বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
বিলাদত শরীফ: ২২ হিজরী। বিছাল শরীফ: ১১০ হিজরী। বয়স মুবারক: ৮৮ বছর।
, ২০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন ঘটনা:
হযরত ইমাম আবু উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন এক গুনাহ্র কারণে সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ ভুলে গিয়ে তীব্র যন্ত্রণা বোধ করে অস্থির হয়ে পাগলের মত হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উপস্থিত হয়ে নিজের অবস্থা জানালেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, এখন হজ্জের সময়, কি করব? আচ্ছা যান, হানিফ নামক মসজিদে দুই বুযূর্গ ব্যক্তির সাক্ষাত পাবেন। সুযোগমত উনাদের কাছে মনের কথা বলবেন এবং আপনার নিজের জন্য দোআ করতে অনুরোধ করবেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপদেশ মত হযরত ইমাম আবু উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেখানে গিয়ে মসজিদের এক কোণে বসে রইলেন। সেখানে তিনি প্রথমে এক বুযূর্গকে চারিপার্শ্বে লোক পরিবেষ্টিত অবস্থায় দেখলেন। কিছুক্ষণ পর সাদা পোশাক পরা এক বয়োজ্যোষ্ঠ মহান ব্যক্তিও সেখানে আসলেন। উপস্থিত লোকজন উনাদের কাছে গিয়ে সালাম ও আলাপ-আলোচনা করলেন। সেই বয়োজ্যোষ্ঠ ব্যক্তি তিনি সবাইকে নিয়ে আছরের নামায পড়ে চলে গেলেন। কেবল প্রথমোক্ত ব্যক্তি একাকী বসে রইলেন। এই সুযোগে হযরত আবু উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই প্রথমোক্ত বুযূর্গ ব্যক্তি উনার কাছে গিয়ে সালাম করে উনার মনের কথা ব্যক্ত করলে তিনি খুব দুঃখিত হয়ে ও আকাশের দিকে তাকিয়ে দোআ করতে লাগলেন। হযরত আবু উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বুযূর্গ ব্যক্তি আকাশের দিক থেকে মাটির দিকে মুখ করার পূর্বেই আমার সমস্ত কুরআন শরীফ মুখস্থ ফিরে পেলাম। আমি আনন্দে ও আবেগে উনার পায়ে লুটিয়ে পড়লে তিনি বললেন, আচ্ছা, আমার সন্ধান ও পরিচয় আপনি কিভাবে পেয়েছেন? আমি বললাম, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট। তিনি বললেন, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমার গোপন ভেদ জাহির করেছেন, আমিও উনার গোপন ভেদ জাহির না করে ছাড়ব না। তারপর তিনি বললেন, ইতিপূর্বে যে সাদা পোশাক পরা বৃদ্ধ ব্যক্তি এখানে এসে সবার আগে বিদায় হলেন, উনাকে আপনি চিনতে পেরেছেন কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনিই হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রতিদিন শেষ বেলা সুদূর বছরা থেকে এখানে এসে আমার সাথে কথাবার্তা বলে চলে যান ও বছরায় আছরের নামায পড়েন। তিনি আরো বললেন, যে ব্যক্তির জন্য হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যায় ইমাম বিদ্যমান, তিনি কেন আমার কাছে দোআপ্রার্থী হন বুঝলাম না। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে, শামাউন নামে উনার একজন অগ্নিপূজক প্রতিবেশী ছিল। তাকে রোগাক্রান্ত ও মৃত্যুশয্যায় শায়িত দেখে কেউ হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খবর দিল যে, শামাউনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ কথা শুনে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাড়াতাড়ি তার কাছে গিয়ে দেখলেন আগুনের কালো ধোঁয়ার মত তার শরীর কালো হয়ে গিয়েছে। তখন তিনি বললেন, শামাউন! সারা জীবন আগুন ও ধোঁয়ার মধ্যে কাটিয়েছো। এখন মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো ও দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করো। তাহলে উনার অফুরন্ত রহমত মুবারক তোমার উপর বর্ষিত হবে। শামাউন বলল, দু‘টি কারণ আমাকে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত রেখেছে। প্রথমত: আপনারা (মুসলমানগণ) দিবারাত্রি দুনিয়ার কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন। দ্বিতীয়ত: আপনারা মুখে বলেন মৃত্যু অনিবার্য অথচ এমন কাজ করে থাকেন যেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের উপর অসন্তুষ্ট হন। তিনি বললেন, তুমি যা বললে তা বন্ধুর পরিচায়ক বটে। কোন কোন মুসলমান তেমন করছে সত্য, কিন্তু তুমি কি করছ? মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে উনার সৃষ্টবস্তু অগ্নি উপাসনায় লিপ্ত হয়ে তুমি কেন নিজের অমূল্য জীবন বিনষ্ট করছ? কেন তুমি সত্তর বছর যাবত অগ্নিকে উপাস্য জ্ঞানে পূজা করছ? আমি কখনও অগ্নিপূজা করিনি, আমার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা করলে অগ্নির দাহিকা শক্তি এমনভাবে লোপ করে দিতে পারেন যে, তা আমার একটি পশমও স্পর্শ করবে না। আচ্ছা, চল আমরা উভয়ে স্ব স্ব হস্তদ্বয় আগুনে দিয়ে পরীক্ষা করি। তাহলে তোমার মিথ্যা প্রভূ অগ্নির দুর্বলতা ও আমার সত্য ইলাহ মহান আল্লাহ পাক উনার শক্তি প্রমাণিত হবে। এই বলে তিনি জ্বলন্ত অগ্নির মধ্যে নিজের হাত কিছুক্ষণ রেখে দিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় একটি পশমও দগ্ধ হল না। উনার চোখে-মুখে কষ্টের সামান্য চিহ্নও দেখা গেল না। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)