী ২/১১২)
আর ‘গ¦রানীক্বের ঘটনা’ সম্পর্কে হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
اَمَّا اَهْلُ التَّحْقِيْقِ فَقَدْ قَالُوْا هٰذِهِ الرِّوَايَةُ بَاطِلَةٌ مَوْضُوْعَةٌ وَاحْتَجُّوْا عَلَيْهِ بِالْقُرْاٰنِ وَالسُّنَّةِ وَالْمَعْقُوْلِ
অর্থ: “মুহাক্কিকগণ উনারা বলেছেন যে, এই সকল বর্ণনাগুলো বাতিল, মওযূ এবং উনারা তা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ এবং আক্বলী দলীল দ্বারা খ-ন করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর ২৩/২৩৭)
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসছে। ইনশাআল্লাহ!
এছাড়া বুখারী শরীফের আলোচ্য হাদীছটি ‘মুয়াল্লাক্ব’। (উমদাতুল ক্বারী) ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এটার কোনো সনদ উল্লেখ করেন নি। হাফিযুল হাদীছ হযরত ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَصَلَهٗ حَضْرَتْ اَلطَّبَرِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مِنْ طَرِيْقِ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ اَبِىْ طَلْحَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ مُقَطَّعًا
অর্থ: “এই বর্ণনাটি হযরত ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট হযরত আলী ইবনে আবী ত্বলহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বিচ্ছিন্ন সনদে পৌঁছেছে।” (ফাতহুল বারী ৮/৪৩৮)
(পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন)
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বলার সময় নূর মুবারক বিচ্ছুরিত হওয়া
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত ত্বীব মুবারক থেকে নূর মুবারক সৃষ্টি হওয়া
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বুলন্দী শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক ক্বায়িম হওয়ার অর্থই হলো দুনিয়ার যমীন ইনছাফ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মুজাসসাম মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুর রহমত মুবারক উনার নূরের আলোতে পুরো পবিত্র হুজরা শরীফ আলোকিত হওয়া
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বর্তমান সময়টা হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলেন না (৫)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত যায়িদ বিন হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বেমেছাল মুহব্বত মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুধ ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত মাসরূহ্ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলেন না (৪)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলেন না (৩)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)