প্রসঙ্গ: পবিত্র কুরবানীর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দিক; পশু কুরবানী যেভাবে দেশের সামষ্টিক উন্নয়নে নীরব ভূমিকা পালন করে
, ০৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১১ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আপনাদের মতামত
কয়েকদিন পরেই পবিত্র কুরবানীর ঈদ। পশু কুরবানী হচ্ছে এই ঈদের সবচেয়ে বড় ইবাদত, চন্দ্র বছরের ৩৫৪/৫৫ দিনের কাঙ্খিত পবিত্রতম উৎসব এবং উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জন। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু প্রতিবছর কুরবানীর ঈদ ঘনিয়ে আসলেই অনলাইন-অফলাইনে সমাজচ্যুত একটা মহল সংবাদ সম্মেলন ও সভা সেমিনারে প্রচার করে বেড়ায় যে- পশু কুরবানী না করে এর অর্থ গরিব-দুখীদের মাঝে বিলিয়ে দিলে জনসেবামূলক কাজ হত ইত্যাদি ইত্যাদি। নাউযুবিল্লাহ!
তাদের দিলের অপ্রকাশিত কুরবানীবিদ্বেষ-ই এসব অপপ্রচারের অন্যতম কারণ। যারা এসব প্রচারণা চালায় ভিতরে ভিতরে এরা মুশরিকবাদী। কারণ গরু কুরবানী করলে মুশরিকদের জ্বলে। তাই এসব অপপ্রচার। তাছাড়া এসব বচন প্রতারণামূলক এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নবিরোধী।
পশু কুরবানী করা, দেখা, গোস্ত বণ্টন করে তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজেদের জন্য, আরেক ভাগ আত্মীয় স্বজনদের জন্য, অন্য ভাগ গরিব দুখিদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয় পবিত্র কুরবানীর ঈদে। পাশাপাশি জবাইকৃত পশুর চামড়া বিক্রির টাকাটাও ইয়াতীম মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয়। কত চমৎকার একটি দৃশ্যায়ন এবং বণ্টন! সুবহানাল্লাহ!
দেশের কৃষকশ্রেণী বছর ধরে অপেক্ষমান থাকেন কবে কুরবানী ঈদ আসবে। কবে তাদের পালিত পশু বিক্রি করবেন। কৃষকরা গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি বিক্রী করে স্বাবলম্বী ও লাভবান হতে পারছেন সম্মানিত এই একটা অনুষঙ্গকে কেন্দ্র করেই। সুবহানাল্লাহ! সমাজের যে সকল নিম্নবিত্তরা টাকার অভাবে গরুর গোস্ত কিনে খেতে পারেন না, কুরবানীর ঈদ তাদের জন্যও একটা সুবর্ণ
সুযোগ করে দেয় কাঙ্খিত গোস্ত খাওয়ার। সুবহানাল্লাহ!
ঈদুল আদ্বহায় পশু কুরবানী দেয়া হয় বলেই সহায়সম্বলহীনরা তৃপ্তিসহ কাঙ্খিত গরুর গোস্ত খেতে পারছে, চামড়া বিক্রির টাকা পাচ্ছে। এতে পশু কুরবানীর অনুষঙ্গটি না থাকলে তাদের কী অবস্থা হত বুঝুন।
পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় গরিবদের অর্থ-বিত্তশীল ধনীরা চুষে নিচ্ছে ও খাচ্ছে। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অক্সফামের প্রতিবেদনের মতে- “পৃথিবীর ১ শতাংশ ধনী মানুষের সম্পদের পরিমাণ এখন বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের সম্মিলিত সম্পদের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে বিশ্বের প্রায় ৩৫০ কোটি দরিদ্র মানুষের কাছে যে সম্পদ রয়েছে তার চেয়েও বেশি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬২ জন ধনীর হাতে।“ পুঁজিবাদী করপোরেটরা কীভাবে গরিবদের শোষণ করছে এই প্রতিবেদন তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
বিশ্বব্যাপী পবিত্র কুরবানীর মাধ্যমে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার পশুর গোস্ত ও চামড়া বিক্রির টাকা গরিব, অসহায়, ইয়াতীম-মিসকিন ও নিম্নবিত্তরা পাচ্ছে। সুতরাং বলাই যায়, পুঁজিবাদী বিশ্বের চলমান ধনী-গরিবদের মধ্যকার বৈষম্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে পশু কুরবানী। সুবহানাল্লাহ!
এসব ইয়াতিম মিসকিন ও সহায়সম্বলহীনরা যাতে পশু কুরবানীর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় এবং গরিবরা যাতে পুঁজিবাদীদের শোষণ থেকে বের হতে না পারে সে কারণে জেনে শুনেই উক্ত মহলটি কুরবানীর মত একটি প্রতিষ্ঠিত জনহিতৈসী ও জনবান্ধব সম্মানিত ইবাদতটির বিরোধীতা করছে। নাউযুবিল্লাহ! কারণ পবিত্র কুরবানীর চেতনা তাদের পুঁজি জমানো ও গরিব শোষণের বিরুদ্ধে।
কুরবানী এমন একটি নিয়ামতপ্রাপ্ত ইবাদত যে উনার দ্বারা গরিবরা তো বটেই বরং রাষ্ট্র নিজেই লাভবান হয়ে থাকে। চামড়া বিক্রির অর্থ পুরোটাই গরিবদের হক্ব। আবার এই চামড়ার মাধ্যমে চাঙ্গা হচ্ছে দেশের ট্যানারি শিল্প। কুরবানীর চামড়াগুলো বিদেশে রপ্তানী করে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে দেশ। অর্থাৎ একটা মাত্র কুরবানী ঈদ কত দিক দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ নিয়ে আসছে, সেটা আমরা হিসেব না মিলালে বুঝতে পারব না।
দেশে এ বছর কুরবানীযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়)। প্রকৃতপক্ষে এ হিসেব সঠিক নয় বরং প্রায় সোয়া ২ কোটি। দুই বছর পূর্বে কুরবানীযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭টি। এটা সঠিক নয়! একটি মানববন্ধনে তখন পরিবেশ বাদী সংগঠনগুলো বলেছিল,... প্রতিবছর এসব পশুর হাটের গোবর, গো-খাদ্যের উচ্ছিষ্টসহ এ পরিমাণ জবাইকৃত পশুর বর্জ্য-রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, গোবর, হাড়, খুর, শিং ইত্যাদির সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে শুধু জৈব সার তৈরি হবে প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার টন। প্রতি কেজি সারের মূল্য ৫০ টাকা হিসেবে মোট মূল্য দাঁড়াবে ২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এ ছাড়াও কুরবানীসহ সারা বছরের জবাইকৃত গরুর হাড়ের মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।
এটা মাত্র পশুর উচ্ছিষ্ট ও নারীভূড়ির হিসেব, অর্থাৎ যেগুলো উচ্ছিষ্ট মনে করে ফেলে দেয়া হয় সেটার মূল্য। তাহলে পশু, পশুর চামড়া ও এর বাজারমুল্য কত হবে এবং এর দ্বারা দেশের কত লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান ও আয় হচ্ছে। সুবহানাল্লাহ!
এক কথায় বলা যায় পবিত্র কুরবানী ঈদ>প্রান্তিক কৃষকদের ব্যবসা>পশু কুরবানী >গোস্ত বণ্টন ও আহার>কুরবানীর পশুর চামড়া ও এর অর্থ>গরীব জনগোষ্ঠীর অর্থপ্রাপ্তি >ট্যানারি শিল্প চাঙ্গা >বিদেশে চামড়া রপ্তানী>রপ্তানি আয় বৃদ্ধি>দশ ও দেশের সামষ্টিক উন্নয়ন। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়া কুরবানীর পশুর রক্তসহ প্রত্যেকটা উচ্ছিষ্টই পরিবেশের জন্য উপকারি এবং প্রাণরসস্বরূপ। সুবহানাল্লাহ! সূতরাং পশু কুরবানীর বিরোধিতা মানে প্রকৃতপক্ষে সহায়সম্বলহীনদের শোষণে মদদ দেয়া, সামাজিক বৈষম্যকে জিইয়ে রাখা এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নের বিরোধিতা। সূতরাং বেশি বেশি কুরবানী করে শোষণমূলক পুঁজিবাদী চেতনাকে ভেঙ্গে দিতে হবে।
-মুহম্মদ জিয়াউল হক, ঢাবি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
এ সকল মুখোশধারীদের আসল পরিচয় অনেকেরই অজানা!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১০ ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া একটি ভয়াবহ চক্রান্ত
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তাহলেই রাজধানী হবে সমস্যামুক্ত
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুলুমতন্ত্র থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করুন
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতিদের যেভাবে উস্কানি দিচ্ছে এনজিওগুলো
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাও একসময় মুসলমান ছিলো
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাবার খাবেন কোথায়?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের রক্তাক্ত ইতিহাস, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জায়নবাদী ইহুদী পরিকল্পনার গোপন দস্তাবেজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মীরা কখনোই চায়নি, এখনও চায় না মুসলমানদের উন্নতি
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ স্টাইলের শাসকগোষ্ঠী দিয়ে উন্নয়ন নয়, লুটপাটই হবে
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)